প্রস্তুতি: নর্থ ইস্টের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে ক্লেটন, মহেশ, সৌভিকরা। রবিবার যুবভারতীতে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
শেষ জয় এসেছিল ৩০ সেপ্টেম্বর, ঘরের মাঠে হায়দরাবাদ এফসির বিরুদ্ধে। দু’মাসের ওপর কেটে গেলেও জয়ের দেখা নেই লাল-হলুদ শিবিরে। ডুরান্ডে রানার্স হওয়ার পরে পরিবর্তনের যে স্বপ্নজাল বুনতে শুরু করেছিলেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা, তা প্রায় বিবর্ণ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। আজ, সোমবার আইএসএলে ঘরের মাঠে ইস্টবেঙ্গল মুখোমুখি হবে পয়েন্ট তালিকায় ছয় নম্বরে থাকা নর্থ ইস্ট ইউনাইটেডের।
ম্যাচের চব্বিশ ঘন্টা আগে অবশ্য কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত জানিয়ে দিতে ভুললেন না, তাঁর দল ক্রমশ উন্নতি করছে। কিন্তু সেই উন্নতির নমুনার থেকেও সমর্থকদের কাছে অগ্রাধিকার পাবে মাঠে গিয়ে দলের জয় দেখা। তাঁর কথায়, “শেষ চার ম্যাচে আমরা একটাও জয় পাইনি। পরের দু’টি ম্যাচ ঘরের মাঠে খেলব। পুরো ছয় পয়েন্ট চাই। পুরো পয়েন্ট পেলেই আমরা লিগে অনেকটা উপরে চলে যাব।”
প্রসঙ্গত ছয় ম্যাচে পাঁচ পয়েন্ট নিয়ে টেবলে নয় নম্বরে রয়েছে ইস্টবেঙ্গল। এগিয়ে গেলেও সেই গোল ধরে রাখতে পারছে না। দলের ডিফেন্ডারদের দুর্বলতা কার্যত লুকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। সেই প্রসঙ্গে কুয়াদ্রাতের পরামর্শ, তাঁদেরকে আরও সাহসী হতে হবে। বলছেন, “আমাদের আরও সাহসী হতে হবে। মাঠে পরিকল্পনার ঠিক প্রতিফলন ঘটাতেই হবে আমাদের। তবে ফুটবলে এরকম হতেই পারে।”
দলের ছেলেদের কী ভাবে অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছেন? রসিকতার মেজাজে কুয়াদ্রাত বলে দিলেন, “এই সপ্তাহে আমরা একসঙ্গে মধ্যাহ্নভোজন সেরেছি।” পরে অবশ্য গম্ভীর হয়ে তাঁর উত্তর, “নিজেদের মধ্যে যথেষ্ট আলোচনা করেছি। শুধুমাত্র শারীরিক ভাবেই নয়, মানসিক ভাবেও ছেলেদের প্রেরণা জুগিয়েছি।”
শেষ ম্যাচে চেন্নাইয়িন এফসির বিরুদ্ধে এগিয়ে থেকেও রক্ষণে পারদোর ভুলে দু’পয়েন্ট হাতছাড়া করতে হয়েছে কুয়াদ্রাত-বাহিনীকে। সেই ম্যাচ নিয়েও আফসোস শোনা গিয়েছে রবিবার বিকেলে। বলেন, “আমরা তার পরে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছি। ফুটবলে কখনও কখনও ছোট ভুলও অনেক বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। ম্যাচের উপর থেকে নিয়ন্ত্রন হারালে চলবে না।”
দ্রুতই যে তাঁরা জয়ের রাস্তায় ফিরবেন, সেই অভয়বাণীও শুনিয়েছেন কুয়াদ্রাত। তিনি বলছেন, “আমাদের দল লড়াই করেছে। এখনই হতাশ হবার কোনও কারণ নেই। গোল করার সামান্যতম সুযোগও কাজে লাগাতে হবে। রক্ষণে আমরা খুঁত মেরামত করার চেষ্টা করেছি।”
ডুরান্ডে কুয়াদ্রাত স্পর্শে যে ইস্টবেঙ্গলকে পাওয়া গিয়েছিল, সেই জাদুকাঠির মেয়াদ কি শেষ হয়ে গিয়েছে? “কিছুই পরিবর্তন হয়নি। প্রথম দুই ম্যাচে চার পয়েন্ট পেয়েছি। বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধেও ভাল খেলে রেফারির কারণে হেরে গিয়েছি। মাঠে ফুটবলারেদর সেরাটা দিতে হবে। প্রত্যেক পয়েন্টের জন্য লড়াই করতে হবে। পয়েন্ট নষ্ট করলে চলবে না।”, বলে দিয়েছেন লাল-হলুদ কোচ।
ডুরান্ডে নর্থ ইস্টের বিরুদ্ধে এক রোমাঞ্চকর ম্যাচের সাক্ষী ছিল জনতা। ২-০ গোলে পিছিয়ে থেকেও ম্যাচ ড্র করেন নন্দ কুমাররা। তার পরে পেনাল্টি শুটে ৫-৩ ব্যবধানে জিতে ফাইনালে পৌঁছে যায় ইস্টবেঙ্গল। সেই ম্যাচ এখন অতীত কুয়াদ্রাতের কাছে। বলে দিলেন, “সেটা আলাদা প্রতিযোগিতা ছিল। আমাদের ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে এই ম্যাচে খেলতে হবে।” পি ভি বিষ্ণু বলেন, “প্রত্যেক ফুটবলারের স্বপ্ন থাকে দেশের সেরা লিগে খেলার। কোচকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।”
তবে কলকাতা লিগে সুপার সিক্সের ডার্বি নিয়ে হতাশ লাল-হলুদ কোচ। বলে দিলেন, “ওই ডার্বি হওয়া অবশ্যই উচিত ছিল। আমাদের রিজ়ার্ভ দলের ছেলেরা ভাল ম্যাচ খেলা থেকে বঞ্চিত হল। জানি না কেন ম্যাচটি হল না? এই সব বড় ম্যাচ খেলেই ফুটবলারেরা অনেক কিছু শিখতে পারে।” ইস্টবেঙ্গল শিবিরে সুখবর, চোট সারিয়ে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছেন বোরখা এরেরা। অনুশীলনেও চনমনে বোরখাকে দেখা গেল।
আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষ্যে ইস্টবেঙ্গলের অনুশীলন দেখতে আমন্ত্রন জানানো হয়েছিল বিশেষভাবে সক্ষম এক ইস্টবেঙ্গল ভক্তকে। তাঁর সঙ্গে ছবিও তোলেন ইস্টবেঙ্গলের কোচ সহ ফুটবলারেরা।