প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার আগে ছিলেন সম্ভাব্য জয়ীর তালিকা থেকে বহু দূরে। কিন্তু ফরাসি ওপেন শেষ হওয়ার পরে সব হিসেব ওলটপালট করে দিলেন ইগা শিয়নটেক। ক্লে কোর্ট তো বটেই, টেনিসের ইতিহাসেই নতুন অধ্যায় লিখলেন ইগা শিয়নটেক।
পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশ’-এ শিয়নটেকের জন্ম ২০০১-এর ৩১ মে। তাঁর মা ডোরোটা পেশায় চিকিৎসক। তাঁর বাবা টমাস শিয়নটেক প্রতিষ্ঠিত রোয়ার। অংশ নিয়েছিলেন ১৯৮৮-এর সোল অলিম্পিকেও।
বাবার উৎসাহেই শিয়নটেক পা রাখেন খেলোয়াড় জীবনে। দলগত খেলার থেকে মেয়েকে সব সময় ব্যক্তিগত ইভেন্টে উৎসাহী করেন টমাস। প্রথমে সাঁতারের প্রশিক্ষণ নিতেন শিয়নটেক। কিন্তু জলের ভীতি কাটিয়ে উঠতে পারেননি। শেষে মেয়েকে টেনিস শেখাতে শুরু করেন টমাস।
টমাসের বড় মেয়ে আগাটাও টেনিস খেলতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু চোট আঘাতজনিত সমস্যায় তাঁর কেরিয়ার দীর্ঘ হয়নি। অন্য দিকে, ২০১৬ সাল থেকে আন্তর্জাতিক টেনিস প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে শুরু করেন ইগা শিয়নটেক।
কেরিয়ারে এর আগে সর্বোচ্চ পর্যায়ের কোনও টুর্নামেন্ট জিততে পারেননি শিয়নটেক। এর আগে গ্র্যান্ড স্ল্যামে চতুর্থ রাউন্ডও পেরোতে পারেননি তিনি। সেই শিয়নটেক ফরাসি ওপেনের ফাইনালে দাঁড়াতেই দিলেন না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সোফিয়া কেনিনকে। হারালেন ৬-৪, ৬-১ সেটে।
ফরাসি ওপেনের শুরুতে র্যাঙ্কিংয়ে ৫৪ নম্বরে ছিলেন তিনি। ১৯৭৫ সালে র্যাঙ্কিং সিস্টেম চালু হয়েছে। তার পরে রোলাঁ গারোতে এত পিছিয়ে থাকা কোনও খেলোয়াড় ফাইনালে নামেননি। পোল্যান্ডের প্রথম সিঙ্গল খেলোয়াড় হিসেবে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার নজির গড়লেন শিয়নটেক।
শিয়নটেকের জয় আরও তাৎপর্যপূর্ণ কারণ গোটা টুর্নামেন্টে তিনি একটি সেটও হারাননি। চতুর্থ টিনএজার হিসেবে কোনও সেট না হেরে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের মাইলফলক ছুঁলেন তিনি। ১৯৯২ সালে মনিকা সেলেসের পর শিয়নটেকই হলেন কনিষ্ঠতম ফরাসি ওপেন জয়ী। দুরন্ত জয়ের পিছনে তাঁর বাবার অবদান উল্লেখ করেছেন শিয়নটেক।
১৯৩৯ সালে জাদবিগা জেড্রোজস্কার পরে পোলান্ডের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ফরাসি ওপেনের ফাইনালে পৌঁছন শিয়নটেক। চলতি বছরের অস্ট্রেলীয় ওপেন জয়ী কেনিনকে হারিয়ে পোল্যান্ডের ক্রীড়া-ইতিহাসে নতুন অধ্যায় লেখা হল শিয়নটেকের র্যাকেটে।
১৯ বছরের শিয়নটেক মনেপ্রাণে আদ্যন্ত কিশোরী। ভালবাসেন ঘন ঘন মোবাইল ফোন পাল্টাতে। ফরাসি ওপেন জয়ের পথে তাঁর বড় চিন্তা ছিল, ওয়ারশ’-এর বাড়িতে বসে তাঁর পোষা বিড়াল ম্যাচ দেখছে তো?
উচ্ছলতার পাশাপাশি শিয়নটেকের কিছু সিদ্ধান্ত বেশ পরিণত। তিনি নিয়মিত মনোবিদের দ্বারস্থ হন। কারণ শিয়নটেক মনে করেন, আধুনিক টেনিসে মনের জোর সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক দিক থেকে স্থিতি না না থাকলে সাফল্য ধরে রাখা যাবে না, ধারণা শিয়নটেকের।
টেনিসের পাশাপাশি পড়াশোনা নিয়েও সিরিয়াস ইগা শিয়নটেক। পছন্দের বিষয় গণিত। জানিয়েছেন, গণিতের প্রতি ভালবাসা তাঁকে ভাল টেনিস খেলতেও সাহায্য করেছে।
একটি সেটেও না হেরে ফরাসি ওপেন জিতলেন শিয়নটেক। তাঁর আগে ২০০৭-এ এই রেকর্ড ছিল জাস্টিন এনার। তবে এনা পর পর তিন বছর রোলাঁ গারোতে বিজয়িনী হন। এই রেকর্ড এখনও অধরা।
তবে এখনও নিজের খেলার ধরন নিয়ে তৃপ্ত নন শিয়নটেক। জানালেন, আরও পরিণত হতে হবে তাঁকে। ধরে রাখতে হবে পারফরম্যান্স। নিয়মিত জয় পেয়ে টেনিস-মানচিত্রে নিজের জায়গা ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর এই নতুন তারা।
খেলার পাশাপাশি ভালবাসেন ঘুরে বেড়াতে। সেইসঙ্গে পছন্দ করেন গান শুনতে। সবথেকে প্রিয় হার্ডরক। মন ভাল রাখার পাশাপাশি যে কোনও কাজে মনোনিবেশ করতেও নতুন চ্যাম্পিয়নের ভরসা মিউজিক-ই।