দেশে ফিরতে মরিয়া জোসেবা বেইতিয়া। ডান দিকে, স্পেনের অবস্থা দেখে মন খারাপ কোলাদোর। ফাইল চিত্র
দুঃসহ পরিস্থিতি। করোনা অতিমারির জেরে শেষ হয়ে গিয়েছে মরসুম। অনুশীলনও বন্ধ। অথচ এই দুঃসময়ে দেশে ফিরে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটানো পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর উপায় নেই কলকাতা ময়দানে খেলা বিদেশি ফুটবলারদের। উদ্বেগের মধ্যে কলকাতায় দিন কাটাচ্ছেন ফ্রান গঞ্জালেস, খুয়ান মেরা গঞ্জালেস, জন চিডি, মুসা মুদ্দে-রা।
মোহনবাগান কোচ কিবু ভিকুনার পরিবারের সদস্যেরা স্পেনের গিপুসকোয়া অঞ্চলের চিজ়ুরকুইল শহরে রয়েছেন। স্ত্রী কাসা বিয়েল এখন পোলাল্ডে। উদ্বিগ্ন সবুজ-মেরুন কোচ বলছিলেন, ‘‘স্পেনের পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর। আমার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। দ্রুত স্পেনে ফিরতে চাই।’’ ইস্টবেঙ্গলের কোচ মারিয়ো রিভেরার বাড়ি মাদ্রিদে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে তাঁর স্ত্রী ও মা শহর ছেড়ে গ্রানাদায় চলে গিয়েছেন।
ইস্টবেঙ্গলের স্ট্রাইকার মার্কোস খিমেনেস স্পেনের বাসিন্দা। তিনি সব চেয়ে বেশি চিন্তিত চিকিৎসক বাবাকে নিয়ে। বললেন, ‘‘আমার পরিবারের সদস্যেরা এখনও পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু আমার বাবা চিকিৎসক। তাঁর পক্ষে গৃহবন্দি থাকা সম্ভব নয়।’’ আর এক তারকা খুয়ান মেরা গঞ্জালেস বলছিলেন, ‘‘খাদ্যসামগ্রী ও প্রয়োজনীয় জিনিস কেনা ছাড়া পরিবারের কেউ বাইরে বেরোচ্ছেন না।’’ লাল-হলুদ শিবিরে একমাত্র উদ্বেগহীন খাইমে সান্তোস কোলাদো। তাঁর পরিবার থাকেন উত্তর স্পেনের ওভিয়েদো-তে। সরকারি হিসেবে অনুযায়ী এখন পর্যন্ত এক জনও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি তাঁর শহরে। তবে স্পেনের অন্যান্য শহরে মারণ ভাইরাসে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হওয়ায় মন খারাপ কোলাদোর।
তিন প্রধানের গৃহবন্দি ফুটবলারেরা
মোহনবাগান
নাম দেশ
কিবু ভিকুনা (কোচ) স্পেন
টোমাস থুস পোলান্ড
পাউলিস লিথুয়ানিয়া
ফ্রান মোরান্তে স্পেন
ফ্রান গঞ্জালেস স্পেন
জোসেবা বেইতিয়া স্পেন
পাপা বাবাকর সেনেগাল
ড্যানিয়েল ত্রিনিদাদ ও টোব্যাগো
ইস্টবেঙ্গল
নাম দেশ
মারিয়ো (কোচ) স্পেন
মার্সাল সেভিয়ানো স্পেন
কার্লোস নোদার পেরেস স্পেন
খাইমে সান্তোস কোলাদো স্পেন
খুয়ান মেরা গঞ্জালেস স্পেন
ভিক্তর পেরেস আলন্সো স্পেন
মার্কোস খিমেনেস স্পেন
কাশিম আইদারা সেনেগাল-ফ্রান্স
জনি আকোস্তা কোস্টা রিকা
মহমেডান
নাম জন চিডি মুসা মুদ্দে
দেশ নাইজিরিয়া উগান্ডা
মোহনবাগানের আই লিগ জয়ের অন্যতম কারিগর জোসেবা বেইতিয়া চিন্তিত ভাই ও বোনকে নিয়ে। সবুজ-মেরুন তারকার ভাই, বোন ও বান্ধবী কলকাতায় এসেছিলেন আই লিগ জয়ের সাক্ষী থাকতে। বান্ধবী বেইতিয়ার সঙ্গে কলকাতাতেই রয়েছেন। কিন্তু ভাই ও বোন স্পেনে ফিরে গিয়েছেন। আর নায়ক ফ্রান গঞ্জালেসের স্ত্রী ও সন্তান কলকাতায় থাকলেও পরিবারের বাকি সদস্যেরা স্পেনে। দুই তারকাই বলছিলেন, ‘‘ফুটবল বন্ধ। এখানে থেকে কী করব? প্রতি মুহূর্তে উদ্বেগ বাড়ছে।’’ একই সুর পাপা বাবাকর জিয়োহারার গলাতেও।
কিবু, মারিয়ো থেকে বেইতিয়া, ফ্রান— সকলেই দেশে ফিরতে মরিয়া। কিন্তু ফিরবেন কী ভাবে? দুই প্রধানের স্পেনীয় সদস্যদের ভরসা তাঁদের দূতাবাস। ইতিমধ্যেই ভারতে স্পেনীয় দূতাবাসের তরফে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ বানানো হয়েছে। ভারতে এই মুহূর্তে যত জন স্পেনের নাগরিক রয়েছেন, তাঁদের সকলের সঙ্গেই নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন দূতাবাসের কর্মীরা। কিবু, মারিয়ো বললেন, ‘‘আশা করছি, স্পেন দূতাবাস আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোনও ব্যবস্থা করবে।’’
ময়দানে এখন দুই প্রধানে স্পেনীয় ফুটবলারদেরই প্রাধান্য। করোনার প্রকোপ যেখানে খুব বেশি দেখা দিয়েছে। তবু স্পেন থেকে উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে ফুটবলারদের দেশে ফেরানোর। ময়দানের বাকি বিদেশিদের কী হবে? মহমেডানের চিডি ও মুসা যেমন। চিডি নাইজিরিয়ার। মুসা উগান্ডার। তাঁরা দেশে ফেরত যাননি। তিন প্রধানের বাইরেও কলকাতায় অনেক বিদেশি ফুটবলার আছেন। এঁদের অনেকেই বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে অর্থের বিনিময়ে ছোটখাটো প্রতিযোগিতায় ভাড়াটে সৈন্য হিসেবে খেলে উপার্জন করেন। সংখ্যাটা প্রায় পাঁচশোর কাছাকাছি। তাঁরাও সকলে আটকে রয়েছেন এবং লকডাউনের জেরে প্রবল সমস্যায়। নিয়মিত ফুটবল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দৈনিক রোজগার নেই। অনেকের হাল এতটাই খারাপ যে, খাবার কেনার সামর্থও নেই!
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)