ব্যাঙ্কক এশিয়ান গেমসের সোনা জয়ী ডিঙ্কো সিংহ।
এশিয়ান গেমস থেকে দেশকে এনে দিয়েছেন সোনা। পেয়েছেন পদ্মশ্রী সম্মানও। অথচ টাকার অভাবে রাজধানীর দুই নামী হাসপাতালে ভর্তিই হতে পারলেন না প্রাক্তন তারকা বক্সার ডিঙ্কো সিংহ।
হেপাটাইটিসে ভোগা ভগ্ন শরীরে এই হাসপাতাল থেকে ওই হাসপাতাল ঘুরে বেড়ানোর পর অবশেষে এক শুভাকাঙ্ক্ষীর সাহায্যে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স-এর (এইমস) আউটডোরে মণিপুরী বক্সারের চিকিৎসা শুরু হয়েছে। তবে হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেননি ডিঙ্কো। থাকছেন এইমসের কাছেই একটি লজ-এ।
১৯৯৮ ব্যাঙ্কক এশিয়ান গেমসের সোনাজয়ীকে এই মুহূর্তে দেখলে চট করে চেনা মুশকিল। রোগের কারণে এক ধাক্কায় কুড়ি কেজি ওজন কমে যাওয়ায় অসম্ভব দুর্বল হয়ে পড়েছেন সাঁইত্রিশ বছরের ছেলে। নুয়ে পড়া শরীরটা নিয়ে অন্য কারও সাহায্য ছাড়া হাঁটতেই পারছেন না। অল্পেই হাঁফিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর ঠিক কোন ধরনের হেপাটাইটিস হয়েছে, সেটাও বলতে পারলেন না। শুধু বললেন, ‘‘ডাক্তাররা বলেছে আমার জন্ডিস হয়েছে। তার বেশি জানি না।’’ এ দিন বেলা দেড়টা নাগাদ এইমসের বাইরে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, ‘‘মণিপুর সাই থেকে আমাকে এখানে এইমসে পাঠাল। তবে গত পাঁচ দিন হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি এইমস থেকে গঙ্গারাম হাসপাতাল। ভর্তি হওয়ার জন্য যত টাকা দরকার তত টাকা আমার কাছে নেই। তাই দুই হাসপাতালই ফিরিয়ে দেয়।’’
ডিঙ্কো ইম্ফল সাই-এর সহকারী ডিরেক্টর। সাই থেকে চিকিৎসার জন্য তাঁকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই টাকা যথেষ্ট হচ্ছে না। তিনি কেন সাহায্যের জন্য দিল্লি সাই-এ যাননি জানতে চাইলে বক্সার বললেন, ‘‘আমার শরীরের যা অবস্থা তাতে ঘোরাঘুরি করতেই পারছি না।’’ মণিপুর থেকে ডিঙ্কোর সঙ্গে এখানে এসেছেন তাঁর ভায়রাভাই। তবে দু’জনের কেউই দিল্লিতে তেমন কাউকে চেনেন না। তাঁদের হয়ে তদ্বির করার মতোও কেউ নেই। ডিঙ্কো বলছিলেন, ‘‘ভেবেছিলাম এইমস সরকারি হাসপাতাল। পৌঁছে গেলে চিকিৎসার বন্দোবস্তটা হয়ে যাবে। আমি পদ্মশ্রী সেটাও জানাই। এত সমস্যা হবে ভাবিনি।’’ অসুস্থ ডিঙ্কো প্রথমে চিকিৎসার জন্য ভর্তি ছিলেন ইম্ফলের রিম্স হাসপাতালে। এ দিন বলছিলেন, ‘‘ওখানে ডাক্তাররা আমাকে সুস্থ করতে পারলেন না। শেষমেশ ওঁরাই আমাকে এইমসে পাঠানোর পরামর্শ দেন।’’
দিল্লি পৌঁছে এইমসেই গিয়েছিলেন প্রথমে। তবে সেখানে ভর্তি হতে পারেননি। পরে গঙ্গারাম হাসপাতালে গিয়ে পৌঁছলে চিকিৎসকেরা তাঁকে পরীক্ষা করে অবিলম্বে ভর্তি হয়ে যেতে বলেন। কিন্তু সেখানেও সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় টাকা। আবার ফিরে আসেন এইমসেই। অজুর্ন ও পদ্মশ্রী পুরস্কারে সম্মানিত প্রাক্তন তারকা ক্রীড়াবিদের এই শোচনীয় অবস্থা দেখে অনেকেই অবাক হয়ে যাচ্ছেন এখানে। এই অবস্থায় আজ হরজিন্দর সিংহ নামে এক ভদ্রলোক এগিয়ে এসে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে তাঁকে নিয়ে যান এইমসে কর্মরত এক মণিপুরী ডাক্তারের কাছে। ওই চিকিৎসক ডিঙ্কোর সঙ্গে কথা বলার পর এ দিন থেকে হাসপাতালের বহির্বিভাগে সোনাজয়ীর চিকিৎসা শুরু হয়েছে। তবে ডিঙ্কো জানালেন, তাঁকে যে সব পরীক্ষানিরীক্ষা করাতে বলা হয়েছে, সেগুলো বাইরে থেকেই করিয়ে আনতে হয়েছে। তবু শেষ পর্যন্ত চিকিৎসা শুরু হওয়ায় একটু মানসিক স্বস্তি এসেছে।
২০১৩-য় ডিঙ্কো সিংহ ভারতীয় নৌবাহিনীর চাকরি ছেড়ে ইম্ফলের সাই সেন্টারে সহকারী ডিরেক্টর হিসাবে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁর পদ্মশ্রী পাওয়াও সেই বছরেই। সেই সুবাদে দিল্লির সাই সেন্টারের হোস্টেলে তিনি থাকতে পারতেন। কিন্তু ডিঙ্কো বললেন, ‘‘এইমস থেকে সাই-এর হোস্টেল অনেকটা দূর। তাই ওখানে থাকার কথা ভেবেও থাকতে পারছি না। এই অসুস্থ শরীরে এতটা যাতায়াতের ধকল নিতে পারছি না।’’
আপাতত তাই এইমসের কাছেই একটি ভাড়ার লজই ঠিকানা তাঁর। তবে টাকা বিশেষ না থাকায় দিল্লিতে কত দিন চিকিৎসা চালাতে পারবেন জানেন না। টাকা ফুরিয়ে গেলে কী করবেন জানতে চাইলে বললেন, ‘‘দেখি কী করি। সম্ভবত মণিপুর ফিরে গিয়ে টাকা নিয়ে আবার এসে বাকি চিকিৎসা করাতে হবে।’’