দিয়ামানতাকোস গোল করলেও জিততে পারল না ইস্টবেঙ্গল। ছবি: সমাজমাধ্যম।
ডুরান্ড কাপ, এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টু-এর যোগ্যতা অর্জন এবং আইএসএল, গত আট ম্যাচে যেখানেই নেমেছে সেখানেই হেরেছে ইস্টবেঙ্গল। অবশেষে পয়েন্ট পেল তারা। ভুটানের থিম্পুতে এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে ২-২ ড্র করল পারো এফসি-র বিরুদ্ধে। তবে সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে ম্যাচটি জিততেও পারত তারা।
এএফসি-র প্রতিযোগিতায় প্রথম একাদশে বিদেশির সংখ্যা নিয়ে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। তাই পাঁচ বিদেশিকে নিয়ে শুরু করেছিলেন কোচ অস্কার ব্রুজ়ো। রক্ষণে পাশাপাশি রেখেছিলেন হেক্টর ইয়ুস্তে এবং হিজাজি মাহেরকে। ফলে আনোয়ার আলিকে খেলাতে হয়েছে রাইট ব্যাকে। মাঝমাঠে ছিলেন মাদিহ তালাল এবং সাউল ক্রেসপো। আক্রমণে দিমিত্রিয়স দিয়ামানতাকোস।
ইস্টবেঙ্গল ড্র করলেও বেশ কিছু বিষয় নিয়ে চিন্তা থেকেই যাবে ব্রুজ়োর। যে যে বিষয়গুলি নিয়ে কাজ করার কথা বলেছিলেন তার অনেকগুলিই উন্নত হয়েছে। তবে যথেষ্ট নয়। আরও অনেক কাজ করতে হবে কোচকে।
প্রথম ১০ মিনিটের ঝড়
ইস্টবেঙ্গলের এগিয়ে যাওয়া এবং প্রথম গোল হজম এই সময়ের মধ্যেই। প্রথম দশ মিনিটে লাল-হলুদের খেলা দেখে মনে হয়েছিল তারা যেন একটা শপথ নিয়ে নেমেছে। যে করে হোক জিততে হবে। ইস্টবেঙ্গলের খেলোয়াড়দের মধ্যে সেই চেনা আগ্রাসন দেখা যাচ্ছিল। এক বার পারো আক্রমণ করলেও তা আটকে দেয় ইস্টবেঙ্গল। ছ’মিনিটের মধ্যে এগিয়ে যায় তারা। ডান দিক থেকে আক্রমণে উঠে বিপক্ষের খেলোয়াড়কে বোকা বানিয়ে পাস দেন তালালকে। বক্সে অরক্ষিত তালাল চলতি বলেই শট মেরে গোল করেন। দু’মিনিট পরেই পিছিয়ে পড়ে ইস্টবেঙ্গল। এ ক্ষেত্রে পুরোপুরি দোষ ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের। আরও বিস্তারিত বললে, প্রভাত লাকরার। ইভান আসান্তেকে আটকাতেই পারেননি তিনি। ছোট টাচে লাকরাকে কাটিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন আসান্তে। তখন ট্যাকল করা ছাড়া লাকরার কাছে উপায় ছিল না। পেনাল্টি থেকে গোল করেন উইলিয়াম ওপোকু, যিনি দীর্ঘ দিন খেলেছেন কলকাতা লিগে।
লেফ্ট ব্যাকে ইস্টবেঙ্গলের দুর্বলতা
আইএসএলের দলগুলি জেনেই গিয়েছে। প্রথম ম্যাচে পারোও ইস্টবেঙ্গলের সবচেয়ে দুর্বল জায়গা নিয়ে ছেলেখেলা করল। জানুয়ারিতে ট্রান্সফার উইন্ডো খুললে নতুন স্ট্রাইকার আনার পাশাপাশি লেফ্ট ব্যাক পজিশন নিয়েও ভাবতে হবে অস্কার ব্রুজ়োকে। কোনও ফুটবলারই এই পজিশনে খেলতে পারছেন না। এ দিন লাকরার দোষে প্রথম গোল খেল তারা। পরে যিনি নামলেন, সেই লালচুংনুঙ্গা তো দীর্ঘ দিন ধরেই ফর্মে নেই।
আনোয়ারকে রাইট ব্যাকে খেলানো
আনোয়ার কবে শেষ বার রাইট ব্যাকে খেলেছেন তা নিজেই ভুলে গিয়েছেন। ব্রুজ়ো তাঁকে সেই অচেনা জায়গাতেই খেলালেন। তবে গোটা ম্যাচেই আনোয়ারকে স্বাভাবিক ছন্দে দেখা গেল না। রাইট ব্যাকে শৌভিক চক্রবর্তীকে খেলিয়ে মাঝমাঠে ডিফেন্সের ঠিক আগে জিকসন সিংহের সঙ্গে খেলানো যেতে পারত আনোয়ারকে। শৌভিক বা মহম্মদ রাকিপ থাকলে যে ভাবে দলকে সাহায্য করার জন্য উপরে উঠে ক্রস ভাসান তা করতে দেখা যায়নি আনোয়ারকে। ফলে একা পড়ে যাচ্ছিলেন নন্দকুমার। যদিও দ্বিতীয় গোলটি এল তাঁর কৃতিত্বেই।
গোল করলেও দিয়ামানতাকোসকে নিয়ে চিন্তা
কেরল থেকে ইস্টবেঙ্গলে সই করার পর পরিচিত ছন্দে পাওয়া যাচ্ছে দিমিত্রিয়স দিয়ামানতাকোসকে। শনিবার তিনি গোল করলেন বটে। কিন্তু সুযোগ নষ্ট করেছেন অনেক। প্রথমার্ধে কয়েক মিলিমিটার দূর থেকেও বলে পা লাগাতে পারলেন না। লম্বা থ্রোয়ে নিখুঁত হেড করার বদলে বার বার বাঁ পা তুলে ভলি মারতে গেলেন। তবে দ্বিতীয়ার্ধে গোল করলেন।
ফাইনাল থার্ডে ফিনিশিং
পারোর বিরুদ্ধে ইস্টবেঙ্গল যে পুরোপুরি নিষ্প্রভ ছিল তা নয়। কিন্তু যে সুযোগগুলি তারা পেয়েছিল তার খুব বেশি কাজে লাগাতে পারেনি। সাউল ক্রেসপো, তালালেরা আক্রমণে বহু বার উঠেছেন বটে, কিন্তু গোল করার লোক খুঁজে পাননি। মূলত ভাল স্ট্রাইকারের অভাবেই। দিমিত্রয়সের পাশাপাশি দ্বিতীয়ার্ধে নামা ক্লেটনও সুযোগ তৈরি করতে পারেননি। আগের ম্যাচগুলির মতো এ দিনও ইস্টবেঙ্গলের হয়ে নজর কাড়লেন তালাল। প্রথম গোলটিও তাঁর। কিন্তু বাকিরা ছন্দে না থাকলে তিনি একা কী করেই বা জেতাবেন?