জুয়ান ফেরান্দো। —ফাইল চিত্র
আজ পর্যন্ত কোনও দিন তাঁর মুখ থেকে বিতর্কিত কথা বেরোয়নি। এমন মন্তব্য করেননি যা থেকে মুচমুচে শিরোনাম তৈরি হয়। মাঠে যতই সময়ে সময়ে তাঁর বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি দেখা যাক, বাইরে এলেই তিনি ভদ্র, নম্র একজন কোচ। ডার্বি এবং ডুরান্ড কাপ জিতেও মোহনবাগানের কোচ জুয়ান ফেরান্দোর মধ্যে কোনও হেলদোল নেই। ফুটবলার রেজিস্ট্রেশন নিয়ে অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে একটু বিরক্ত দেখাল তাঁকে। বাকি সময় শান্ত। কখনও মুখ গম্ভীর, কখনও হালকা হাসির রেখা। ট্রফি জিতে মাথার উপর থেকে একটা চাপ যে নেমে গিয়েছে, সেটা অস্বীকার করতে পারবেন না ফেরান্দো।
প্রথমেই তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই ডার্বি জয়টাই কি মোহনবাগানের কোচ হিসাবে সেরা? সঙ্গে সঙ্গে ফেরান্দোর উত্তর, “এটা বলা যাবে না। কারণ গোটা প্রতিযোগিতাতেই অনেক কঠিন দলের বিরুদ্ধে খেলেছি আমরা। মুম্বই সিটি, এফসি গোয়া, আজ ইস্টবেঙ্গল— কারও বিরুদ্ধেই জেতা সহজ হয়নি। নিজেদের বার বার কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে হয়েছে। তবে আগেও বলেছি এটা প্রাক মরসুম প্রস্তুতি। খেলোয়াড়েরা চাপের মুখে নিজেদের সেরাটা দিয়েছে। এখনও উন্নতির অনেক জায়গা রয়েছে।”
সুস্থ থাকলেও জেসন কামিংসকে প্রথম একাদশে রাখেননি ফেরান্দো। দ্বিতীয়ার্ধে তাঁকে নামানোর পর গোলের পাসটি এল অস্ট্রেলীয় ফুটবলারের পা থেকেই। কেন দেরিতে নামানো হল তাঁকে? ফেরান্দোর উত্তর, “এই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি কৌশলগত। ও টানা কয়েকটা ম্যাচে ৯০ মিনিট খেলেছে। তাই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সবাইকেই খেলাতে হত। আমি মনবীর, লিস্টনকেও আরও পরে নামাব ভেবে রেখেছিলাম। কিন্তু অনিরুদ্ধ লাল কার্ড দেখার পর পরিকল্পনা বদলাতে হল।”
দশ জনে হয়ে যাওয়ার পরে কোনও দল ডার্বির মতো এত গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে জিতেছে, এমন উদাহরণ খুব বেশি নেই। কয়েক জন ফুটবলারকে বদলেই বাজিমাত করে গেলেন ফেরান্দো। কী বলেছিলেন ফুটবলারদের? স্প্যানিশ কোচের উত্তর, “দলকে একটা কথা সব সময়েই বলি, কঠিন সময়েই নিজেদের সেরাটা বের করে আনতে হবে। রোজ বলার কারণে এ রকম মুহূর্তে কী করতে হবে সেটা ওরা বুঝে গিয়েছে। তাই আমার কাজ ছিল স্রেফ কৌশলের ব্যাপারটা ঠিক রাখা। বাকিটা ফুটবলারেরাই জানত যে কাকে কী করতে হবে। ও রকম পরিস্থিতিতে থেকেও ম্যাচ বের করার জন্য গোটা কৃতিত্ব দলের।”
কিন্তু ফেরান্দোর মতো, অনিরুদ্ধকে লাল কার্ড দেখানোর ক্ষেত্রে রেফারি একটু কড়া মনোভাবই নিয়েছেন। তাঁর কথায়, “মানছি অনিরুদ্ধ দ্বিতীয়ার্ধে একটু ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল। তাই সিভেরিয়ো ও ভাবে বলটা পাওয়ায় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি। কিন্তু রেফারি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এক বার ভেবে দেখলে পারতেন। তবে অনিরুদ্ধকে এখনও উন্নতি করতে হবে। আমার বিশ্বাস খুব দ্রুত ও সেটা করে ফেলবে।”
এর পরেই প্রশ্ন ওঠে বাড়তি চার জন ফুটবলার নথিবদ্ধ করানোর ব্যাপারে। বলেছেন, “দলের অনূর্ধ্ব-২৩ ফুটবলারেরা চলে গিয়েছে। আমাদের হাতে আর কোনও বিকল্প ছিল না। তা ছাড়া এটা যত দূর জানি নিয়মের মধ্যেই রয়েছে। নিয়ম ভেঙে কোনও কাজ করিনি। আমার মতে, উনিও (ইস্টবেঙ্গল কোচ) নিয়মটা পড়ে দেখলে পারতেন। যদি সে রকমই কিছু হত তা হলে আয়োজকরা শাস্তি দিতে পারতেন। তারা তো সে রকম কিছু করেননি। আমার মনে হয় আলোচনাটা ফুটবলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা ভাল।”
ডার্বি মিটতেই ফেরান্দোর নজর ঘুরে গিয়েছে এএফসি কাপে। এই মাসেই গ্রুপ পর্ব শুরু হচ্ছে। প্রথমে ওড়িশার বিরুদ্ধে খেলতে হবে তাঁদের। এখন থেকেই সেই প্রস্তুতি শুরু করে দিতে চান। সামনে আরও বড় লক্ষ্য, আইএসএল ট্রফি ধরে রাখা। ফেরান্দো মগ্ন নতুন লক্ষ্যে।
ডার্বির একমাত্র গোল যাঁর পা থেকে এসেছে, সেই দিমিত্রি পেত্রাতোস ম্যাচের পর আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন। ২৫ গজ একা বল টেনে নিয়ে গিয়ে গোল করার পরে হোর্ডিং টপকে যুবভারতীর ট্র্যাক ধরে সোজা দৌড় দিয়েছিলেন মোহনবাগান গ্যালারির দিকে। সেই সেলিব্রেশন নিয়ে বললেন, “আসলে তখন এতটাই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম যে কী করছি নিজেই জানতাম না। মনে হয়েছিল নিজের দলের সমর্থকদের সঙ্গে এই সেলিব্রেশন করা দরকার। তাই ওই দিকে ছুটে গিয়েছি।”