East Bengal vs Mohun Bagan

মোহনবাগানকে কটাক্ষ করেই টিকিট বিতর্ক মেটাল ইস্টবেঙ্গল, হস্তক্ষেপ রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রীর

আসন্ন ডার্বির টিকিট নিয়ে বিতর্ক অবশেষে মেটার পথে। শুক্রবার বিকেলে ইস্টবেঙ্গলের তরফে প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, টিকিটের দামের অসাম্য নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে তা সংশোধন করে নেওয়া হবে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২৪ ১৯:১৯
Share:

কলকাতা ডার্বির একটি মুহূর্ত। — ফাইল চিত্র।

আসন্ন ডার্বির টিকিট নিয়ে বিতর্ক অবশেষে মেটার পথে। শুক্রবার বিকেলে ইস্টবেঙ্গলের তরফে প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, টিকিটের দামের বৈষম্য নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে তা সংশোধন করে নেওয়া হবে। রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের হস্তক্ষেপেই এমন হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ইস্টবেঙ্গলের তরফে খোঁচা দেওয়া হয়েছে মোহনবাগানকেও।

Advertisement

ডার্বির দু’দিন আগে থেকেই টিকিটের দাম প্রকাশ্যে আসে। মোহনবাগান গ্যালারির টিকিটের দাম বেশি এই অভিযোগ নিয়ে বিতর্ক বাঁধে। তার পর থেকে দোষারোপ, আদালতে মামলা দায়ের ইত্যাদি অনেক ঘটনাই ঘটেছে। তার পরেই টিকিটের দামে সামঞ্জস্য আনতে উদ্যোগ নেয় ইস্টবেঙ্গল। ইস্টবেঙ্গলের বিনিয়োগকারী ইমামি গ্রুপের দুই প্রধান কর্তা এখন রাজ্যে নেই। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে অরূপের সঙ্গে ইমামির দুই কর্তা এবং ক্লাব কর্তাদের টেলি কনফারেন্সে কথা হয়। সেখানেই ক্রীড়ামন্ত্রীর হস্তক্ষেপে বেরোয় সমাধানসূত্র।

জানা গিয়েছে, দু’দলের গ্যালারিরই টিকিটের দাম যাতে একই থাকে, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে ইস্টবেঙ্গল নিজেদের সমর্থকদের জন্য ‘বিশেষ ছাড়’ দিয়ে টিকিট বিক্রি করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এর জন্য ইস্টবেঙ্গল গ্যালারির টিকিটে বিশেষ ‘কোড’ দেখা যেতে পারে। সেই কোডের মাধ্যমে টিকিটের দামে ছাড় দেওয়া হবে তাদের। ফলে দু’দলের টিকিটের আর্থিক যে ফারাক রয়েছে সেটাই থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। শুধু ছাপা টিকিটে মূল্য একই রাখা হচ্ছে।

Advertisement

বিবৃতিতে ইস্টবেঙ্গল খোঁচা দিয়েছে মোহনবাগানকেও। জানিয়েছে, গত ডার্বিতেও ক্লাবের সমর্থকদের জন্য একই রকম ব্যবস্থা রেখেছিল মোহনবাগান। সবুজ-মেরুন সমর্থকেরা সে বার আলাদা দামে টিকিট কেটেছিলেন। ইস্টবেঙ্গল সেই কাজই করেছে বলে দাবি। ব্যাপারটা নিয়ে ‘ধন্দ’ তৈরি হয়েছিল বলে দাবি ইমামি ইস্টবেঙ্গলের ডিরেক্টর সন্দীপ আগরওয়ালের।

ডার্বির টিকিট বিক্রি শুরু হচ্ছে শনিবার থেকে। ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা ক্লাব থেকে অফলাইনে টিকিট পাবেন। অনলাইনে টিকিট কাটলে তা ‘রিডিম’ করতে পারেন সল্টলেক স্টেডিয়ামের বক্স অফিস ১ থেকে। দু’টি ক্ষেত্রেই সকাল ১০.৩০টা থেকে সন্ধ্য়া ৬.৩০টা পর্যন্ত কাজ চলবে। মোহনবাগানের সমর্থকেরা অফলাইনে টিকিট কাটতে পারবেন মহমেডান তাঁবু থেকে। অনলাইনের টিকিট ‘রিডিম’ করতে পারবেন সল্টলেক স্টেডিয়ামের বক্স অফিস ৪ থেকে।

