মোহনবাগান ফুটবলারদের উল্লাস। —ফাইল চিত্র
রবিবার আবার কলকাতা ডার্বি। ১৯ বছর পর ডুরান্ড কাপের ফাইনালে মুখোমুখি মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল। সেমিফাইনালে পিছিয়ে পড়েও ম্যাচ জিতল মোহনবাগান। গোয়াকে হারিয়ে ডুরান্ড কাপের ফাইনালে উঠল তারা। আগের সেমিফাইনালে নর্থইস্টকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে ইস্টবেঙ্গল। ফাইনালে আবার দেখা কলকাতার দুই দলের।
কোয়ার্টার ফাইনালে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে প্রথম ১০ মিনিটেই এগিয়ে গিয়েছিল মোহনবাগান। কিন্তু সেমিফাইনালে গোয়ার বিরুদ্ধে প্রথম ১০ মিনিটে খুঁজেই পাওয়া গেল না তাদের। শুরু থেকেই চাপ বাড়িয়েছিল গোয়া। ছোট ছোট পাসে আক্রমণে উঠছিল তারা। খুব সুন্দর খেলছিল গোয়া। প্রথম ১০ মিনিটেই দু’বার বাগান বক্সে ঢুকে পড়ে গোয়া। কিন্তু গোল করতে পারেনি তারা।
ক্রমাগত চাপ রাখার ফল পায় গোয়া। ২২ মিনিটের মাথায় এগিয়ে যায় তারা। নিজেদের অর্ধে পাস দিতে গিয়ে ভুল করেন হুগো বুমোস। তাঁর দুর্বল পাস ধরে বেশ খানিকটা দৌড়ে গিয়ে দ্বিতীয় পোস্টে গোল করেন গোয়ার নোয়া সাদাউই। বাগানের দুই ডিফেন্ডার হেক্টর ইয়ুস্তে ও শুভাশিস বসু তাঁকে আটকানোর চেষ্টাই করেননি।
ঘরের মাঠে জঘন্য ফুটবল খেলছিল মোহনবাগান। গোটা মাঠে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না সবুজ-মেরুন ফুটবলারদের। বলের দখল থেকে আক্রমণ, সবেতেই এগিয়ে ছিল গোয়া। বলের পিছনে ছুটে বেড়াচ্ছিলেন সবুজ-মেরুন ফুটবলারেরা। তার মধ্যেই যে কয়েক বার তাঁরা বল পাচ্ছিলেন, আক্রমণ তৈরি করতে পারছিলেন না। দুই উইং বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়ছিল বাগান।
অবশেষে ৪২ মিনিটে সমতা ফেরায় বাগান। প্রতি আক্রমণ থেকে বক্সে ঢোকার চেষ্টা করেন সাহাল আব্দুল সামাদ। তাঁকে ফাউল করেন গোয়ার ডিফেন্ডার। খালি চোখে দেখে মনে হচ্ছিল ফাউল বক্সের বাইরে হয়েছে। গোয়ার ফুটবলারেরাও লাইন্সম্যান ও রেফারির কাছে সেই দাবিই জানান। কিন্তু রেফারি পেনাল্টি দেন। স্পট থেকে গোল করতে ভুল করেননি কামিংস। ১-১ গোলে বিরতিতে যায় দু’দল।
দ্বিতীয়ার্ধে দলে একটি বদল করেন বাগান কোচ জুয়ান ফেরান্দো। বুমোসকে তুলে আর্মান্দো সাদিকুকে নামান তিনি। আক্রমণে কামিংস ও পেত্রাতোসের সঙ্গে জুড়ে দেন আরও এক বিদেশিকে। তার পরেই খেলার ছবিটা একটু বদলায়। অনেক বেশি আক্রমণ করতে থাকে বাগান। তার ফল মেলে। ৬০ মিনিটের মাথায় এগিয়ে যায় বাগান। সন্দেশ জিঙ্ঘনের ভুলে বক্সের বাইরে বল পান পরিবর্ত হিসাবে নামা সাদিকু। সন্দেশকে মাটি ধরিয়ে বক্সের বাইরে থেকেই ডান পায়ের জোরালো শটে গোল করেন তিনি।
আরও একটি বদল করেন ফেরান্দো। এ বার কামিংসকে তুলে নিয়ে মনবীর সিংহকে নামান তিনি। এক জন বক্স স্ট্রাইকারের বদলে নামান বল ধরে খেলা এক ফুটবলারকে। গোল খাওয়ার পরে আক্রমণের চাপ বাড়াতে থাকে গোয়া। গোলের সুযোগও তৈরি হচ্ছিল। এগিয়ে যাওয়ায় কিছুটা রক্ষণাত্মক খেলা শুরু করে সবুজ-মেরুন। ব্রেন্ডন হামিলকে নামিয়ে রক্ষণের ঝাঁপ বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করেন কোচ ফেরান্দো। নামান লিস্টন কোলাসোকেও।
সময় যত এগোচ্ছিল তত চাপে পড়ছিল গোয়া। পুরো দল আক্রমণে উঠে আসছিল। তাই প্রতি আক্রমণ থেকে সুযোগ আসছিল বাগানের সামনে। বক্সের ভিতর থেকে সহজ সুযোগ নষ্ট করেন সাহাল। সংযুক্তি সময়ে ফ্রি কিক থেকে জয় গুপ্তের হেড ঝাঁপিয়ে বাঁচান বিশাল কাইথ। বাগান গোলরক্ষক খেলায় এগিয়ে রাখেন দলকে। শেষ দিকে বক্স থেকে বক্সে খেলা চলছিল। গোয়া যেমন মরিয়া হয়ে গোল করার চেষ্টা করছিল, বাগান তেমনই মরিয়া হয়ে ডিফেন্স করছিল। শেষ পর্যন্ত আর গোল করতে পারেনি গোয়া। ৩৮ শতাংশ বলের দখল নিয়েও ২-১ গোলে জিতে মাঠ ছাড়ে বাগান।