ইউক্রেনের ফুটবলারদের কুর্নিশ জানালেন স্কটল্যান্ডের সমর্থকরা ছবি: এএফপি
মাঠে ঢুকছেন ইউক্রেনের ফুটবলাররা। প্রত্যেকের গায়ে জড়ানো দেশের নীল-হলুদ জাতীয় পতাকা। তাঁদের দেখে উঠে দাঁড়ালেন স্কটল্যান্ডের সমর্থকেরা। হাততালি দিয়ে স্বাগত জানালেন।
৩-১ গোলে ম্যাচ জিতে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন ইউক্রেনের ফুটবলাররা। স্বপ্নভঙ্গ স্কটল্যান্ডের। ২৪ বছর ধরে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি দল। হতাশ সমর্থকেরা। তার মধ্যেও উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিলেন প্রতিপক্ষের উদ্দেশে।
মাঠের ৫১ হাজার দর্শকের মধ্যে মাত্র তিন হাজার ইউক্রেনীয়। গ্যালারির এক কোনায় জায়গা নিয়েছেন। জাতীয় সঙ্গীতের সময় বুকে হাত, চোখে জল। জাতীয় সঙ্গীত শেষ হওয়ার পরে হাততালি দিল বাকি ৪৮ হাজার। খেলা শেষেও সেই ছবি। তিন হাজার যখন মাঠ ছেড়ে বেরোচ্ছেন তখন প্রায় ১০ হাজার তাঁদের হাততালি দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।
টুকরো টুকরো ছবি। এই টুকরো টুকরো ছবিতেই এক অন্য ফুটবল দেখল বিশ্ব। যেখানে এক দিকে যুদ্ববিধ্বস্ত ইউক্রেন রয়েছে, তাদের লড়াই রয়েছে, জবাব দেওয়ার মঞ্চ রয়েছে। সেখানে আবার অন্য দিকে জয়ীকে বরণ করে নেওয়া রয়েছে। যোগ্যকে শুভেচ্ছা জানানো রয়েছে। সর্বোপরি বার্তা রয়েছে, মানবতার, বন্ধুত্বের, সহমর্মিতার।
ম্যাচ জিতে সমর্থকদের সামনে ইউক্রেনের ফুটবলাররা। ছবি: টুইটার
২০১৮ সালে রাশিয়ায় ফুটবল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে এক অন্য দৃশ্য দেখেছিল বিশ্ব। দেখেছিল, কী ভাবে ক্রোয়েশিয়ার কাছে হারার পরে সে দেশের সমর্থকদের উপর হামলা করছেন ইংল্যান্ডের সমর্থকরা। মাঠের মধ্যে, মাঠের বাইরে, ইংল্যান্ডের সমর্থকদের হাতে সে দিন আক্রান্ত হয়েছিলেন ক্রোয়েশিয়ার বহু সমর্থক। নিন্দা হয়েছিল। ব্যস ওটুকুই। কোনও পদক্ষেপ করেনি ফিফা।
চার বছর পরে আর একটি দৃশ্য দেখল ফুটবল বিশ্ব। দেখালেন স্কটিশ সমর্থকরা। স্বপ্নভঙ্গের পরেও যেখানে কোনও উদ্ধত আচরণ নেই। ম্যাচের আগে স্কটল্যান্ডের প্রশাসনও হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। ইউক্রেনের ফুটবল দলের বেশির ভাগ ফুটবলার দেশেরই বিভিন্ন লিগে খেলেন। কিন্তু রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পরে সব ধরনের খেলাধুলো বন্ধ। লুকিয়ে লুকিয়ে বেড়াতে হচ্ছে ফুটবলারদের। অনুশীলনের সুযোগ নেই। তাই বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনের মতো খেলায় নামার আগে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী দল হলেও ইউক্রেনের ফুটবলারদের স্কটল্যান্ডে পর্যাপ্ত অনুশীলনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। তাই হারলেও ফুটবল বিশ্বের মন জিতেছে স্কটল্যান্ড।
যুদ্ধের মধ্যেই খেলা দেখতে রাত জেগেছিল ইউক্রেন। কিভের বেশ কিছু পানশালায় ভিড় জমেছিল। সেখানে স্থানীয় সময় রাত ১১টায় শুরু হয় খেলা। যখন শেষ হয়, তখনও রাত্রিকালীন কার্ফু চলছে। তাই পানশালাতেই সারা রাত কাটিয়ে দেন দর্শকেরা। রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সাহস দেখাতে চেয়েছিল ইউক্রেন। সাহস দেখিয়েছে। রাশিয়ার আস্ফালনের বিরুদ্ধে জবাব দিতে চেয়েছিল ইউক্রেন। জবাব দিয়েছে ফুটবলের মধ্যে দিয়ে।
কাতার বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা এখনও অর্জন করেনি ইউক্রেন। আগামী রবিবার ইংল্যান্ডের কার্ডিফে ওয়েলসের বিরুদ্ধে খেলবে তারা। সেই ম্যাচের জয়ী দল কাতারের টিকিট ধরবে। স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে উঠে ইতিমধ্যেই অনেক ইউক্রেনীয় সমর্থক ইংল্যান্ডে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। কোন ইংল্যান্ড? যে দেশের সমর্থকেরা ম্যাচ হেরে প্রতিপক্ষ সমর্থকদের উপর হামলা করেছিল। সেখানে কি স্কটল্যান্ডের মতোই অভ্যর্থনা পাবেন ইউক্রেনের সমর্থকরা?
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।