প্রসঙ্গত, বুধবার টিকিটের দাম প্রকাশ্যে আসার পর দেখা গিয়েছিল, ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের জন্য টিকিটের দাম ধার্য হয়েছে ১০০ (বি১ ব্লক, বি৩ ব্লক), ১৫০ (এ১), ২০০ (সি১, সি৩), ২৫০ (বি২), ৩০০ (এ২) এবং ৪০০ (সি২) টাকা। ভিভিআইপি টিকিটের দাম ইস্টবেঙ্গলের জন্য ১০০০ টাকা। মোহনবাগান সমর্থকদের রবিবারের ডার্বি দেখতে হবে ২৫০ (ডি৩), ৩০০ (এ১, ডি১), ৩৫০ (সি১, সি৩), ৪০০ (ডি২) এবং ৫০০ (এ২)। মোহনবাগান সমর্থকদের জন্য ভিআইপি টিকিটের দাম ১৫০০ টাকা। ভিভিআইপি টিকিটের দাম ৩০০০ টাকা।

আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল ইস্টবেঙ্গলের বিনিয়োগকারী ইমামির সঙ্গে। তাদের তরফে তখনও বলা হয়েছিল, আগের ডার্বিতে টিকিটের দাম দুই দলের সমর্থকদের জন্য দু’রকম ছিল। উল্লেখ্য, সেই ডার্বির আয়োজক ছিল মোহনবাগান। ইমামির তরফে এটাও দাবি করা হয়েছিল, সেই ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের জন্য বেশি দামের টিকিট রাখা হয়েছিল। কিন্তু মোহনবাগান সমর্থকদের জন্য টিকিটের দাম কম ছিল। সেই ‘প্রথা’ মেনে ইমামি এ বার টিকিটের দামে বৈষম্য রেখেছে। তারা আরও বলেছিল, আন্তর্জাতিক ফুটবলেও টিকিটের দামের এটাই প্রথা। বিভিন্ন দেশের ফুটবল লিগে হোম টিমের সমর্থকদের জন্য টিকিটের দাম কম রাখা হয়।

এই দাবি সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়েছিল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। তাদের তরফে বলা হয়েছিল, গত ডার্বিতে দুই দলের সমর্থকদের জন্য টিকিটের দাম সমান ছিল। সেই দাম ছিল ২০০, ৩০০, ৪০০ এবং ৫০০ টাকা। মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের বক্তব্য ছিল, ইমামি ঠিক বলছে না। ডার্বির ১০৩ বছরের ইতিহাসে কোনও দিন দুই দলের সমর্থকের জন্য টিকিটের দামে এমন বৈষম্য হয়নি। আন্তর্জাতিক ফুটবলের যে উদাহরণ ইমামি দিচ্ছে তা উড়িয়ে মোহনবাগানের দাবি ছিল, পৃথিবীর কোনও লিগে এমন হয় না।

বৃহস্পতিবার একটি বিবৃতিতে ডার্বি বয়কটের কথা বলেছিল মোহনবাগান। সেখানে লেখা হয়েছিল, “ফুটবলকে কালিমালিপ্ত করেছে ইস্টবেঙ্গল। পৃথিবীর ইতিহাসে কোথাও এমন ঘটনা ঘটেনি যে কোনও ম্যাচে আয়োজক দলের সমর্থকদের প্রায় দ্বিগুণ টাকা দিয়ে অ্যাওয়ে দলের সমর্থকদের টিকিট কিনতে হচ্ছে। কলকাতা ডার্বির ইতিহাসে এটা লজ্জাজনক ঘটনা।”

এখানেই থেমে ছিল না মোহনবাগান। তারা আরও লিখেছিল, “ইস্টবেঙ্গলের এই কাজ মোহনবাগানের সমর্থকদের মনোভাবে আঘাত দিয়েছে। সমর্থকেরাই আমাদের দলের ভিত। এই পরিস্থিতিতে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের অক্রীড়াসুলভ মানসিকতাকে আমরা ধিক্কার জানাচ্ছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি মোহনবাগান ক্লাব এই ডার্বির টিকিট কিনবেও না, বিক্রিও করবে না। আমরা এই ডার্বি দেখতে যাওয়া বয়কট করলাম।” এখন দেখার ক্লাবের এই ঘোষণার পরে ডার্বিতে মোহনবাগানের কত সমর্থক খেলা দেখতে যান।

বিতর্কের মাঝে অবশ্য টিকিটের দাম নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছিল ইস্টবেঙ্গল। ক্লাব কর্তা দেবব্রত সরকার বলেছিলেন, “বৈষম্য নিয়ে আমিও ভাবছিলাম। এটা সঠিক হয়নি। মাননীয় ক্রীড়ামন্ত্রী বলার পরে আমিও কথা বললাম। আগামী দিনে যাতে বৈষম্য না থাকে সেই চেষ্টা করব। আমি ব্যক্তিগত ভাবে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের থেকে দুঃখ প্রকাশ করছি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement