আনোয়ার আলি। —ফাইল চিত্র।
আনোয়ার আলিকে চার মাসের জন্য নির্বাসিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ইস্টবেঙ্গল এবং দিল্লি এফসি-কেও শাস্তি দেওয়া হয়েছে। আগামী দু’টি ট্রান্সফার উইন্ডোয় কোনও ফুটবলার কিনতে পারবে না তারা। ইস্টবেঙ্গল এবং আনোয়ারকে মিলিত ভাবে ১২ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণও দিতে হবে। এই টাকা পাবে মোহনবাগান। তবে এই প্রথম নয়, আগেও ভারতীয় ফুটবল বেশ কিছু জরিমানা এবং শাস্তি দেখেছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু শাস্তির ঘটনা দেখে নেওয়া যাক।
সাল ২০১২: মোহনবাগান
৯ ডিসেম্বর, ২০১২। এই তারিখটা ভুলতে পারবেন না রহিম নবি। দর্শকদের ছোড়া ইটে মোহনবাগানের প্রাক্তন ফুটবলের মাথা ফেটে গিয়েছিল। এর পরেই ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধে খেলতে নামেনি সবুজ-মেরুন। যে কারণে দু’বছরের জন্য আই লিগ থেকে নির্বাসিত করা হয়েছিল মোহনবাগানকে। যদিও শেষ পর্যন্ত সেই নির্বাসন তুলে নেওয়া হয়। পরিবর্তে ২ কোটি টাকা জরিমানা দিতে হয় সবুজ-মেরুন শিবিরকে। ওই ম্যাচের আগে পর্যন্ত যে পয়েন্ট মোহনবাগান অর্জন করেছিল, সেটাও কেটে নেওয়া হয়েছিল।
সাল ২০১৪: অ্যাশলে ওয়েস্টউড
চার ম্যাচের জন্য নির্বাসিত হয়েছিলেন অ্যাশলে ওয়েস্টউড। সেই সময় তিনি বেঙ্গালুরু এফসি-র কোচ ছিলেন। ৬ এপ্রিল মোহনবাগানের বিরুদ্ধে যুবভারতীতে একটি ম্যাচে খারাপ আচরণের জন্য শাস্তি পেয়েছিলেন তিনি। সে বার চার ম্যাচের জন্য নির্বাসনের সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছিল তাঁকে। যুবভারতীতে কাচ ভেঙে দিয়েছিলেন ওয়েস্টউড। তার পরেই শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে।
সাল ২০১৫: খালিদ জামিল এবং প্রদ্যুম রেড্ডি
মুম্বই এফসি বনাম বেঙ্গালুরু এফসি-র ম্যাচ ছিল। সেই ম্যাচে মুম্বইয়ের কোচ খালিদ জামিল এবং বেঙ্গালুরুর সহকারী কোচ প্রদ্যুম রেড্ডির মধ্যে বচসা হয়। খালিদ অশ্লীল আচরণ করেছিলেন এবং প্রদ্যুম কটূক্তি করেছিলেন। সেই কারণে দু’জনকেই শাস্তি দেওয়া হয়। চার ম্যাচের জন্য নির্বাসিত করে দেওয়া হয়েছিল তাঁদের। সেই ম্যাচে শাস্তি পেয়েছিলেন ওয়েস্টউডও। বেঙ্গালুরুর কোচ মাঠে ঢুকে রেফারির সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন। যে কারণে ২ লক্ষ টাকা জরিমানা হয় তাঁর। সমর্থকদের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়েছিলেন আমোয়েস ডু। তাঁকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল।
সাল ২০১৬: এফসি গোয়া
আইএসএলে চেন্নাইয়িন এফসি-র বিরুদ্ধে সে বছর ২-৩ গোলে হেরে গিয়েছিল এফসি গোয়া। তার পরেই খারাপ আচরণের কারণে শাস্তি পেয়েছিলেন এফসি গোয়ার দুই মালিক শ্রীনিবাস ডেম্পো এবং দত্তরাজ সালগাওকার। ডেম্পোকে দু’বছর এবং সালগাওকারকে তিন বছরের জন্য আইএসএল থেকে নির্বাসিত করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে গোয়াকে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। ১১ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছিল তাদের এবং পরের মরসুম শুরু করতে হয়েছিল ১৫ পয়েন্ট বাদ দিয়ে। যদিও পরে আইএসএল কমিটি জরিমানার পরিমাণ কমিয়ে ৬ লক্ষ টাকা করে। সেই সঙ্গে পয়েন্টও কাটা হয়নি। মালিকদের নির্বাসনও তুলে নেওয়া হয়েছিল।
সাল ২০১৬: সঞ্জয় সেন
ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন সঞ্জয় সেনকে আট ম্যাচের জন্য নির্বাসিত করেছিল। সেই সময় সঞ্জয় মোহনবাগানের কোচ। এআইএফএফ-এর বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য ১০ লক্ষ টাকা জরিমানাও করা হয়েছিল তাঁকে। ট্যাম্পাইন রোভার্সকে ৩-১ গোলে হারিয়েছিল মোহনবাগান। এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগে প্রথম ভারতীয় দল হিসাবে কোনও ম্যাচ জিতেছিল তারা। সেই জয়ের পরেই এআইএফএফ-এর উদ্দেশে সঞ্জয় অপমানজনক কথা বলেছিলেন। পরে সঞ্জয়ের শাস্তি কমিয়ে দেওয়া হয়। তাঁকে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা এবং চার ম্যাচের জন্য নির্বাসিত করা হয়েছিল।
সাল ২০১৬: মোহনবাগান
খেলোয়াড়দের বয়স কমিয়ে অনূর্ধ্ব-১৮ প্রতিযোগিতায় খেলিয়েছিল মোহনবাগান। ২০১৬-১৭ মরসুমের অনূর্ধ্ব-১৮ আই লিগে শুভঙ্কর অধিকারীকে সই করিয়েছিল সবুজ-মেরুন। কিন্তু পূর্বাঞ্চলের সাই নজরে এনেছিল যে, শুভঙ্করের বয়স বেশি। সেই অভিযোগ পাওয়ার পর আই লিগ কমিটি শুভঙ্করকে মেডিক্যাল পরীক্ষা দিতে বলে দিল্লিতে। কিন্তু শুভঙ্কর সেই পরীক্ষা দিতে যাননি। এই নিয়ে মোহনবাগানকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। তারা কোনও উত্তর দিতে পারেনি। সেই কারণে মোহনবাগানকে সেই মরসুমে নির্বাসিত করা হয়েছিল ওই প্রতিযোগিতা থেকে।
সাল ২০১৮: রঞ্জিত বাজাজ
মিনার্ভা পঞ্জাবের মালিক রঞ্জিত বাজাজ। তিনি রেফারি পিনস্কেমহামে মাওতোকে বর্ণবিদ্বেষী কথা বলেছিলেন। এআইএফএফ বাজাজকে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা করে এবং এক বছরের জন্য নির্বাসিত করে দেয়। শিলংয়ে অনূর্ধ্ব-১৮ আই লিগের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল মিনার্ভা এবং আইজল এফসি। সেই ম্যাচেই ঘটনাটি ঘটেছিল। সেই নির্বাসনের ফলে এক বছর জন্য ফুটবল সংক্রান্ত কোনও কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেননি বাজাজ। সেই সঙ্গে মাঠেও ঢোকা নিষিদ্ধ ছিল তাঁর।