শুক্রবার গোলের পর নন্দকুমার। ছবি: এক্স।
শুক্রবার ম্যাচের শুরু থেকে সে ভাবে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না তাঁকে। মাত্র কয়েকটি আক্রমণ। বল নিয়ে ওঠা। এ ছাড়া আর কোনও গতিবিধি চোখে পড়েনি। কিন্তু নায়ক তো তাঁরাই হন, যাঁরা আসল সময়ে জ্বলে উঠতে পারেন। সেটাই করলেন নন্দকুমার সেকার। অনেক স্বপ্ন নিয়ে যোগ দিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গলে। ছোট থেকে চেয়েছিলেন ডার্বিতে গোল করতে। গত কয়েক মাসে দু’বার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। শুক্রবার জোড়া গোলে ক্লেটন সিলভা নজর কেড়ে নিলেও আলাদা করে তাই প্রশংসা প্রাপ্য নন্দকুমারেরও।
গত পাঁচ মাসে তিনটি ডার্বির মধ্যে দু’টিতে জিতল ইস্টবেঙ্গল। সেই দু’টিতেই গোল করেছেন নন্দকুমার। প্রথমটিতে টানা আটটি ডার্বিতে হারের পর জিতেছিল ইস্টবেঙ্গল। আর শুক্রবার তাঁর গোলে এগিয়ে গিয়েছিল তারা। ডার্বি এলেই নন্দকুমার জ্বলে ওঠেন কি না সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে।
ডুরান্ড কাপের সেই ডার্বির পরে নন্দকুমার আলাদা করে খুব বেশি ম্যাচে চোখে পড়েননি। কিন্তু কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাতের অগাধ আস্থা আছে তামিলনাড়ুর এই ফুটবলারের উপর। ডুরান্ডের সেই ডার্বিতে ডান দিক থেকে খেলেছিলেন নন্দ। ধীরে ধীরে তাঁকে দুই উইংয়েই পারদর্শী করে তুলেছেন কুয়াদ্রাত। সময় মতো উইং অদল-বদল বিভ্রান্ত করে দিচ্ছেন ফুটবলারদের।
সাধারণত ইস্টবেঙ্গলে বাঁ দিক থেকে আক্রমণে ওঠেন নাওরেম মহেশ। কিন্তু তিনি জাতীয় দলে ব্যস্ত থাকায় সেই দায়িত্ব বর্তেছে নন্দকুমারের উপর। কোচের আস্থার মান রেখেছেন তিনি। বাঁ দিক থেকে বেশ কয়েক বার আক্রমণে উঠেছেন এ দিন। এক বার গোল করার খুব কাছাকাছি পৌঁছে যান। কিন্তু জালে বল জড়ানো হয়নি।
সেই আক্ষেপ মিটে যায় দ্বিতীয়ার্ধে। ডান দিকে বল পেয়ে গিয়েছিলেন ক্লেটন সিলভা। তিনি কিছুটা এগিয়ে বাঁ পায়ে শট করেন। অর্শ আনোয়ারকে পরাস্ত করে বল বারে লাগে। ক্লেটনকে অনুসরণ করে গোলের কাছেই উঠে আসেন নন্দ। বল বারে লেগে ফিরতেই ফাঁকা জালে বল জড়িয়ে দেন। গোল করেই দৌড়ে যান লাল-হলুদ সমর্থকদের দিকে। শুক্রবারের পর থেকে তাঁদের কাছে আরও আপন হয়ে উঠেছেন তিনি।
প্রথম ডার্বির সেই গোল নিয়ে গত ডিসেম্বরে আইএসএলের ওয়েবসাইটে এক সাক্ষাৎকারে নন্দকুমার বলেছিলেন, “ওই গোলটা করে দারুণ অনুভূতি হয়েছিল। কারণ, গোলটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং আমাদের তিন পয়েন্ট এনে দিয়েছিল। আমার কেরিয়ারের অন্যতম সেরা মুহূর্ত ছিল সেটা। ডার্বি ম্যাচটা অসাধারণ হয়েছিল। সে দিন যুবভারতীর পরিবেশ একেবারে অন্য রকম ছিল। গোটা গ্যালারি সমর্থকে ঠাসা ছিল। চার বছর পর ডার্বি জেতায় সমর্থকেরা সবাই খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন। সে দিন যা ভালবাসা পেয়েছিলাম তা সারা জীবন মনে থাকবে।”
সেই ভালবাসা যে আরও বাড়বে তা নিঃসন্দেহে বলাই যায়। শুক্রবার ইস্টবেঙ্গলের খেলা দেখতে যাঁরা ভুবনেশ্বরে গিয়েছিলেন এবং যাঁরা যেতে পারেননি, দু’ধরনের সমর্থকদের কাছেই এখন চোখের মণি এখন নন্দকুমারই।