শনিবার কামিংসদের মুখে কি এই হাসি থাকবে? ছবি: টুইটার।
আগের ম্যাচে মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে দলের তিন নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় লাল কার্ড দেখে পরের ম্যাচ থেকে ছিটকে গিয়েছেন। পাশাপাশি রয়েছে একাধিক ফুটবলারের চোট-আঘাত। শনিবার গোয়ার বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে কী করবে মোহনবাগান, তাই ভেবে ঘুম উড়েছে সমর্থকদেরই। অথচ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে কোচ জুয়ান ফেরান্দো। কার্ড বা চোট, কিছু নিয়েই দুশ্চিন্তা করতে রাজি নন তিনি। ভরসা রাখছেন তরুণ ফুটবলারদের উপরেই।
মরসুমের শুরু থেকেই চোট-আঘাতে জর্জরিত ছিল মোহনবাগান শিবির। স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছিল গত কয়েকটি ম্যাচে। আহত খেলোয়াড়রা ক্রমশ ফিরে আসছিলেন। তার মধ্যেই বিপত্তি। গত ম্যাচে দলের তিন জন নির্ভরযোগ্য ফুটবলার লাল কার্ড দেখায় গোয়া ম্যাচ থেকে ছিটকে গিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে উইঙ্গার লিস্টন কোলাসো ছাড়া বাকি দু’জনই রক্ষণের ভরসা। একজন আশিস রাই, অন্য জন হেক্টর ইউস্তে। এই অবস্থায় গোয়ার ফুটবলারদের আটকাবেন কে, সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
তবে ম্যাচের আগের দিন আত্মবিশ্বাসী গলায় ফেরান্দো বললেন, “আমাদের রক্ষণে কোনও সমস্যা হবে না। অন্য পরিকল্পনা করে রেখেছি। সমস্যা হল, কম সময় পেয়েছি। সমস্যার সমাধান করাই আমাদের কাজ। আমি উদ্বিগ্ন নই।”
বিকল্প ডিফেন্ডার হিসেবে মোহনবাগানের দলে রবি রানা ও সুমিত রাঠি রয়েছেন। কিন্তু দু’জনেই এ বারের আইএসএলে মাত্র আট মিনিট করে মাঠে থেকেছেন। শনিবারের ম্যাচে তাঁদের উপরেই আস্থা রাখছেন ফেরান্দো। বললেন, “রানা, সুমিত মাজিয়ার বিরুদ্ধে খেলেছে। কলকাতা লিগ, ডুরান্ড কাপে খেলেছে। প্রায় আড়াই বছর ধরে আমার নজরে রয়েছে। ওদের উপরে আমার যথেষ্ট ভরসা আছে। গত মরসুমে সুমিত কোনও ম্যাচেই তেমন খেলেনি। কিন্তু ফাইনালে খেলেছিল। সুযোগ পেলে ওরাও দলকে সাহায্য করতে প্রস্তুত। আগে কত ক্ষণ খেলেছে, সেটা বড় কথা নয়। ওদের আরও সময়, আত্মবিশ্বাস দেওয়া প্রয়োজন।”
প্রতিপক্ষ এফসি গোয়া এখনও পর্যন্ত আইএসএলে অপরাজিত। গত পাঁচটি ম্যাচে কোনও গোল খাননি সন্দেশ জিঙ্ঘনরা। এই গোয়াকেই আগে কোচিং করিয়েছেন ফেরান্দো। তিনি প্রতিপক্ষ দল নিয়ে বলেছেন, “গোয়া শুরুটাই করেছে খুব ভাল। এই মরসুমে কয়েক জন ভাল খেলোয়াড়কে সই করিয়েছে। নিঃসন্দেহে আমাদের কাছে ম্যাচটা কঠিন। তবে এটা বড় চ্যালেঞ্জ। এই ধরনের দলের বিরুদ্ধে নামলে নিজেদের ভাল পারফরম্যান্স দেখানোর সুযোগ পাওয়া যায়। তবে এই পরিস্থিতিতে প্রতিপক্ষের চেয়ে নিজেদের নিয়েই বেশি ভাবছি আমরা।”
দলে চোট বা কার্ড সমস্যা থাকলেও জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবেন না বলেই জানালেন ফেরান্দো। তাঁর কথায়, “আমরা বড় ক্লাব। সব ম্যাচেই তিন পয়েন্টের লক্ষ্যে নামি। আমাদের মানসিকতাও সে রকমই থাকে। এক পয়েন্ট পেলে খুশি হই না। ঘরের মাঠে খেলতে নামছি। জানি পরিস্থিতি কঠিন। কিছু খুঁটিনাটি ব্যাপারে পরিবর্তন করতে হবে। একটা অন্য প্রথম একাদশ মাঠে নামাতে হবে। তবে এ সব ফুটবলের অঙ্গ। কার্ড সমস্যা বা চোট-আঘাত থাকবেই। সেটা সমাধান করতে হবে আমাদেরই।”
দুই চোট পাওয়া ফুটবলার সাহাল আব্দুল সামাদ ও আনোয়ার আলির এখনকার অবস্থা জানতে চাইলে ফেরান্দো বলেছেন, “সাহালের চোট গুরুতর। অন্যদের মতো ও-ও চিকিৎসাধীন রয়েছে। তবে গোয়া ম্যাচের আগে আমাদের হাতে সময় রয়েছে। কাল সকালে দেখব, কে কী অবস্থায় রয়েছে। তার পরে ঠিক করা যাবে, কাদের খেলানো যাবে, কাদের খেলানো যাবে না। যদি জোর করে চোট পাওয়া ফুটবলারদের খেলাতে চেষ্টা করি, তা হলে ক্ষতি হতে পারে। আনোয়ারের সেরে ওঠার প্রক্রিয়া চলছে। ওর পক্ষে দ্রুত মাঠে ফেরা কঠিন।”
আগের ম্যাচে কার্ডের ছড়াছড়ি নিয়ে এ দিনও কথা বলেছেন ফেরান্দো। মোহনবাগান কোচের কথায়, “রেফারির সিদ্ধান্ত আমাদের হাতে নেই। যেগুলো রয়েছে, সেগুলো নিখুঁত ভাবে করতে চাই। ছেলেদের বলে দিয়েছি হলুদ কার্ড, লাল কার্ডের ভয়ে সাবধান হয়ে খেলার প্রয়োজন নেই। তবে আমাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কার্ড বা চোট-আঘাত হলে তার সমাধান তৈরি করার জন্য তো আমরা আছিই। তা ছাড়া চোট সবসময় যে আমাদের দোষেই লাগে, তা নয়। সে ক্ষেত্রে রেফারির দায়িত্ব একজন খেলোয়াড়কে সুরক্ষা দেওয়া।”