ম্যানুয়েল দিয়াস। —ফাইল চিত্র।
নতুন মরসুমে কোচ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে খেলার ধরনও বদলে গিয়েছে এসসি ইস্টবেঙ্গলের! পূর্বসূরি রবি ফাওলারের মতো ম্যানুয়েল দিয়াসেরও পছন্দ আক্রমণাত্মক ফুটবল। কিন্তু তাঁর রণকৌশল
সম্পূর্ণ আলাদা।
রাফায়েল বেনিতেসের প্রাক্তন ছাত্র ফাওলারের প্রিয় রণকৌশল ছিল প্রচুর পাস খেলতে খেলতে আক্রমণে উঠে গোল করার চেষ্টা করা। লাল-হলুদের নতুন কোচ অনুসরণ করেন রিয়াল মাদ্রিদের ‘ডিরেক্ট ফুটবল’ ঘরানা। বিপক্ষের উপরে চাপ বাড়াতে শুরু থেকেই যেমন ড্যানিয়েল চিমাদের দ্রুত আক্রমণে উঠতে হবে, তেমনই রক্ষণ শক্তিশালী করতে নেমে আসতে হবে। মাঝমাঠে নিজেদের মধ্যে প্রচুর পাস খেলে প্রতিপক্ষকে গুছিয়ে নেওয়ার সময় দিতে একেবারেই পছন্দ করেন না তিনি।এখানেই শেষ নয়। লাল-হলুদের অনুশীলনে রিয়াল যুব দলের প্রাক্তন কোচ জোর দিচ্ছেন বিপক্ষের ফুটবলারদের পা থেকে বল ছিনিয়ে নিয়ে প্রতিআক্রমণে ওঠায়।
পার্থক্য রয়েছে অনুশীলন পদ্ধতিতেও। ফাওলারের কোচিংয়ে গত মরসুমে খেলা বেশ কয়েক জন ফুটবলার এ বারও লাল-হলুদে রয়েছেন। তাঁরা জানালেন, লিভারপুল কিংবদন্তি হলে ঘণ্টাখানেকের বেশি অনুশীলন করাতেন না। ম্যানুয়েল সম্পূর্ণ উল্টো। দু’ঘণ্টারও উপরে ড্যারেন সিডওয়েল, মহম্মদ রফিকদের নিয়ে শুধু মাঠে পড়ে থাকেন না, রীতিমতো নিংড়ে নেন ফুটবলারদের।এই কারণেই দল গঠনে তারুণ্যের উপরে জোর দিয়েছেন রিয়ালের যুব দলে মার্কোস আলন্সো, খুয়ান মাতাদের প্রাক্তন গুরু। লাল-হলুদের ফুটবলাররা ঘনিষ্ঠ মহলে বলেন, ‘‘ম্যানুয়েল এমনিতেই খুব কড়া ধাতের মানুষ। অনুশীলনে আরও ভয়ঙ্কর। প্রচণ্ড পরিশ্রম করান।’’
অষ্টম আইএসএলে কী ছকে চিমাদের খেলতে দেখা যাবে? জানা গিয়েছে ম্যানুয়েল কখনও ৪-৪-২, কখনও আবার ৪-৩-৩ ছকে দলকে খেলাচ্ছেন। যদিও লাল-হলুদ কোচ সব সময়ই বলেন, বিপক্ষের শক্তি ও দুর্বলতার উপরে নির্ভর করেই রণকৌশল চূড়ান্ত করেন। ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী যে পরিকল্পনা পরিবর্তন করতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা করবেন না, তাও জানিয়ে দিয়েছেন। এই কারণেই বিভিন্ন ছকে দলকে খেলাচ্ছেন তিনি। আজ, রবিবার গত বারের আইএসএল চ্যাম্পিয়ন মুম্বই সিটি এফসির বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরিকল্পনা রয়েছে ম্যানুয়েলের। পাশাপাশি, এই দ্বৈরথের চব্বিশ ঘণ্টা আগে তিনি ঘোষণা করে দিলেন অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়কের নামও। গোলরক্ষক অরিন্দম ভট্টাচার্য লাল-হলুদকে নেতৃত্ব দেবেন। ডিফেন্ডার টমিস্লাভ মার্সেলা সহ-অধিনায়ক। ম্যানুয়েল বলেছেন, ‘‘ওদের দু’জনের মধ্যেই নেতৃত্ব দেওয়ার দুর্দান্ত ক্ষমতা রয়েছে।’’
লাল-হলুদের স্পেনীয় কোচ সম্পর্কে আরও একটি আকর্ষণীয় তথ্য হল, দায়িত্ব নিয়েই তিনি ফুটবলারদের পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন— এক)তাঁর কাছে ফিটনেসই শেষ কথা। দলে কে তারকা, কে সদ্য যোগ দিয়েছেন, তা গুরুত্বহীন। দুই) অনুশীলনে কঠোর পরিশ্রম করতেই হবে। তিন) প্রথম একাদশে জায়গা পাওয়ার জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। চার) পরিস্থিতি যতই প্রতিকূল হোক, কোনও যুক্তি বা অজুহাত তিনি শুনবেন না। ফুটবলারদের নিজেদেরই সমস্যার সমাধান করতে হবে।
অষ্টম আইএসএলে এসসি ইস্টবেঙ্গলের প্রথম ম্যাচ ২১ নভেম্বর জামশেদপুর এফসির বিরুদ্ধে। গত মরসুমে নবম স্থানে শেষ করেছিলেন রফিকরা। রিয়ালের রণনীতিকে অস্ত্র করে ম্যানুয়েল ছবিটা বদলাতে পারেন কি না, এখন সেটাই দেখার।