যুগলবন্দি: ডুরান্ড জিতে পেদ্রোর সঙ্গে জন আব্রাহাম। —ফাইল চিত্র।
মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকে টাইব্রেকারে হারিয়ে নর্থ ইস্ট ইউনাইটেডের ডুরান্ড কাপ জয়ের পরেই তিনি মাঠে নেমে এসে কোলে তুলে নেন ফুটবলারদের। আনন্দে আত্মহারা হয়ে যে ভাবে জড়িয়ে ধরছিলেন প্রত্যেক সদস্যকে, কে বলবেন তিনি বলিউডের ‘মাচো’ তারকা জন আব্রাহাম?
২০১৪ সালে অনেক স্বপ্ন নিয়ে নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড এফসি গড়েন জন। আইএসএলে একমাত্র ব্যক্তিমালিকানাধীন ক্লাব। কিন্তু দশ বছরের যাত্রাপথে বারবার ব্যর্থতার যন্ত্রণায় ক্ষতবিক্ষত হলেও হাল ছাড়েননি। দ্বিগুন উৎসাহে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। অবশেষে স্বপ্নপূরণ। প্রথমবার ডুরান্ড কাপের ফাইনালে উঠেই যুবভারতীতে প্রায় ৫২ হাজার দর্শকের সামনে চ্যাম্পিয়ন তাঁর ক্লাব।
ভারতীয় দল থেকে ক্লাব ফুটবল— উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলির ফুটবলারদেরই আধিপত্য। অথচ নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড কখনও আইএসএলে চ্যাম্পিয়ন হওয়া তো দূরের কথা, কোনও প্রতিযোগিতার ফাইনালেও ওঠেনি এত দিন। ডুরান্ড কাপ জিতে ইতিহাস গড়ে জন বলেছিলেন, ‘‘ক্লাব চালানোর জন্য প্রতি বছর আমার বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়। ক্ষমতা খুবই সীমিত। কারণ, একমাত্র আমিই ক্লাবের মালিক। বাকি ক্লাবগুলি চালায় বড় কর্পোরেট সংস্থা। ওদের অর্থের অভাব নেই। এই অসম লড়াই খুবই কঠিন। হার মারিনি। দল হারলে কান্নায় ভেঙে পড়ি ঠিকই, আবার ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু করি।’’ যোগ করেন, ‘‘নর্থ ইস্ট আমার কাছে শুধুমাত্র একটা ক্লাব নয়, গর্বও।’’
উত্তরপূর্বের ক্লাবের সূর্যোদয়ের কৃতিত্ব জন-কে দিচ্ছেন মন্দার তামানে। বেঙ্গালুরু এফসি-র উত্থানের নেপথ্যে মুখ্য ভূমিকা ছিল তাঁর। এখন তিনি নর্থ ইস্টের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার। আনন্দবাজারকে ফোনে মন্দার বললেন, ‘‘নর্থ ইস্টের এই সাফল্যের অন্যতম কারিগর জন। ফুটবলের প্রতি ওর ভালবাসা অবিশ্বাস্য। বিদেশি থেকে ভারতীয় ফুটবলার— প্রত্যেকের খবর রাখেন। ওর স্ত্রী প্রিয়াও সমান আবেগপ্রবণ। কোচ নির্বাচন থেকে দল গঠন— সব কিছুর সঙ্গেই জন ও প্রিয়া যুক্ত।’’
কী ভাবে এই মরসুমে দল তৈরি হয়? মন্দার বলেন, ‘‘অন্য ক্লাবগুলির মতো আর্থিক সঙ্গতি নেই। জোর দিয়েছি স্থানীয় প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলার খুঁজে আনতে। প্রয়োজন অনুযায়ী বিদেশি ফুটবলার নিয়েছি।’’ যোগ করেন, ‘‘দলের সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করে কোচের উপরে। আমরা এমন কোচ চেয়েছিলাম, যিনি এই সংস্কৃতির সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নেবেন। ৫০-৬০ জন কোচের বায়োডাটা থেকে সাক্ষাৎকারের জন্য নির্বাচিত করি দু’জনকে। হুয়ান পেদ্রো বেনালিকে চূড়ান্ত করা হয়। ইউরোপ, আফ্রিকা, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্যে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে। সাত-আটটা ভাষাও জানেন।’’ যোগ করেন, ‘‘গত মরসুমের অধিকাংশ ফুটবলারকে ধরে রাখি। আক্রমণভাগ ও মাঝমাঠ শক্তিশালী করতে মরক্কোর আলাদিন আজ়ারাই ও স্পেনের গিয়েরমো ফার্নান্দেসকে আনি। তার সুফল পেয়েছি। তবে আসল পরীক্ষা আইএসএলেই হবে।’’