যুবভারতীতে মহমেডানের বিরুদ্ধে মোহনবাগানের প্রথম গোল করার পরে উল্লাস জেমি ম্যাকলারেনের। ছবি: সমাজমাধ্যম।
মোহনবাগান — ৩ (ম্যাকলারেন, শুভাশিস, স্টুয়ার্ট)
মহমেডান — ০
মোহনবাগান ফিরল মোহনবাগানে। যে খেলা দেখার জন্য এত দিন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন সমর্থকেরা তা দেখা গেল শনিবার। যুবভারতীতে মিনি ডার্বিতে মহমেডানকে ৩-০ গোলে হারিয়ে দিল মোহনবাগান। তিনটি গোলই হয়েছে প্রথমার্ধে। অর্থাৎ প্রথম ৪৫ মিনিটেই জয় নিশ্চিত করে ফেলে মোহনবাগান। নজর কাড়লেন গ্রেগ স্টুয়ার্ট। দু’টি গোল করালেন। একটি গোল নিজে করলেন। এ দিনই মোহনবাগানের হয়ে প্রথম গোল করলেন বিশ্বকাপার জেমি ম্যাকলারেন। অপর গোলটি শুভাশিস বসুর। জয়ের ফলে এক লাফে আইএসএলের পয়েন্ট তালিকায় দশ থেকে চারে উঠে এল মোহনবাগান।
আইএসএলের প্রথম তিনটি ম্যাচে মোহনবাগানকে চেনা ছন্দে দেখা যায়নি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এ রভশানের বিরুদ্ধে হতাশার ড্র এবং আগের ম্যাচে বেঙ্গালুরুর কাছে তিন গোলে হারের পর ইস্টবেঙ্গলের মতো মোহনবাগানেও কোচ বিদায়ের রব উঠেছিল। তবে মোলিনা বুঝিয়ে দিলেন, একটু সময় দিলে এই দলটাকে সত্যিই দাঁড় করিয়ে দিতে পারেন। তাঁর হাতে যা যা অস্ত্র রয়েছে তা যে কোনও কোচের কাছেই স্বপ্ন। দরকার ছিল আত্মবিশ্বাসী এবং সাহসী ফুটবল খেলার। শনিবার সন্ধ্যায় মোহনবাগানের ফুটবলারেরা ঠিক সেটাই করলেন।
মহমেডানের কাছে এই হার এক ধাক্কায় আকাশ থেকে মাটিতে নেমে আসার মতোই। প্রথম দুই ম্যাচে নজর কাড়ার পর আগের ম্যাচে চেন্নাইয়িন এফসি-কে হারানোয় মহমেডানকে নিয়ে প্রত্যাশার পারদ তুঙ্গে উঠেছিল। কোচ আন্দ্রে চের্নিশভও মোহনবাগানকে হারানোর হুঙ্কার দিয়ে ফেলেছিলেন। তবে এ দিনের পর রুশ কোচ এ টুকু বুঝে গেলেন, আইএসএলে ঠিক কতটা কঠিন ম্যাচ খেলতে হয়। এ দিন ম্যাচের ফলাফলে যতটা না মোহনবাগানের কৃতিত্ব রয়েছে ততটাই রয়েছে মহমেডানের ব্যর্থতা। গোটা ম্যাচে কয়েক বার জ্বলে ওঠা ছাড়া মহমেডান ফুটবলারদের খুঁজেই পাওয়া যায়নি। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দাপট শুধু মোহনবাগানের। সুযোগ ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারলে ম্যাচটা তাদের পাঁচ-ছ’গোলে জেতার কথা।
মোহনবাগানের প্রথম একাদশে এ দিন চমক দেখা যায়। মোহনবাগানের কোচ হোসে মোলিনা আগের ম্যাচগুলিতে যাঁদের উপরে ভরসা রেখেছিলেন সেই দিমিত্রি পেত্রাতোস এবং জেসন কামিংসকে প্রথম একাদশে রাখেননি। প্রথম এগারোয় জায়গা দিয়েছিলেন জেমিকে। সঙ্গে স্টুয়ার্টকে খেলাচ্ছিলেন একটু পিছন থেকে। কেন তিনি মেলবোর্ন সিটিতে কিংবদন্তি হিসাবে খ্যাত তা আট মিনিটেই বুঝিয়ে দিলেন জেমি।
