মোহনবাগান সমর্থকেরা। ছবি: এক্স।
রবিবার সন্ধ্যা ৬টা। ধর্মতলা থেকে ভিড়টা সবে হালকা হয়েছে। একের পর এক বাস বেরোচ্ছে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, লেনিন সরণী দিয়ে। কেউ চলে যাচ্ছে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর দিকে। তৃণমূল ‘জনগর্জন সভা’র চিহ্ন তখনও চারিদিকে বেশ স্পষ্ট। তখনও বোঝা গেল না, শহর তথা দেশের সবচেয়ে বড় ফুটবল ম্যাচটা রয়েছে কয়েক কিলোমিটার দূরে।
রেড রোড ধরে সোজা এগনোর পর বাঁ দিকে গিয়ে মা উড়ালপুল ধরে কিছুটা এগিয়ে যেতে দেখা গেল দু’টি ট্রাক। দু’টিই মোহনবাগানের। ‘শুনে যা শুনে যা রে খোলা রেখে কান’ গানের ধ্বনিতে মুখরিত চারপাশ। প্রথম ট্রাকের পর কিছুটা এগিয়ে আরও একটা ট্রাক দেখা গেল। কিন্তু লাল-হলুদ পতাকা বা জার্সিধারী চোখে পড়ল না কোথাও। মা উড়ালপুল থেকে বাইপাসে নামার সময় কিছুটা ইস্টবেঙ্গল সমর্থককে ইতিউতি দেখা গেল ঠিকই। কিন্তু চোখে পড়ল মোহনবাগান সমর্থকদের ভাল রকম ভিড়। ধারে-ভারে ইস্টবেঙ্গলকে নিঃসন্দেহে ডার্বিতে নামার আগে কয়েক গোল দেওয়ার মতোই ব্যাপার। ইস্টবেঙ্গলের ‘জনগর্জন’ শোনা না গেলেও মোহনবাগান টেক্কা দিল সমর্থনের বিচারে।
খেলা শুরুর আগে মাঠের বাইরে মোহনবাগানের সমর্থকেরা। — নিজস্ব চিত্র।
রবিবাসরীয় ডার্বিতে এ রকমই জিনিস দেখা গেল। মোহনবাগানের এটি ‘অ্যাওয়ে’ ম্যাচ। ফলে তাদের ঢুকতে হচ্ছিল ৩এ, ৪ এবং ৪এ গেট দিয়ে। সন্ধ্যা ৭টার সময় সেখানে অন্তত হাজার পাঁচ-ছয়েক সমর্থকের ভিড়। যত সময় বাড়ল ভিড়ের পরিধিও তত বাড়ল। তার মধ্যেই একের পর এক ট্রাক এসে নামছিল এবং সেখান থেকে নামছিলেন আরও সমর্থক।
ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে ইস্টবেঙ্গলের গ্যালারি। — নিজস্ব চিত্র।
ইস্টবেঙ্গলের গেটের দিকে সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র। সমর্থক রয়েছেন বটে। কিন্তু বোঝাই যাচ্ছে না এটা তাদের ‘হোম’ ম্যাচ। এমনকি, টিকিটের দামও মোহনবাগানের থেকে বেশ খানিকটা কমই। তবু ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের ডার্বি নিয়ে সে রকম উত্তাপই দেখা গেল না।
গত বারের ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলের ‘অ্যাওয়ে’ ম্যাচ হওয়া সত্ত্বেও উন্মাদনা ছিল অনেক বেশি। তখন সদ্য সুপার কাপ জেতা ইস্টবেঙ্গল স্বপ্ন দেখছিল আরও এক বার মোহনবাগানকে হারানোর। কিন্তু গত এক মাসে পরিস্থিতি পুরো পাল্টে গিয়েছে। ইস্টবেঙ্গল ক্রমশ পয়েন্ট তালিকায় নীচে নেমেছে এবং মোহনবাগান উপরে উঠে এসেছে। এই ম্যাচের আগে পর্যন্ত মোহনবাগান তিনে এবং ইস্টবেঙ্গল দশে। সেই পার্থক্য সমর্থকদের ভিড়েও স্পষ্ট।
মাঠের আশেপাশে যাঁরা জার্সি বিক্রি করেন তাঁদের মধ্যেও মোহনবাগানের সমর্থকদের ভিড়। নিউ ব্যারাকপুর থেকে আসা বিক্রেতা সচিন রায় জানালেন, প্রায় দু’-তিন হাজার টাকার জার্সি, স্কার্ফ বিক্রি করে ফেলেছেন। কিন্তু সিংহভাগই মোহনবাগানের। ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের আগ্রহ কম। বাকি জায়গাগুলিতেও মোটামুটি একই দৃশ্য।
ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে মোহনবাগানের গ্যালারি। — নিজস্ব চিত্র।
ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, অনেকেই ডার্বি দেখতে মাঠে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ম্যাচের সময় এক ঘণ্টা পিছিয়ে যাওয়ার কারণে পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। অনেকেই বারুইপুর, সোনারপুর, মেদিনীপুরের মতো দূরদূরান্ত থেকে খেলা দেখতে আসেন। খেলা শেষের পর বাড়ি ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণেই অনেকে আসতে চাননি। এমনিতে রাত ৯টার পর বাইপাসে যানবাহনের সংখ্যা কমে যায়। রবিবারের ম্যাচ শেষ হতে হতে প্রায় ১০.৩০ বাজবে। তাই সেটাও মাঠবিমুখ থাকার একটা কারণ বলে জানা গিয়েছে।