‘চিফ মিনিস্টার্স কাপ’ নিয়ে মোহনবাগানের খেলোয়াড়দের উচ্ছ্বাস। ছবি: ডিডি স্পোর্টস।
মোহনবাগান ১ (সুহেল)
ইস্টবেঙ্গল ১ (আশিক)
(টাইব্রেকারে ৩-২ গোলে জয়ী মোহনবাগান)
ডুরান্ড কাপের ফাইনালে সিনিয়র দলের হারের হতাশা কাটিয়ে দিল মোহনবাগানের জুনিয়র দল। সোমবার লখনউয়ে ‘চিফ মিনিস্টার্স কাপ’-এ ইস্টবেঙ্গলকে টাইব্রেকারে ৩-২ গোলে হারিয়ে দিল তারা। নির্ধারিত সময়ে খেলার ফল ছিল ১-১। টাইব্রেকারে ইস্টবেঙ্গলের আদিত্য পাত্রের দু’টি সেভেও কাজ হল না। কারণ ইস্টবেঙ্গলের দুই ফুটবলার বাইরে মারলেন। একজনের শট বাঁচিয়ে দিলেন মোহনবাগানের গোলকিপার।
ডুরান্ড কাপের কোয়ার্টার ফাইনাল এবং সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে জিতেছিল মোহনবাগান। দুই ক্ষেত্রেই মোহনবাগানকে জিতিয়েছিল গোলকিপার বিশাল কাইথের হাত। কিন্তু ফাইনালে নর্থইস্টের কাছে হেরে ট্রফি জয়ের স্বপ্নভঙ্গ হয়। এ দিন জুনিয়র দলের গোলকিপার মাত্র একটি সেভ করেন। কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের তন্ময় এবং বিষ্ণু বাইরে বল মারায় মোহনবাগানের কাজ সহজ হয়ে যায়।
কেডি সিংহ স্টেডিয়ামে নতুন ফ্লাডলাইট বসানোর পর কলকাতা ডার্বি আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু মাঠের অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। জায়গায় জায়গায় ঘাস ছিল না। কিছু জায়গায় ঘাসও বেশ বড় বড় ছিল। স্বাভাবিক ভাবেই ফুটবলারেরা খুব গা লাগিয়ে খেলেননি। গোটা ম্যাচেই তা বজায় ছিল। দুই প্রধানেরই বেশ কিছু ফুটবলার আইএসএলে খেলবেন। ইস্টবেঙ্গলের সামনে কলকাতা লিগের সুপার সিক্সের খেলাও রয়েছে। তাই কেউই অহেতুক ঝুঁকি নিয়ে চোট পেতে চাননি। ফলে কলকাতা ডার্বি যতটা আকর্ষণীয় হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি।
ম্যাচের আগে মাঠের অবস্থা দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, এই মাঠে ভাল খেলা হওয়া সম্ভব নয়। ঠিক সেটাই হয়েছে। শুরু থেকেই দু’দল সাবধানী ফুটবল খেলার দিকে নজর দিয়েছে। দু’দলই বল নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছিল। ধীরে ধীরে মোহনবাগান আগ্রাসী খেলা শুরু করে। তার মাঝেই হীরা মণ্ডল মোহনবাগানের বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন। তবে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি।
১৮ মিনিটে এগিয়ে যায় মোহনবাগান। এ ক্ষেত্রে দোষ প্রাপ্য ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের। বক্সের বেশ খানিকটা দূরে ফ্রিকিক পেয়েছিল মোহনবাগান। সেখান থেকে সালাউদ্দিনের ভাসানো বলে চকিতে এগিয়ে এসে গোল করেন সুহেল ভাট। এর পরেই কর্নার ফ্ল্যাগের সামনে গিয়ে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর মতো উচ্ছ্বাস করেন তিনি। আচমকা গোল খেয়ে কিছুটা হতবাক হয়ে পড়ে ইস্টবেঙ্গল।
সুহেলের একটি পেনাল্টি আবেদন নাকচ হয়। মোহনবাগান আগ্রাসী খেলতে শুরু করলেও ইস্টবেঙ্গল রক্ষণ জমাট ছিল। তবে দু’দলের ফুটবলারদের মধ্যে কিছুটা গা-ছাড়া মনোভাব দেখা যাচ্ছিল। সে কারণে আর গোল হয়নি।
বিরতিতে লম্বা ভাষণ দেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তার পরে ভাষণ দেন সর্বভারতীয় ফুটবল সংস্থার (এআইএফএফ) সভাপতি কল্যাণ চৌবেও। ফলে নির্ধারিত ১৫ মিনিটেরও বেশ কিছুটা পরে দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু হয়।
শুরুতে আরও এক গোলে এগিয়ে যেতে পারত মোহনবাগান। তবে নিঙ্গোবামের শট বারের উপর দিয়ে উড়ে যায়। গোলের লক্ষ্যে প্রথমার্ধে পরিবর্ত হিসাবে সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নামিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গলের কোচ বিনো জর্জ। ৭১ মিনিটে সমতা ফেরায় ইস্টবেঙ্গল। বিপক্ষের ডিফেন্ডারদের ড্রিবল করে বাঁ দিক দিয়ে আক্রমণ করেছিলেন আমন। সেখান থেকে তাঁর মাপা ক্রসে গোল করেন মহম্মদ আশিক।
এর দশ মিনিট পরে দশ জনে হয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। পর পর দু’টি হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন সায়ন। পরের দিকে বেশ কয়েক বার দুই প্রধানই আক্রমণে উঠেছিল। তবে কেউই গোল করতে পারেনি। নির্ধারিত সময়ে কোনও গোল হয়নি।
টাইব্রেকারে প্রথম শটই বাইরে মারেন তন্ময়। মোহনবাগানের হয়ে গোল করেন সার্তো। দ্বিতীয় শটও নষ্ট করে ইস্টবেঙ্গল। বাইরে মারেন পি ভি বিষ্ণু। মোহনবাগানের শিবাজিতের শট বাঁচিয়ে দেন আদিত্য পাত্র। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে গোল করেন মুশারফ। মোহনবাগানের হয়ে গোল অভিষেকের। ইস্টবেঙ্গলের এক ফুটবলারের শট বাঁচিয়ে দেন মোহনবাগানের গোলকিপার। পঞ্চম শটে গোল করে মোহনবাগানকে জেতান টাইসন সিংহ।