ভারত কবে বিশ্বকাপ খেলবে গ্রাফিক: সনৎ সিংহ
বহু বছর আগে তৎকালীন ফিফা সভাপতি শেপ ব্লাটার এ দেশে এসে বলে গিয়েছিলেন, ‘ভারত ফুটবলের ঘুমন্ত দৈত্য’। সেই দৈত্যের ঘুম কবে ভাঙবে তা বলা মুশকিল। তবে এশিয়া মহাদেশের বাকি যে সব দৈত্যরা রয়েছে তাদের ঘুম যে প্রকৃত অর্থেই ভেঙেছে, তা এ বার বলা যায়। সোমবার রাতে পেরুকে হারিয়ে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করেছে অস্ট্রেলিয়া। ফলে এ বারের বিশ্বকাপেই প্রথম এশিয়া মহাদেশের ছ’টি দেশকে দেখা যাবে। আগে যে দৃশ্য কল্পনা করাই ছিল বিরল।
আয়োজক দেশ হিসাবে সবার আগে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করেছিল কাতার। বাকি চার দেশ হিসাবে সরাসরি যোগ্যতা অর্জন করেছে ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব এবং জাপান। প্লে-অফে জিতে টিকিট পেয়েছে অস্ট্রেলিয়াও। মহাদেশের প্রথম সারির সবক’টি দেশকেই দেখা যাবে বিশ্বকাপে। বলা বাহুল্য, লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকার থেকেও এশিয়ার বেশি দেশ খেলবে বিশ্বকাপে। সংখ্যার বিচারে ইউরোপের পরেই। এই তালিকায় ভারতকে দেখা যাবে কবে? আর কতদিন বিশ্বকাপে দেশকে দেখতে অপেক্ষা করতে হবে?
এআইএফএফ সভাপতি থাকাকালীন প্রফুল্ল পটেল বলেছিলেন, ২০২৬ বিশ্বকাপে নিশ্চয়ই খেলবে ভারত। তার মুখে এই কথা অবশ্য নতুন নয়। অতীতেও তিনি আশা করেছিলেন, ভারত ২০১৮, ২০২২ বিশ্বকাপে খেলবে। কর্তারা আসলে ফুটবল দলের কোনও খবরই রাখেন না। এমনিতেই ফুটবল সংস্থার সদর দপ্তরে মহাবিশৃঙ্খলা। পটেল নিজেই পদচ্যুত। নতুন যিনি আসবেন তিনি ফুটবলকে কোন দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন, সেটাই বড় প্রশ্ন। ফিফা ক্রমতালিকায় ভারত এখন ১০৬ নম্বরে। এশিয়ান কাপে পরপর দু’বার যোগ্যতা অর্জন করলেও, আরও বড় মঞ্চে সবাই দেখতে চান ভারতকে।
বিশ্বকাপ যে দেশে, সেই কাতারে গিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ড্র করে এসেছিল ভারত। ঘরের মাঠে অল্পের জন্য হেরেছিল। কিন্তু বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনের থেকে অনেক দূরে তারা শেষ করে। জাপান, কোরিয়া, সৌদি আরব দূরের কথা। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিকে হারাতেই ভারতের অবস্থা কাহিল হয়ে যায়। একটু এগিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির মুখোমুখি হলেই হারতে হয়। গত বারের এশিয়ান কাপে বাহরিন, আমিরশাহির বিরুদ্ধে হারলেও লড়াই করেছিল ভারত। তবে ইগর স্তিমাচের ভারত যে ভাবে রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলে, তাতে খুব ভাল ফলের আশা এখন না করাই ভাল।
এশিয়ার এই দাপটকে অনেকেই বলছেন নতুন সূর্যোদয়। ২০০২ সালে জাপান-কোরিয়ার পর এই প্রথম এশিয়ায় কোনও ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন করা হচ্ছে। এশিয়া মানেই যে আলুভাতে প্রতিপক্ষ, আর এমন মনে করা যাবে না। গত বিশ্বকাপে জার্মানিকে ২-০ হারিয়ে ছিটকে দিয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়া। দুর্ধর্ষ ফুটবল খেলে শেষ ষোলোয় পৌঁছে গিয়েছিল জাপান। কিছুদিন আগেও প্রদর্শনী ম্যাচে চিলিকে হারিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। অল্পের জন্য ব্রাজিলের কাছে হেরেছে জাপান।
অনেকে মনে করছেন, এশিয়া এখন পরের পর্বে পৌঁছে গিয়েছে। ভয় পাওয়া নয়, এ বার তাদের ভয় দেখানোর পালা। তালিকায় ভারত কবে ঢুকবে, এটাই এখন দেখার।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।