মনের জোরেই লক্ষ্যভেদ প্রিয়ঙ্কা

এগরার পানিপারুল মুক্তেশ্বর হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী প্রিয়ঙ্কা। কাঁথি ৪৬ বেঙ্গল ব্যাটালিয়নের পরিচালনায় স্কুলে এনসিসি করত সে। সেখানেই তার রাইফেল শুটিংয়ে দক্ষতা নজরে আসে এনসিসি আধিকারিকদের।

Advertisement

সৌমেশ্বর মণ্ডল ও শান্তনু বেরা

মেদিনীপুর ও কাঁথি শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৪৪
Share:

লক্ষ্য: অনুশীলনে ব্যস্ত প্রিয়ঙ্কা জানা। —নিজস্ব চিত্র।

ফুটপাথে চা-ঘুগনি দোকান চালান বাবা। কিন্তু তাতে কী হয়েছে? মনের জোর আর প্রতিভায় ভর করেই এগিয়ে চলেছেন পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার প্রত্যন্ত পানিপারুলের রাইফেল শুটার প্রিয়ঙ্কা জানা।

Advertisement

১১ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত কেরলের তিরুঅন্তপুরমে চলছে জাতীয়স্তরের রাইফেল শুটিং প্রতিযোগিতা ‘৬১তম ন্যাশনাল শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপ ২০১৭’। ১৩ ডিসেম্বর ‘প্রোন’ প্রতিযোগিতায় ৬০ রাউন্ড ফায়ারিং করে ৬০০ পয়েন্টের মধ্যে ৫৯৭ পেয়ে ১৫তম স্থান দখল করেছে প্রিয়ঙ্কা। ৫ হাজার জনের মধ্যে থেকে তৈরি হয়েছে প্রথম ৩০ জনের তালিকা। আগামী মে মাসে তাঁরা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ার বাছাই শিবিরে যোগ দেবেন। ১৫ ডিসেম্বর ‘থ্রি পজিশন’ (প্রোন, নি ও স্ট্যান্ডিং পজিশন) প্রতিযোগিতা হয়। ৬০ রাউন্ড ফায়ার করে ৬০০ পয়েন্টের মধ্যে ৫৩৫ পেয়ে ২০তম স্থান দখল করেছে। প্রতিযোগিতায় রাজ্যের মধ্যে প্রথম হয়েছে প্রিয়ঙ্কা।

এগরার পানিপারুল মুক্তেশ্বর হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী প্রিয়ঙ্কা। কাঁথি ৪৬ বেঙ্গল ব্যাটালিয়নের পরিচালনায় স্কুলে এনসিসি করত সে। সেখানেই তার রাইফেল শুটিংয়ে দক্ষতা নজরে আসে এনসিসি আধিকারিকদের। ছাত্রীকে কিছুটা জোর করেই আসানসোলে প্রশিক্ষণ নিতে পাঠান শিক্ষকেরা। এনসিসি-র ৪৬ বেঙ্গল ব্যাটেলিয়ানের কম্যান্ডিং অফিসার কর্নেল আবীর ঘোষ বলেন, “জাতীয় শুটিং প্রতিযোগিতায় খুব ভাল ফল করেছে প্রিয়ঙ্কা জানা। এর ফলে আন্তর্জাতিকস্তরের প্রতিযোগিতায় যাওয়ার সিলেকশন ক্যাম্পে যোগ দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করল সে।” দু’বছর আসানসোল রাইফেল ক্লাবে অনুশীলন করেছে প্রিয়ঙ্কা। অর্থ সাহায্য পেয়েছে এনসিসি-র পক্ষ থেকে। গত বছর রাজ্যে মেয়েদের মধ্যে শুটিংয়ে সেরা হওয়ায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজভবনে তাঁর হাতে ‘গভর্নর মেডেল’ তুলে দেন রাজ্যপাল কেশরিনাথ ত্রিপাঠী।

Advertisement

তবে তার লড়াইয়ের পথ সহজ ছিল না। অভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলাও চালিয়ে গিয়েছে সে। প্রিয়ঙ্কার বাবা শম্ভু জানার কথায়, “কখনও কখনও মেয়ের খরচ বহন করতে সমস্যায় পড়েছি। তবে আগামী দিনে মেয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারবে, এই আশা থেকে কঠোর পরিশ্রম করেছি। স্বপ্ন সফল হতে দেখে ভাল লাগছে।” প্রিয়ঙ্কার স্কুলের প্রধান শিক্ষক তরুণ মাইতি বলেন, “খুব গর্বের কথা। স্কুলের ছাত্রীর সাফল্যে আমরা উচ্ছ্বসিত।” তিরুঅন্তপুরম থেকে ফোনে প্রিয়ঙ্কা বলে, “গত বছর এই প্রতিযোগিতা হয়েছিল মহারাষ্ট্রের পুণেতে। সে বারে দেশের মধ্যে ২০ নম্বর স্থান অর্জন করেছিলাম। এ বার ফল আরও ভাল হওয়ায় ভাল লাগছে।” প্রিয়ঙ্কা আরও জানান, সিলেকশন ক্যাম্পে ভাল ফল করে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ার চেষ্টা করবেন তিনি।

বড়দিন ও নতুন ইংরেজি বছরের আগে ঘরের মেয়ের এমন সাফল্যে রীতিমতো খুশির হাওয়া এগরা জুড়ে। খুশি প্রিয়ঙ্কার সহপাঠীরাও। তবে আপাতত অনুশীলনেই মন দিতে চায় প্রিয়ঙ্কা। অনেক পথ এগোতে হবে যে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement