গত সেপ্টেম্বর থেকে ইরানে তীব্র হয়েছে হিজাব বিরোধী আন্দোলন। ছবি: টুইটার।
হিজাব বিরোধী আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা ইরানের আলি দায়ি। তার পর থেকে প্রাক্তন ফুটবলার ইরান সরকারের কড়া নজরে রয়েছেন। রেয়াত করা হচ্ছে না তাঁর স্ত্রী এবং কন্যাকেও। অভিযোগ, দুবাই যাওয়ার পথে তাঁদের হেনস্থা করা হয়েছে।
সোমবার দুবাই যাওয়ার কথা ছিল আলির স্ত্রী এবং কন্যার। তাঁদের যেতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। আলি জানিয়েছেন, তেহরান থেকে বিমানে ওঠার সময় সমস্যা হয়নি। বিমান ছাড়ার পরে টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। দুবাইয়ে যাওয়ার পথে পারস্য উপসাগরের কিশ দ্বীপে নামানো হয় বিমানটিকে। অথচ সেখানে বিমানটির নামার কথা ছিল না।
আলি বলেছেন, ‘‘সব আইন মেনে তেহরান বিমানবন্দর থেকে দুবাইয়ের বিমানে উঠেছিল আমার স্ত্রী এবং মেয়ে। কিন্তু ওদের মাঝ পথে কিশ দ্বীপে নামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কর্তৃপক্ষ। কথা বলার পর মেয়েকে ছেড়ে দেওয়া হলেও ততক্ষণে বিমানের দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কয়েক দিনের জন্য ওরা দুবাই যাচ্ছিল। আগামী সপ্তাহেই দেশে ফিরে আসার কথা ছিল।’’ তাঁর দাবি, ‘‘বিমানের গতিবিধি যে অ্যাপে দেখা যায়, তাতে দেখেছি মাহান এয়ারের বিমানটিকে দু’ঘণ্টা কিশ দ্বীপে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।’’ উল্লেখ্য, বছরের শুরুতে আলি দেশে ফেরার পর তাঁর পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়। দেশ ছাড়ার অনুমতি নেই ইরানের প্রাক্তন ফুটবল কোচের।
আলি অভিযোগ করলেও মাহান এয়ার কর্তৃপক্ষ বা ইরান প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই ঘটনা সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। ইরানের একটি সংবাদ সংস্থার দাবি, সরকার বিরোধী আন্দোলন সমর্থন করার জন্য ডিসেম্বরের শুরুতে আলির স্ত্রীর দেশ ছাড়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল প্রশাসন। ওই সংবাদ সংস্থার দাবি অনুযায়ী নিরাপত্তা কর্মীদের অভিযোগ, আলির স্ত্রী নির্দেশিকা না মেনে বিদেশে যাচ্ছিলেন। দুবাই থেকে মেয়ের সঙ্গে তাঁর আমেরিকা চলে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। আলির স্ত্রী এবং কন্যার নাম প্রকাশ করা হয়নি।
ইরানের সর্বকালের সেরা ফুটবলার বলা হয় আলিকে। দেশের হয়ে ১৪৮টি ম্যাচে ১০৯টি গোল করেছিলেন তিনি। সব থেকে বেশি আন্তর্জাতিক গোলের বিশ্বরেকর্ড দীর্ঘ দিন তাঁর দখলে ছিল। ২০০৬ সালে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নিয়েছিলেন আলি। কিছু দিন আগে তাঁকে ছাপিয়ে গিয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। এখনও পর্যন্ত দেশের হয়ে ১৯৬টি ম্যাচে ১১৮টি গোল করেছেন সিআর৭। আলির পরেই রয়েছেন লিয়োনেল মেসি। বিশ্বকাপ পর্যন্ত দেশের হয়ে ১৭২টি ম্যাচে এলএম১০-র গোল সংখ্যা ৯৮। অর্থাৎ, আলির থেকে এখনও ১১টি গোলে পিছিয়ে রয়েছেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক।
ইরানের সর্বকালের সেরা ফুটবলার বলা হয় আলিকে। ছবি: টুইটার।
শুধু আলি বা তাঁর পরিবারই নয়, ইরানের বহু খ্যাতনামী ব্যক্তি সরকার বিরোধী আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সরকারের বেঁধে দেওয়া পোশাকবিধির বিরুদ্ধে গত দু’মাস ধরে আন্দোলন চালাচ্ছিলেন ইরানের মহিলারা। পথে নেমে হিজাব ছিঁড়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন হাজার হাজার ইরানি মহিলা। মেয়েদের উপর প্রশাসনের নীতিপুলিশির বিরুদ্ধে চলছিল একটানা আন্দোলন।
ঘটনার শুরু গত ১৬ সেপ্টেম্বর। সরকারি পোশাকবিধি না মানায় ইরানের রাজধানী তেহরানে এক তরুণী— মাহাসা আমিনিকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল ইরানের নীতিপুলিশের দল। হেফাজতে থাকাকালীন মৃত্যু হয় সেই তরুণীর। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে ইরানের পথে। মহিলারা পথে নামেন প্রশাসনের এই নীতিপুলিশির বিরুদ্ধে। হিজাব বিরোধী তীব্র আন্দোলন শুরু হয় ইরানে।