চিন্তিত হুগো লরিস। ছবি সংগৃহীত।
করিম বেঞ্জেমা শুধু বিশ্বকাপ থেকে ছিটকেই যাননি, সতীর্থদের মনোবলও যেন ভেঙে দিয়ে গিয়েছেন। কাতারের আল ওয়াখরায় আল জানুয়ুব স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে সাংবাদিক বৈঠকে গত বারের বিশ্বকাপজয়ী দলের অধিনায়ক হুগো লরিস যেভাবে এলেন, তাঁর শরীরীভাষাই বলে দিচ্ছিল সুর যেন কেটে গিয়েছে ফরাসি শিবিরে। বললেন, ‘‘করিমের ছিটকে যাওয়া আমাদের দলের পক্ষে বিরাট ক্ষতি। ওর মতো অভিজ্ঞ স্ট্রাইকারের অভাব পূরণ করা সহজ নয়।’’
হুগো যখন সাংবাদিক বৈঠক করছিলেন, মঞ্চের বাইরে থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে শুনছিলেন কোচ দিদিয়ে দেশঁ। কাতার বিশ্বকাপ অভিযানের আগে অধিনায়কই যদি এ ভাবে ভেঙে পড়েন, তা হলে বাকি ফুটবলারদের মনের অবস্থা কী হবে, তা ভেবেই সম্ভবত আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। কথা শেষ করেই হুগো এক বার বাঁ দিকে মাথা ঘোরালেন। তার পরেই বলতে শুরু করলেন, ‘‘করিমের এ ভাবে ছিটকে যাওয়াটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঠিকই, কিন্তু তার জন্য ভেঙে পড়লে চলবে না। দলের বাকিদের দায়িত্ব নিতে হবে ওর শূন্যস্থান পূরণ করার জন্য। আমি আশাবাদী, ছেলেরা সেই দায়িত্ব সফল ভাবেই পালন করতে পারবে।’’ ফরাসি অধিনায়কের বদলে যাওয়া মুখের অভিব্যক্তিই বলে দিচ্ছিল, কোচ একেবারেই ভাল ভাবে নেননি ম্যাচের আগে এ ভাবে নিজেদের দুর্বলতা প্রকাশ করে ফেলা। ফ্রান্সের এক সাংবাদিক বললেন, ‘‘দেশঁ খুবই কড়া মানসিকতারকোচ। সমস্যা যতই থাক, তা বাইরে কখনও প্রকাশ করবেন না। করিমের ছিটকে যাওয়া নিয়ে হুগো যে ভাবে সাংবাদিক বৈঠকে কান্নাকাটি শুরু করেছে, তা দেশঁ কখনওই মেনে নেবেন না। সেটা উনি বুঝিয়েও দিয়েছেন অধিনায়ককে। এই কারণেই হুগো অবস্থা সামাল দেওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করে চলেছে।’’
সমকামীদের সমানাধিকারের দাবিকে সমর্থন করে সাতটি দেশের অধিনায়করা ‘ওয়ান লাভ’ বাহুবন্ধনী পরে বিশ্বকাপের ম্যাচে মাঠে নামার কথা ঘোষণা করেছিলেন। এই তালিকায় ছিলেন ফ্রান্সের অধিনায়কও। সোমবারের সাংবাদিক বৈঠকে এই প্রসঙ্গে তাঁকে প্রশ্ন করায় হুগো বলেন, ‘‘ফিফা এই ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেদিকেই তাকিয়ে আছি।’’ এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কাতার সরকারের চাপে বিশ্বফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা নিষেধাজ্ঞা জারি করে সমকামীদের সমর্থনে বাহুবন্ধনী পরে মাঠেনামার উপরে।
প্রশ্ন উঠছে, মাঠে করিমের শূন্যস্থান পূরণ কাকে দিয়ে করাবেন ফরাসি কোচ? আতোয়াঁ গ্রিজ়ম্যান দীর্ঘ দিন ধরেই ছন্দে নেই। অলিভিয়ের জিহুর বয়স এখন ৩৬। দেশঁ-র একমাত্র ভরসা কিলিয়ান এমবাপে-ই। সপ্তাহখানেক আগেও ফরাসি কোচের প্রধান চিন্তা ছিল বিশ্বকাপে প্রথম একাদশে রাইট উইং ব্যাক হিসেবে কাকে খেলাবেন, তা নিয়ে। পল পোগবা, এনগোলো কান্তে থেকে করিম বেঞ্জেমা— চোট পেয়ে একাধিক তারকার বিদায়ে ফরাসি কোচের পরিকল্পনা অনেকটাই ধাক্কা খেয়েছে। জোড়াতালি দিয়ে রক্ষণের দুর্বলতা হয়তো তিনি ঢেকে ফেলতে সফল হবেন। মাঝমাঠ ও আক্রমণ ভাগের সমস্যা কী ভাবে দূর করবেন? করিমের বিকল্প হিসেবে দেশঁ-কে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের অ্যান্টনি মার্শিয়ালকে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন ফরাসি ফুটবল সংস্থার কর্তারা। তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। সাংবাদিক বৈঠকে বসে ১৯৯৮ বিশ্বকাপ জয়ী ফ্রান্স দলের প্রাক্তন অধিনায়ক বললেন, ‘‘করিমের ছিটকে যাওয়া অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঠিকই, তা সত্ত্বেও আমাদের দলে আরও ২৫ জন ফুটবলার রয়েছে। আমি মনে করি, ওরা সকলেই যোগ্য। এই কারণেই করিম ছিটকে যাওয়া সত্ত্বেও নতুন কাউকে ডাকার প্রয়োজনঅনুভব করিনি।’’
এর পরেই অস্ট্রেলিয়ার এক সাংবাদিক দেশঁকে জিজ্ঞেস করে বসলেন, ‘‘বেঞ্জেমা, পোগবা ছিটকে গিয়েছেন। এমবাপের বয়স মাত্র ২৩। এই দল নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর ব্যাপারে আপনি কতটা আশাবাদী?’’ বিশ্বকাপজয়ী ফরাসি কোচের হুঙ্কার, ‘‘আমরা যাত্রা শুরু করব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য। গত বার লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। এ বারও পুনরাবৃত্তি চাই।’’ যোগ করলেন, ‘‘এমবাপে শিশু নয়। চার বছর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপের সময়ও যথেষ্ট পরিণত ছিল।এমবাপেকে নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। ও নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন।’’