সেরিনা বিদায় জানালেন টেনিসকে। —ফাইল চিত্র
একটি যুগের শেষ হল। টেনিস খেলার জন্য যাঁর জন্ম হয়েছিল, সেই সেরিনা উইলিয়ামস র্যাকেট তুলে রাখলেন। ১৯৯৯ সালে যে ইউএস ওপেন জিতে শুরু হয়েছিল সেরিনার গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়যাত্রা, সেই গ্র্যান্ড স্ল্যামেই শেষ ম্যাচ খেললেন তিনি। ঝুলিতে ২৩টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম (শুধু সিঙ্গলসে)। রয়েছে অলিম্পিক্সে সোনা। কৃষ্ণাঙ্গ বলে এক সময় যাঁর বাবাকে মার খেতে হয়েছিল, তাঁর মেয়ে দেশের পতাকা উঁচু করেছিলেন বিশ্বের সামনে। সেই মেয়ে সেরিনা বিদায় জানালেন টেনিসকে।
ইউএস ওপেন শুরুর আগেই জানিয়েছিলেন, এটাই শেষ। চুলে সাদা বিডস পরা যে মেয়েটা ১৯৯৯ সালে জয় করে নিয়েছিলেন ইউএস ওপেন, ভাবা হয়েছিল এ বার প্রথম ম্যাচেই বিদায় নেবেন তিনি। মঞ্চ তৈরি ছিল। মৃত্যুর আগেই কান্নার আয়োজন করে ফেলা হয়েছিল। সেরিনার হার না মানা জেদ সেই আয়োজনে জল ঢেলে দেয়। ইউএস ওপেনের প্রথম রাউন্ড জিতে নেন তিনি। কিন্তু বিদায় ঘণ্টা বাজছিলই। বিশ্বের প্রাক্তন এক নম্বর বিলি জিন কিং বলেন, “বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় হিসাবে বিদায় নেবে সেরিনা। ওর কেরিয়ার একাধিক তরুণ খেলোয়াড়ের অনুপ্রেরণা। ও চ্যাম্পিয়ন। বিশ্বের খেলাকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে।”
জন ম্যাকেনরো বলেন, “সেরিনা যা ইচ্ছা করে সেটাই করা উচিত। ও একজন বিগ্রহ। আমার মনে হয় ওর আর খেলার প্রয়োজন নেই। এখনই সেরিনা মাইকেল জর্ডন, লেব্রোন জেমস এবং টম ব্র্যাডির জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে। ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে খেলার ইতিহাসে সর্বকালের সেরার জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে ও। জীবনের সেরা জায়গায় রয়েছে সেরিনা। কেউ যদি ‘কিং রিচার্ড’ ছবিটি দেখে থাকে তা হলে বোঝা যাবে কোন জায়গা থেকে উঠে এসেছে ও। সেরিনা এখন যে জায়গায় আছে ও আরাম করে বাকি জীবনটা কাটাতে পারে। খারাপ নয়, কী বলেন?”
প্রাক্তন ব্রিটিশ এক নম্বর তারকা গ্রেগ রুসেডস্কি মনে করেন মেয়েদের টেনিসকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন সেরিনা। তিনি বলেন, “ও বক্স অফিস। গত দুই দশকে মেয়েদের টেনিসকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে সেরিনা। সঙ্গে ছিল ওর বোন ভিনাস। আরও অনেক ভাল খেলোয়াড় অবশ্যই আছে। কিন্তু সেরিনা টেনিসপ্রেমী নন এমন দর্শকদেরও আকর্ষণের কারণ হয়ে উঠেছিল। টেনিস সম্পর্কে কেউ কিছু না জানলেও সেরিনা উইলিয়ামসের নাম জানে। সেরিনার অভাবটা বোঝা যাবে।”
২০২১ সালে ইউএস ওপেন জেতেন এমা রাডুকানু। তিনি বলেন, “সেরিনা খেলাটাই পাল্টে দিয়েছে। মেয়েদের টেনিসকে তাঁর মতো কেউ প্রভাবিত করেনি।” ফরাসি ওপেনের ফাইনালে উঠে হেরে যাওয়া কোকো গফ বলেন, “সেরিনা যে কীর্তি রেখে গেল, তা আমার মনে হয় না কেউ কোনও দিন ছুঁতে পারবে। ওর কীর্তি অনেককে অনুপ্রেরণা দেবে।”
সেরিনা এবং ভিনাসের বাবাকে নিয়ে তৈরি ছবি ‘কিং রিচার্ড’। সেই ছবির শেষ দিকে সেরিনার বাবা রিচার্ড ছোট সেরিনাকে বলেন, “ভিনাস বিশ্বের এক নম্বর হবে। কিন্তু তুমি সর্বকালের সেরা হবে। আমার সব কিছু পরিকল্পনা করা আছে।” রিচার্ডের সেই কথা যে সত্যি হয়েছে তা বলাই যায়।