হুঙ্কার: নিজের দ্বিতীয় গোলের পরে উল্লসিত মহম্মদ সালাহ (বাঁ দিকে)। ডাচ তারকা গাকপোকে নিয়ে উৎসব সতীর্থদের (ডান দিকে)। ছবি: রয়টার্স, টুইটার।
রবিবার অ্যানফিল্ড সাক্ষী থাকল গোল-ঝড়ের। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ খেতাবি দৌড়ে ঢুকে পড়া ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটড হারিয়ে গেল লিভারপুলের গোলের তাণ্ডবে। কোডি গাকপো, ডারউইন নুনেজ় এবং মহম্মদ সালাহ, লিভারপুল ত্রয়ীর দাপটেই শেষ হয়ে গেল এরিক টেন হ্যাগের দলের যাবতীয় স্বপ্ন।
কাতার বিশ্বকাপের অভিষেক ম্যাচেই তিনি নজর কেড়ে নিয়েছিলেন ফুটবলবিশ্বের। নেদারল্যান্ডসের নতুন তারা গাকপোর হাত ধরে ৪৩ মিনিটে প্রথম গোল লিভারপুলের। তার পরে ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়া লিভারপুল ফুটবলারদের আক্রমণের মুখে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় ম্যান ইউ রক্ষণ। যে ফুটবল দেখে প্রাক্তন ম্যান ইউ তারকা গ্যারি নেভিলের প্রতিক্রিয়া, ‘‘ম্যান ইউ ফুটবলাররা প্রমাণ করে দিল, এখনও ওদের খেলায় কতটা উন্নতির প্রয়োজন। না হলে লিভারপুলের মতো দলের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া যে কত কঠিন, এটা সম্ভবত এরিক টেন হ্যাগের চেয়ে ভাল কেউ বুঝবে না। এই বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা সত্যিই খুব কঠিন।’’
খেতাবি দৌড় থেকে অনেকটা পিছিয়ে পড়া লিভারপুলের কাছে এই ম্যাচ ছিল নিজেদের পায়ের নীচে মাটি ফিরে পাওয়ার। সেই লক্ষ্যে ম্যাচের শুরু থেকে প্রতিআক্রমণ নির্ভর ফুটবলেই ম্যান ইউ রক্ষণকে প্রবল চাপে ফেলে দিলেন সালাহরা। ডাচ তারকা গাকপো নিজের দ্বিতীয় গোল করেন ৫০ মিনিটে। তার আগেই অবশ্য চোট সারিয়ে ফেরা উরুগুয়ের নতুন আবিষ্কার নুনেজ় গোল করে যান। তিন গোলে পিছিয়ে পড়ার পরেই ম্যান ইউয়ের ফুটবল ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সালাহ জোড়া গোল করে ম্যান ইউকে শেষ করে দেয়। গাকপোর পরিবর্ত হিসেবে খেলতে নামা ব্রাজিলীয় তারকা রবের্তো ফির্মিনো গোল করেন ৮৮ মিনিটে।
কেউ কেউ রবিবার লিভারপুলের গোল-তাণ্ডবের মধ্যে খুঁজে পাচ্ছিলেন ২০১১ সালে ইপিএলে ম্যান ইউ-এর কাছে আর্সেনালের ৮-২ গোলে হারের সাদৃশ্য। পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৩১ সালে উলভসের বিরুদ্ধে ০-৭ গোলে ম্যান ইউয়ের হারের পরে ফের নতুন ভাবে এক লজ্জার অধ্যায় যুক্ত হল ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের ইতিহাসে। তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। পুরো ম্যাচে ম্যান ইউয়ের গোল লক্ষ্য করে আটটি শট নিয়েছিল লিভারপুল। তার মধ্যে গোল সাতটি!
২৫ ম্যাচে ৪৯ পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরেই থাকল ম্যান ইউ। সমসংখ্যক ম্যাচ খেলে ৪২ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচ নম্বরে উঠে এল লিভারপুল। দলের অবিশ্বাস্য জয় নিয়ে লিভারপুল ম্যানেজার য়ুর্গেন ক্লপের মন্তব্য, ‘‘ফুটবলারদের বলেছিলাম এই ম্যাচে নিজেদের উজাড় করে দিতে। এটা শুধুই একটা ম্যাচ নয়, তার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে দুই ক্লাবের সম্মান এবং ঐতিহ্যের প্রশ্নও। আমার বক্তব্যের মর্মার্থটা ফুটবলাররা বুঝতে পেরেছে। তার চেয়ে বড় আনন্দ আর কিছু হতে পারে না।’’
ম্যাচের পরে উল্লসিত লিভারপুল তারকা সালাহ বলে যান, ‘‘এমন একটা জয়ের পরে কোনও প্রতিক্রিয়াই পর্যাপ্ত নয়। সতীর্থদের কাছে আমার বার্তা থাকবে, মাথা ঠান্ডা রেখে বাকি ম্যাচগুলো খেলতে হবে। আশা করছি, এমন একটা জয়ের পরে দল আগের চেয়ে অনেক বেশি চাঙ্গা হয়ে উঠবে।’’ আর এক তারকা জর্ডান হেন্ডারসনের মন্তব্য, ‘‘নিঃসন্দেহে এমন একটা জয়ের উচ্ছ্বাস অন্য ধরনের হয়ে থাকে। তবে আমাদের পরের ম্যাচ নিয়ে এখন থেকেই মনঃসংযোগ করতে হবে।’’