লক্ষ্য রিও। তৈরি হচ্ছেন গগন।
ভারতীয় খেলাধুলোর জন্য সুখবর। রিও অলিম্পিকের ঠিক আট মাস আগে নিজের সেরা ফর্মে ফিরলেন লন্ডন অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ পদকজয়ী শ্যুটার গগন নারঙ্গ।
৫০ মিটার রাইফেল প্রোন-এ এশিয়ার এক নম্বর গগন। দীর্ঘ দিন ঘাড়ের চোটে ভুগে ওঠার পর আমেরিকার ফোর্ট বেনিংয়ে আইএসএসএফ ৫০ মিটার রাইফেল প্রোনে ব্রোঞ্জ জিতে রিওর ছাড়পত্র যোগাড় করেছেন তিনি।
ঘাড়ের চোটেই মরসুমের শুরুতে প্রথম তিনটে শ্যুটিং বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে নিজের প্রিয় ইভেন্ট ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের ভারতীয় দলে গগনের জায়গা হয়নি। যে ইভেন্টে তিনি তিন বছর আগে অলিম্পিক পদক পেয়েছিলেন। রিওতে কি শুধু ৫০ মিটার রাইফেল প্রোনেই দেখা যাবে গগনকে? ফোনে প্রশ্ন শুনে দেশের অন্যতম তারকা শ্যুটার বললেন, “১০ মিটার এয়ার রাইফেল ইভেন্টই আমার রুজি-রুটি। তাতে আবার নিজের সেরা ফর্মে ফেরার সব রকম চেষ্টা করছি। ভাল রেজাল্টের জন্য কিছু টেকনিক্যাল পরিবর্তনও করেছি নিজের ফায়ারিংয়ে। এখন বিভিন্ন টুর্নামেন্টে সেগুলোর পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখছি। প্রোন আর থ্রি পজিসন আমার আসলে অপশনাল ইভেন্ট। তা সত্ত্বেও গত কয়েক বছরে ওই দু’টো ইভেন্টেও অনেক আন্তর্জাতিক পদক জিতেছি। যে জন্য পরের বছর অলিম্পিকে আমি একটাই নয়, একাধিক পদক জেতার আশায় আছি।”
ছেলের শ্যুটিং-স্বপ্নকে সত্যি করতে গগনের বাবাকে তাঁদের হায়দরাবাদের জমি পর্যন্ত বিক্রি করে দিতে হয়েছিল এক সময়! “আমি টিপিক্যাল মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে। আমার প্রথম বন্দুক কিনে দিতে বাবাকে বাধ্য হয়ে জমি বিক্রি করতে হয়েছিল। শ্যুটিং যথেষ্ট খরচসাপেক্ষ স্পোর্ট। আমাকে শ্যুটার করে তুলতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে আমার পরিবারকে। পরে আমার নাম়়ডাক হতে অবশ্য কিছু স্পনসর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।”
অলিম্পিকে পুরো ফর্মে নামতে এখন থেকেই দু’বেলা কঠোর পরিশ্রম করছেন গগন। বলছিলেন “অলিম্পিকে পদক জেতার স্বপ্ন সব সময় প্রত্যেক প্লেয়ারেরই থাকে। এক বার পদক পেলেও তাই রিওতেও আমার পদক জেতার একই রকম স্বপ্ন আছে। আমার মতে অলিম্পিকের মত সর্বোচ্চ মঞ্চে পদক জিততে পাঁচটা জিনিসের প্রচণ্ড দরকার। টানা কঠিন পরিশ্রম। ঠান্ডা মাথা। চূড়ান্ত ফিটনেস। সারাক্ষণ নার্ভ ধরে রাখা। আর একটু ভাগ্যও। রিওতে ইভেন্টের দিন আমি প্রথম চারটে ফ্যাক্টরকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার সব রকম চেষ্টা করব। কিন্তু পাঁচ নম্বরটা আমার হাতে নেই। তবে সুশীল কুমারের মত আমিও পর পর দুটো অলিম্পিকে পদক জিততে চাই।”
এই মুহূর্তে ৫০ মিটার রাইফেল প্রোনে আপনি এশিয়ার সেরা শ্যুটার। তবে কি রিওতে আপনার পদকের রং পাল্টাবে? লন্ডনের ব্রোঞ্জ কি রুপো বা সোনা হবে? জবাবে গগন বললেন “র্যাঙ্কিং শ্যুটারের টাটকা ফর্মের প্রতিফলন ঠিকই। কিন্তু শ্যুটিং আবার এমন একটা খেলা যেখানে খেলোয়াড়ের ভাল-খারাপ প্রায় পুরোটা নির্ভর করে তার সেই দিনটার উপর। সেই দিন সে যেমন নার্ভ ধরে রেখে ফায়ার করবে, তেমনই রেজাল্ট পাবে। তবে আশা করব, সেই প্রয়োজনীয় নার্ভ রিওতে আমি ধরে রাখতে পারব। এ ছাড়াও আমার বিশ্বাস, পরের অলিম্পিকে শ্যুটিংয়ে ভারতের পদক আরও বাড়বে।”
গগন ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন, “আথেন্সে রাজ্যবর্ধন, বেজিংয়ে অভিনব, লন্ডনে বিজয় আর আমি পদক জেতার পর আমাদের দেশে শ্যুটিংয়ে আগ্রহ অনেক বেড়েছে। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ফলাফলও আগের চেয়ে অনেক ভাল হচ্ছে। রিওতেও নিশ্চয়ই সেটা হবে। লন্ডন অলিম্পিকের পর থেকেই জিতু আর অপূর্বি চান্ডেলা দারুণ উন্নতি করেছে। ওদের অলিম্পিক পদক জেতার সুযোগ রয়েছে।”
তা ছাড়া ভারতে শ্যুটিংয়ের পরিবেশের উন্নতির কারণ গগনের কথায়, “আগে এখানে শ্যুটিংয়ের জন্য ভাল মানের বন্দুক, যন্ত্রপাতি সব বিদেশ থেকে আনাতে হত। অনেক সময় লেগে যেত। কিন্তু এখন সে সব সমস্যা নেই। খেলাটার প্রতি আগ্রহও অনেক বেড়েছে। তবে শ্যুটিংকে আমাদের দেশে আরও জনপ্রিয় করতে হলে ক্রিকেট, প্রো হকি, প্রো কবাডির মতোই টিভিতে আরও বেশি করে সরাসরি দেখাতে হবে।”