সক্রিয়: নিজেই বল নিয়ে ছেলেদের দেখাচ্ছেন রবি ফাওলার। টুইটার
অনুশীলন এক বেলা। কিন্তু এসসি ইস্টবেঙ্গল কোচ রবি ফাওলার সর্বক্ষণই ব্যস্ত। ডার্বি যত এগিয়ে আসছে মাঠে ও মাঠের বাইরে ব্যস্ততা আরও বাড়ছে লিভারপুল কিংবদন্তির।
জা মাগোমা, জেজে লালপেখলুয়ারা প্রস্তুতি শেষ করে টিম হোটেলে ফিরে যখন বিশ্রাম নিচ্ছেন, ফাওলার তখন সহকারী কোচ অ্যান্টনি গ্র্যান্ট, ক্রীড়া বিজ্ঞানী জ্যাক ইনমান ও ভিডিয়ো বিশ্লেষক জোসেফ ওয়ালমসলির সঙ্গে আলোচনায় মগ্ন। অনুশীলনের প্রথম দিন থেকেই ফুটবলারদের সমস্ত কিছু রেকর্ড করে রাখা হচ্ছে। কে কতটা উন্নতি করছে? কার কোথায় সমস্যা হচ্ছে, তা প্রত্যেক দিন বিশ্লেষণ করেছেন তিনি। জামশেদপুর এফসি প্রস্তুতি ম্যাচ বাতিল করে দেওয়ায় শুক্রবার ফুটবলারদের দু’দলে ভাগ করে খেলিয়েছিলেন ফাওলার। তার পরে টিভিতে কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে এটিকে-মোহনবাগানের দুরন্ত জয় দেখেছেন। শনিবার যে-হেতু অনুশীলন ছিল এসসি ইস্টবেঙ্গলের, তাই সময় নষ্ট না করে আগের দিনের প্র্যাক্টিস ম্যাচে অ্যান্টনি পিলকিংটনদের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করতে বসে পড়েছিলেন।
লাল-হলুদ শিবিরে রয় কৃষ্ণের চেয়েও আন্তোনিয়ো লোপেস হাবাসের দলের রক্ষণকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তিরি, সন্দেশ জিঙ্ঘন, প্রীতম কোটাল, প্রণয় হালদারদের চক্রব্যূহ ভেঙে কী ভাবে মাগোমারা বেরোবেন, এই মুহূর্তে সেই রণকৌশল তৈরিতে ব্যস্ত ফাওলার। ফ্রি-কিকে গোল করার ব্যাপারেও জোর দিচ্ছেন তিনি। লাল-হলুদ শিবিরের পর্যবেক্ষণ, এটিকে-মোহনবাগানের গোলরক্ষক অরিন্দম ভট্টাচার্য-সহ দুই ডিফেন্ডার তিরি ও সন্দেশের উচ্চতা ছ’ফুটের উপরে। শুক্রবার কেরলের বিরুদ্ধে ম্যাচে দুই প্রান্ত থেকে উড়ে আসা সেন্টার সহজেই বিপন্মুক্ত করছিলেন তাঁরা। তাই ফ্রি-কিকে লক্ষ্যভেদ করতে চান লাল-হলুদ কোচ। পাশাপাশি, ফুটবলারদের ফাওলার সব সময়ই বলেন, বিপক্ষের পেনাল্টি বক্সের কাছাকাছি অঞ্চলে দ্রুত নিজেদের মধ্যে পাস খেলে এবং ক্রমাগত জায়গা বদল করে ডিফেন্ডারদের ধন্দে ফেলে দিতে হবে। লিভারপুলে খেলার সময় ইয়ান রাশের সঙ্গে জুটি বেঁধে ফাওলার নিজেও তা-ই করতেন।
শুধু রণকৌশল তৈরি নয়, ফাওলার ব্যস্ত পুরো দলকে এক সুতোয় গেঁথে ফেলতে। শুরুতেই বলে দিয়েছিলেন, তাঁর দলে সকলেই তারকা। লাল-হলুদ শিবিরে খোঁজ নিয়ে উঠে এল আরও চমকপ্রদ তথ্য। ফাওলার বলছেন, ২৭ নভেম্বরের ডার্বি শুধু ফুটবলার বা কোচিংয়ের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের নয়, টিম বাসের চালক থেকে কিট বয়— সকলেরই। শুধু তা-ই নয়, সপ্তাহে এক দিন অনুশীলনের পরে অভিনব দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করছেন তিনি। তাতে অংশ নিচ্ছেন সকলেই। টিম হোটেলের খেলাঘরে ফুটবলারদের সঙ্গে বাস চালক-সহ অন্যান্য কর্মীরাও টেবল টেনিস, ক্যারম, বিলিয়ার্ডস খেলছেন। ফাওলার মনে করেন, দলের সাফল্য শুধু ফুটবলার বা কোচেদের উপরেই নির্ভর করে না। দলের সঙ্গে যুক্ত সকলেরই অবদান থাকে।
লাল-হলুদ কোচের বন্ধু ও সহকারী অ্যান্টনি শুনিয়েছিলেন আকর্ষণীয় কাহিনি। লিভারপুলের সমর্থকেরা ঈশ্বর বলে ডাকেন ফাওলারকে। কারণ, কখনওই তারকা সুলভ মানসিকতা ছিল না তাঁর। সকলের সঙ্গে মিশতেন। ১৯৯৭ সালে লিভারপুল বন্দরে ছাঁটাই হওয়া আন্দোলনরত শ্রমিকদের পাশে থাকার বার্তা দেওয়া টি-শার্ট জার্সির নীচে পরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ব্রানের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিলেন ফাওলার। দ্বিতীয় গোল করার পরে জার্সি খুলে ফেলার জন্য উয়েফার শাস্তিও পেয়েছিলেন লিভারপুল কিংবদন্তি। অ্যান্টনি বলেন, ‘‘রবির অভিধানে আমি শব্দটাই নেই। ও শুধু বিশ্বাস করে আমরায়!’’
ডার্বি নিয়ে পরিকল্পনা: সরকারি সুরক্ষা বিধি মেনে ২৭ নভেম্বর ইস্টবেঙ্গল মাঠে আইএসএলের ডার্বি বড় পর্দায় দেখানোর প্রক্রিয়া শুরু লাল-হলুদ শিবিরে। শনিবার কার্যকরী কমিটির বৈঠেকে এ ছাড়াও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, লাল-হলুদের সদস্য বা সমর্থকেরা পরিবারের নবজাতক শিশুর নাম সদস্য পদের জন্য নথিভুক্ত করাতে পারবেন। ২০১৬ থেকে ’১৯ পর্যন্ত যাঁরা সদস্য পদ নবীকরণ করাতে পারেননি, তাঁদের আবার সুযোগ দেওয়া হবে।