লিস্টন কোলাসোর কর্নার ভেসে এসেছিল মহমেডান বক্সের মাঝামাঝি। সেই বল পিছন দিকে হেড করেন স্টুয়ার্ট। দ্বিতীয় পোস্ট দাঁড়িয়ে থাকা জেমির হেড গোলার মতো গোলে ঢুকে যায়। মহমেডানের রক্ষণ আটকানোর চেষ্টাই করেনি জেমিকে।
ম্যাচের শুরু থেকেই প্রথম পাঁচ মিনিট মহমেডানের মধ্যে আগ্রাসন দেখা যাচ্ছিল। প্রথমার্ধ যত এগোল তত তারা গুটিয়ে গেল। চের্নিশভের ছেলেরা বুঝতেই পারছিলেন না কী ভাবে মোহনবাগানকে থামাবেন। জেমির গোলের পাঁচ মিনিট পরেই দ্বিতীয় গোল হতে পারত। বক্সের বাইরে থেকে লিস্টনের দূরপাল্লার শট কোনও মতে আঙুল ছুঁইয়ে বাইরে বার করেন মহমেডান গোলকিপার পদম ছেত্রী।
মোহনবাগানকে বৈধ ভাবে আটকাতে না পেরে কিছুটা মারকুটে খেলতে থাকে মহমেডান। প্রথমার্ধের মাঝামাঝি সময়ে অনিরুদ্ধ থাপাকে ফাউল করেন আলেক্সিস গোমেজ়। দু’দলের খেলোয়াড়েরা হালকা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। রেফারিও হলুদ কার্ড দেখান আলেক্সিসকে।
৩১ মিনিটে দ্বিতীয় গোল করে মোহনবাগান। স্টুয়ার্টের ফ্রিকিক থেকে ফাঁকায় দাঁড়িয়ে হেড করে বল জালে জড়ান শুভাশিস। তৃতীয় গোল আসে ৩৬ মিনিটে। এ বারও সেই স্টুয়ার্ট-শুভাশিস যুগলবন্দি। বাঁ দিক থেকে শুভাশিসের পাস পেয়ে ডান দিকে অনেকটা ঢুকে আসেন স্টুয়ার্ট। অবাক করা ব্যাপার হল, তাঁকে ট্যাকল করার চেষ্টাই করেননি মহমেডানের খেলোয়াড়েরা। কার্যত ফাঁকায় ফাঁকায় দূরপাল্লার শটে গোল করে যান স্টুয়ার্ট। প্রথমার্ধের শেষ দিকে মনবীরের একটি পাস থেকে অল্পের জন্য গোল করতে পারেননি জেমি।
গোল শোধ করার মরিয়া চেষ্টায় বিরতির পরে তিনটি পরিবর্তন করেন চের্নিশভ। লালরিনফেলা খিয়াংতে, বিকাশ সিংহ এবং সিজার মানজ়োকিকে নামিয়ে দেন। তবে গোল করার আগ্রাসন মোহনবাগানের মধ্যেই বেশি লক্ষ্য করা যায়। লিস্টন, মনবীর, জেমি— যে যে ভাবে পারছিলেন সে ভাবে মহমেডানের গোলকিপারের পরীক্ষা নিচ্ছিলেন।
তবে বিকাশ এবং মানজ়োকির সৌজন্যে কিছুটা হলেও মহমেডানের মধ্যে পাল্টা লড়াই লক্ষ্য করা যায়। ৫৭ মিনিটে মিরজালল কাসিমভ শট নিয়েছিলেন। তা সহজেই বাঁচিয়ে দেন বিশাল কাইথ। তার পরেই লিস্টন মোহনবাগানের চতুর্থ গোল করে ফেলতে পারতেন। তবে পদমের সেভে সে যাত্রায় বেঁচে যায় মহমেডান। কিছু ক্ষণ পরে মনবীরের একটি প্রয়াসও বাঁচিয়ে দেন তিনি।
চোট কাটিয়ে অনেক দিন পরে নামলেন আশিক কুরুনিয়ান। সংযুক্তি সময়ে গোল করার সুযোগও পেয়েছিলেন। কিন্তু মহমেডান গোলকিপারের গায়ে শট মারেন। দ্বিতীয়ার্ধের অনেকটা সময়েই মহমেডানের ফুটবলারদের পায়ে বল ঘোরাফেরা করেছে। আক্রমণও হয়েছে। তবে যে রকম আক্রমণ থেকে গোল হতে পারে তা দেখা যায়নি। কিছু সহজ সুযোগ নষ্টও করেছেন তাঁরা।