মহড়া: নিকোলাকে নিয়েই উদ্বিগ্ন রেলওয়ে এফসি কোচ। ফাইল চিত্র।
চার দশক পরে কলকাতা লিগে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দোরগোড়ায় মহমেডান। আজ, বৃহস্পতিবার যুবভারতীতে রেলওয়ে এফসির বিরুদ্ধে ফাইনালকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার পারদ তাই ঊর্ধ্বমুখী।
কলকাতা ময়দানেও ফিরল উন্মাদনার চেনা দৃশ্য। টিকিটের জন্য হাহাকার, মহমেডান সমর্থকদের সামলাতে ঘোড়-পুলিশের তৎপরতা ছিল তুঙ্গে। ফাইনাল দেখতে যুবভারতীতে চল্লিশ হাজারেরও বেশি দর্শক হতে পারে বলে ক্লাব কর্তাদের আশা। ইতিমধ্যেই সব টিকিট শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বুধবার দুপুরে যুবভারতী সংলগ্ন মাঠে মহমেডানের অনুশীলনে অন্য দৃশ্য। তীরে এসে তরী ডোবার আশঙ্কায় বাড়তি সতর্কতা। ডুরান্ড কাপের পরে সম্প্রতি ফুটসলেও মহমেডানের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছিল ফাইনালে হারায়। বৃহস্পতিবার যুবভারতীতে ব্যর্থতার হ্যাটট্রিক আর চান না ক্লাব কর্তৃপক্ষ। এই কারণেই বুধবার দুপুরে অনুশীলনে সংবাদমাধ্যমের প্রবেশও
নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
তা সত্ত্বেও ফাইনালের আগে খুব একটা স্বস্তি নেই মহমেডান শিবিরে। কোচ আন্দ্রেই চের্নিশভকে ছাড়াই অনুশীলন করলেন মার্কাস জোসেফরা। ক্লাব কর্তাদের দাবি, হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় আসেননি কোচ। আন্দ্রেইয়ের অবর্তমানে অনুশীলন করানোর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন ফুটবল সচিব ও দলের ম্যানেজার প্রাক্তন তারকা দীপেন্দু বিশ্বাস। তিনি বললেন, ‘‘কোচকে আমরাই বিশ্রাম নিতে বলেছিলাম। তা ছাড়া আমাদের প্রস্তুতিও সম্পূর্ণ। আশা করছি, ৪০ বছর পরে কলকাতা লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েই মাঠ ছাড়বে মহমেডান।’’
অনুশীলন করাতে না পারলেও আন্দ্রেই ব্যস্ত ছিলেন ফাইনালের রণনীতি তৈরিতে। রেফারিং নিয়ে চিন্তিত মহমেডান কোচ বলেছেন, ‘‘বেশ কিছু ম্যাচে খারাপ রেফারিংয়ের শিকার হয়েছি। দীর্ঘ বিরতির পরে কলকাতা প্রিমিয়ার লিগের ফাইনাল খেলতে আমরা নামব। আশা করছি, ফুটবলাররা তৈরি নিজেদের সেরাটা দেওয়ার জন্য।’’ মহমেডান সমর্থকদের প্রশংসা করে তিনি আরও বলেছেন, ‘‘এই ক্লাবের সমর্থকদের জন্য গর্ব হয়। ওঁদের মুখে হাসি ফোটানোই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।’’ মহমেডান মাঝমাঠের প্রধান ভরসা নিকোলা স্তোয়কোভিচ বলেছেন, ‘‘আমরা নিজেদের উজাড় করে দিতে চাই ফাইনালে।’’ আরও বলেছেন, ‘‘চ্যাম্পিয়ন হয়ে সমর্থকদের খেতাব উৎসর্গ করতে চাই।’’ যদিও ফাইনালে শুরু থেকে সম্ভবত খেলবেন না নিকোলা। পরিবর্ত হিসেবে নামবেন। কারণ, কলকাতা প্রিমিয়ার লিগে দু’জনের বেশি বিদেশি খেলানোর নিয়ম নেই। সূত্রের খবর, স্ট্রাইকার মার্কাস ও ডিফেন্ডার শাহির শাহিনেরই শুরু থেকে
খেলার সম্ভাবনা প্রবল।
লিগ পর্বে রেল দলকে ২-০ হারিয়েছিল মহমেডান। যদিও তা নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভুগতে নারাজ মহমেডানের ফুটবলাররা। দীপেন্দু বলছিলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন ময়দানে খেলা বেশ কয়েক জন অভিজ্ঞ ফুটবলার রয়েছে রেলওয়ে এফসিতে। ওদের আমরা যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছি। কারণ, ডুরান্ড কাপ ও ফুটসল ফাইনালে হারের যন্ত্রণা কেউ ভুলিনি।’’
প্রথমবার কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাস গড়তে মরিয়া রেল দলও। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ভিসা সমস্যা মিটিয়ে ফিরিয়ে আনা হয়েছে স্ট্রাইকার কেলভিনকে। গত দু’দিন ধরে তিনি অনুশীলন করছেন। এ ছাড়াও রক্ষণে রয়েছেন বেন নাস। কোচ সৌরেন দত্ত বললেন, ‘‘১ নভেম্বর থেকে আমরা অনুশীলন শুরু করেছি। আমাদের মূল লক্ষ্য ভাল ফুটবলার উপহার দেওয়া।’’ যোগ করেছেন, ‘‘মহমেডান দারুণ শক্তিশালী দল। লিগ পর্বে আমরা ০-২ হেরেছিলাম। নিকোলা একাই পার্থক্য গড়ে দিয়েছিল। যদিও আমরা ওদের সমীহ করছি না। মাঠে নেমে লড়াই করবে ছেলেরা।’’
কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ ফাইনাল: মহমেডান বনাম রেলওয়ে এফসি (যুবভারতী, দুপুর ১.৪৫)।