Cricket

‘বীজ বুনেছিল সৌরভ, এখন সেটাই বিশাল এক গাছ হয়ে উঠেছে’

বাসিত আলি ওয়াঘার ওপার থেকে আনন্দবাজার ডিজিটালকে জানিয়ে দিলেন, বিশ্বক্রিকেটে ভারতই এখন সবার ‘দাদা’।

Advertisement

কৃশানু মজুমদার

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৩:০৫
Share:

সৌরভ ও বাসিত। প্রাক্তন পাক ক্রিকেটারের মতে সৌরভ জমানাতেই ভারতীয় ক্রিকেটের আসল উন্নতি শুরু হয়। —ফাইল চিত্র।

সোজা সাপটা কথা বলতে পছন্দ করেন বাসিত আলি। এর জন্য তাঁকে কম ঝক্কি পোহাতে হয়নি। বিশ্বকাপের সময়ে রোহিত শর্মাকে নিয়ে মন্তব্য করায় এ দেশের সমর্থকরা রেগে গিয়েছিলেন প্রাক্তন এই পাক ক্রিকেটারের উপরে। সেই তিনিই দেশীয় ক্রিকেটের অধোঃগতি দেখে বলে দিতে পারেন, ভারতের কাছে হারলে তবেই পাকিস্তানের ক্রিকেটে বদল আসবে, না হলে যেমন চলছে তেমনই চলবে। এ হেন বাসিত আলি ওয়াঘার ওপার থেকে আনন্দবাজার ডিজিটালকে জানিয়ে দিলেন, বিশ্বক্রিকেটে ভারতই এখন সবার ‘দাদা’।

Advertisement

বিশ্বকাপ চলাকালীন ভারতের ক্রিকেট সমর্থকরা সমালোচনায় সমালোচনায় আপনাকে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছিলেন…

বাসিত আলি: (প্রশ্ন থামিয়ে দিয়ে) বিশ্বকাপের সময়ে আমি কী ভুল বলেছিলাম? রোহিত শর্মা একের পর এক ম্যাচে যে ভাবে সেঞ্চুরি করে যাচ্ছিল, তাতে ‘ল অব অ্যাভারেজ’ ওর বিরুদ্ধেই যেত। আমি সেটাই বলেছিলাম। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে রান পায়নি রোহিত। শুনুন, ভারতীয় ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে আমার কোনও রাগ বা বিদ্বেষ নেই। আমি নিজে ক্রিকেটার ছিলাম। তাই ক্রিকেটীয় ব্যাখ্যা দিয়েই বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম সেমিফাইনালে রোহিত কেন রান পাবে না। ভারত-নিউজিল্যান্ড সেমিফাইনালে রোহিতকে নিয়ে করা আমার ভবিষ্যদ্বাণী মিলে যাওয়ায় খুশিই হয়েছিলাম।

Advertisement

পরের প্রশ্ন শুরু করতেই তিনি বলে উঠলেন—

বাসিত আলি: আমার আগের কথাগুলোর অপব্যাখ্যা যেন না হয়। একটা বিষয় আমি পরিষ্কার করে দিতে চাই। ভারতের ক্রিকেট নিয়ে আমি খুব শ্রদ্ধাশীল। সানি ভাই একজন লিভিং লেজেন্ড। ওঁর ক্রিকেট সম্পর্কে অগাধ জ্ঞান। সানি ভাইয়ের কমেন্ট্রি মন দিয়ে শুনলে, আপনিও ক্রিকেট খেলতে পারবেন।

একটা গল্প বলি শুনুন। অনেকেই এটা জানেন না। কপিল পাজির বাবা আর আমার বাবা আগে হরিয়ানায় এক মহল্লায় থাকতেন। পড়তেন একই স্কুলে। দু’জনে একসঙ্গে কত ভলিবল খেলেছেন। দেশভাগের ফলে দুই বন্ধুর দেশ বদলে যায়। কিন্তু দু’জনের ভালবাসায় কোনও কমতি ছিল না। পাকিস্তান সফরে এসে কপিল পাজি আমাদের করাচির বাড়িতে এসেছিলেন। তখন আমি খুব ছোট। আমার বাবার জন্য হাতে করে কোলাপুরি জুতো আর কুর্তা এনেছিলেন কপিল পাজি। ওঁর বাবাই আসলে কপিল পাজির হাত দিয়ে ওগুলো পাঠিয়েছিলেন আমার বাবার জন্য। সেই কুর্তা পরে প্রতি শুক্রবার নমাজ পড়তে যেতেন আমার বাবা। কোলাপুরি জুতোটা আগলে রাখতেন বাবা। কপিল পাজি আমার বাবাকে কতটা শ্রদ্ধা করতেন তা বুঝেছিলাম সে দিনই। বাবা কিছু কাজের জন্য চেয়ার ছেড়ে উঠলেই কপিল পাজিও দাঁড়িয়ে পড়ছিলেন। এই ঘটনা অনেকেই জানেন না। পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ভালবাসা বোঝানোর জন্যই গল্পটা বললাম। সেই সব ঘটনা মনে পড়লে চোখে জল এসে যায়।

আরও পড়ুন: মানসিক জোর জুগিয়েছেন দ্রাবিড়, সচিনের মতো শট মারতে পারলে খুব ভাল লাগে

বুঝলাম আপনার কথা। ভারতের ক্রিকেট সম্পর্কে আসি। বিশ্বকাপের পর থেকে ভারত মেঘের উপর দিয়ে হাঁটছে। আপনি কি মনে করেন কোহালির দলই এখন বিশ্বসেরা?

