প্রস্তুতি: অনুশীলনে ডেভিড, কৃষ্ণ, মনবীররা। সোমবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
নাটকীয় সমাপ্তির পথে এএফসি কাপের গ্রুপ ‘ডি’-র দ্বৈরথ। এটিকে-মোহনবাগান, গোকুলম এফসি, বসুন্ধরা কিংস ও মাজ়িয়া স্পোর্টস অ্যান্ড রিক্রিয়েশন ক্লাব— চারটি দলেরই অর্জিত পয়েন্ট এখন তিন। চারটি দলের সামনেই আন্তঃআঞ্চলিক সেমিফাইনালে ওঠার সুযোগ রয়েছে! অথচ ছাড়পত্র পাবে একটি দল। শেষ পর্যন্ত ‘ডি’ গ্রুপের সেরা হয়ে কারা আন্তঃআঞ্চলিক সেমিফাইনালে উঠবে, তা নিয়েই চর্চা তুঙ্গে।
যুবভারতীতে আজ, মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটেয় গোকুলম নামছে বসুন্ধরার বিরুদ্ধে। রাত সাড়ে আটটায় প্রীতম কোটালরা খেলবেন মাজ়িয়ার বিরুদ্ধে। যা নিয়ে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ মোহনবাগান ছাড়া বাকি তিনটি দলের কোচই। তাঁদের মতে, দু’টি ম্যাচ একই সময়ে দেওয়া উচিত ছিল এএফসির। সোমবার দুপুরে সাংবাদিক বৈঠকে গোকুলমের কোচ ভিনসেঞ্জো আলবের্তো অ্যানিস বললেন, ‘‘শেষ ম্যাচের উপরে যখন নির্ভর করছে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে কোন দল আন্তঃআঞ্চলিক সেমিফাইনালে উঠবে, তখন একই সময়ে দু’টি খেলা দেওয়া উচিত ছিল। তাতে স্বচ্ছতা বজায় থাকত।’’ বসুন্ধরার কোচ অস্কার ব্রুজ়োর কথায়, ‘‘কলকাতায় ফুটবল স্টেডিয়ামের অভাব নেই। তা সত্ত্বেও এএফসি কেন একই সময় দু’টি ম্যাচ দিল না, তা রহস্য। আশা করব, মঙ্গলবার ফুটবল কলঙ্কিত হবে না।’’ মাজ়িয়ার কোচ মিয়োড্র্যাগ জেসিচও একমত ভিনসেঞ্জো ও অস্কারের সঙ্গে। ব্যতিক্রম মোহনবাগানের কোচ জুয়ান ফেরান্দো। বললেন, ‘‘ক্রীড়াসূচি এএফসি তৈরি করেছে। আমাদের হাতে কিছু নেই।’’
রবিবার ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সব ম্যাচ একই সময়ে (ভারতীয় সময় রাত ৮.৩০) শুরু হয়েছিল। এএফসি কাপে কেন তা হচ্ছে না? এশিয়ার ফুটবল নিয়ামক সংস্থার এক শীর্ষ কর্তা বললেন, ‘‘কোভিডের কারণে শুধু যুবভারতীতেই সব ম্যাচের আয়োজন করতে হয়েছে। মাঠ যে হেতু একটি, তাই একই সময়ে দু’টি ম্যাচে দেওয়া সম্ভব নয়।’’
দু’টি ম্যাচ একই সময়ে না দেওয়ায় যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে বসুন্ধরার বিরুদ্ধে জিতলেই আন্তঃআঞ্চলিক সেমিফাইনালে পৌঁছে যাবে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন গোকুলম। সে ক্ষেত্রে মোহনবাগান বনাম মাজ়িয়ার দ্বৈরথের কোনও গুরুত্বই থাকবে না। কারণ, জিতলেও শেষ চারে ওঠার কোনও সম্ভাবনা নেই রয় কৃষ্ণ, লিস্টন কোলাসোদের। কারণ, তাঁরা গোকুলমের কাছে ২-৪ গোলে হেরে গিয়েছিলেন।
প্রশ্ন উঠছে তা হলে কোন অঙ্কে মোহনবাগান আন্তঃআঞ্চলিক সেমিফাইনালে উঠতে পারে? বসুন্ধরার কাছে গোকুলমকে হারতে হবে। মাজ়িয়ার বিরুদ্ধে জিততে হবে মোহনবাগানকে। সে ক্ষেত্রে দুই বাংলার দুই দলেরই পয়েন্ট হবে ছয়। কিন্তু বসুন্ধরার বিরুদ্ধে জেতায় শেষ চারে পৌঁছে যাবেন প্রীতমরাই। আবার যদি গোকুলম বনাম বসুন্ধরা ম্যাচ অমীমাংসিত থাকে, সে ক্ষেত্রে মাজ়িয়ার বিরুদ্ধে ড্র করলেও মোহনবাগানের পরের পর্বে যাওয়া আটকাবে না। এএফসি কাপের নিয়ম অনুযায়ী যদি দুই দলের পয়েন্ট সমান হয়, সে ক্ষেত্রে প্রথমে মুখোমুখি সাক্ষাতের ফল দেখা হয়। সেখানেও যদি সব সমান হয়, তখন গোলপার্থক্যে সেরা দল বাছাই করা হয়। ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে অবশ্য গোল পার্থক্যে এগিয়ে (+২) রয়েছেন ডেভিড উইলিয়ামসরাই।
মোহনবাগান কোচ জুয়ান ফেরান্দো শেষ চারে ওঠার জটিল অঙ্ক নিয়ে একেবারেই মাথা ঘামাতে চান না। ফুটবলারদেরও ভাবতে নিষেধ করে দিয়েছেন তিনি। সোমবার দুপুরে সাংবাদিক বৈঠকে সবুজ-মেরুনের স্পেনীয় কোচ বললেন, ‘‘বসুন্ধরা জিতলে আমাদের নক-আউটে ওঠাটা নিজেদেরই নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ড্র হলেও তাই। কিন্তু গোকুলম যদি জিতে যায়, তা হলে আমাদের শুধু নিজেদের জন্যই খেলতে হবে। এই নিয়ে ড্রেসিংরুমে ফুটবলারদের সঙ্গে কথাও হয়েছে। গোকুলম হারলে বা ড্র করলেই আমাদের ভাল।’’ যোগ করেন, ‘‘আমাদের সামনে দারুণ সুযোগ রয়েছে আন্তঃআঞ্চলিক সেমিফাইনালে ওঠার। তাই মাজ়িয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচের গুরুত্ব সম্পর্কে সকলেই ওয়াকিবহাল। আমরা জেতা ছাড়া কিছুই ভাবছি না।’’ কোচের পাশে বসে প্রীতমও বললেন, ‘‘আমাদের পাখির চোখ মাজ়িয়াকে হারানো।’’
মঙ্গলবার এএফসি কাপে: গোকুলম এফসি বনাম বসুন্ধরা কিংস (বিকেল ৪.৩০, যুবভারতী)। এটিকে-মোহনবাগান বনাম মাজ়িয়া স্পোর্টস (রাত ৮.৩০, যুবভারতী)। স্টার স্পোর্টস থ্রি চ্যানেলে।