বাসিত আলি: অবশ্যই, ভারত এখন বিশ্বসেরা দল। এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহই নেই। আগে ভারতের ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি স্পিন বোলিং শক্তিশালী ছিল। এখন ভারতের পেস বোলিং বিভাগ দারুণ শক্তিশালী। মহম্মদ শামি, উমেশ যাদব, ইশান্ত শর্মারা আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। সুস্থ হয়ে ফিরছে ভুবনেশ্বর কুমার। দীপক চহারও উঠে এসেছে। ফলে ভারত এখন আগুনে পেসারও তৈরি করছে। আমি যশপ্রীত বুমরার কথা এখনও বলিনি। বুমরাকে দেখে আমার তো ওয়াসিম আক্রমের কথা মনে পড়ে যায়। দু’জনের বোলিং অ্যাকশন যদিও আলাদা। বুমরা ডান হাতে বল করে। ওয়াসিমভাই বাঁ হাতি। তবে দু’জনের অনেক মিল। বুমরা-ওয়াসিমভাইয়ের বোলিংয়ে কাঁধের ব্যবহার খুব বেশি। দু’জনেই স্ট্রাইক বোলার। ওয়াসিম আক্রমের মতো খুব তাড়াতাড়ি ব্যাটসম্যানের শক্তি-দুর্বলতা ধরে ফেলার ক্ষমতা রয়েছে বুমরার। রান আটকাতে যেমন পারে, তেমনই উইকেট তুলে নিতে দক্ষ। বিরাট-রোহিত-রাহানেদের নিয়ে তৈরি ব্যাটিং লাইন আপের পাশাপাশি শক্তিশালী বোলিংয়ের জন্যই ভারত বাকিদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে। একটা কথা আগাম বলে রাখি। বিরাট কোহালিরা ঘরে-বাইরে যে রকম খেলছে, তাতে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতবে ভারতই। কেউ আটকাতে পারবে না।

অ্যাডিলেডে অস্ট্রেলিয়ার কাছে পাকিস্তান হেরে যাওয়ার পরে ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক মাইকেল ভন বলেছেন, একমাত্র ভারতই হারাতে পারে এই অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে। আপনিও কি তা মনে করেন?

বাসিত আলি: গত বছরও তো অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে গিয়ে ভারত হারিয়ে দিয়ে এসেছিল ওদের। আগামী বছর ভারত যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায়। বিরাট কোহালিরা ঠিক ওদের হারাবে। ভারতীয় ক্রিকেটের এই আগ্রাসন শুরু সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সময় থেকে। বীজ বুনে গিয়েছিল সৌরভ। এখন সেটাই একটা মস্ত গাছ হয়ে উঠেছে। সৌরভের সময় থেকেই ভারতীয় ক্রিকেট উন্নতি করতে শুরু করে। কপিল দেবের নেতৃত্বে ১৯৮৩ সালে বিশ্বজয়ী হওয়ার পরেও ভারতীয় ক্রিকেটের উন্নতি ঘটেছিল। তার পরে তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সৌরভের হাত ধরেই ঘুরতে শুরু করে দেয় ভারতীয় ক্রিকেট।

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এখন বোর্ড প্রেসিডেন্ট। সবাই ইতিমধ্যেই বলতে শুরু করে দিয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেট আরও উন্নতি করতে শুরু করবে আগামী দিনে।

বাসিত আলি: একদমই। ভারতীয় ক্রিকেট আগামীদিনে আরও উন্নতি করবে। সৌরভ এসেছে। রাহুল দ্রাবিড় রয়েছে এনসিএ-তে। সচিন-কুম্বলে-সহবাগ-লক্ষ্মণদের টেনে আনবে সৌরভ। ওরা এলে ভারতীয় ক্রিকেটের আরও উন্নতি হবে। সৌরভের নেতৃত্বে ভারতীয় দল একটা পরিবার হয়ে উঠেছিল। যখনই একটা দল পরিবার হয়ে ওঠে, তার প্রতিফলন দেখা যায় মাঠে। সৌরভের সময়েও সেটাই হয়েছিল।

কাল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টি টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ ভারতের। ক্যারিবিয়ানদের বিরুদ্ধে কী হবে বলে মনে হচ্ছে?

বাসিত আলি: টি টোয়েন্টি ক্রিকেটের ফলাফল অনেকটাই নির্ভর করে টসের উপরে। তার উপরে এখন ঠান্ডা পড়েছে। শিশির পড়বে। বল গ্রিপ করা কঠিন হবে। আমার মতে টস জিতবে যে দল, ম্যাচ জেতার সম্ভাবনা সেই দলেরই বেশি।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিন্তু টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে খুবই শক্তিশালী দল।

বাসিত আলি: ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর পাকিস্তানের ক্রিকেট এখন একই পথে। দুটো দলই পিছনের দিকে হাঁটছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটে এখন রাজনীতি বেশি। খেলাটার প্রতি ভালবাসা কম। টাকার জন্য মার্কিন মুলুকে বাস্কেটবল খেলতে চলে যাচ্ছে অনেকে। ক্রিকেটে আগের মতো প্রতিভা উঠে আসছে না। ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের এই হতশ্রী দশা। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটাররা টি টোয়েন্টি লিগ খেলে। ফলে সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে ক্যারিবিয়ানদের দাপট দেখা যায়। ক্রিকেট যত লম্বা হয় ক্রিকেটারদের ততই বিভিন্ন কঠিন পরীক্ষায় বসতে হয়। তখনই বোঝা যায় কে কতটা দক্ষ।

—গ্রাফিক: তিয়াসা দাস

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement