জনির আগমনের খবরে সবুজ-মেরুন শিবিরে খুশির আবহ। — ফাইল চিত্র।
এটিকে-মোহনবাগানের মাঝমাঠের স্তম্ভ ছিলেন তিনি। সেই জনি কাউকো চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়ায় কার্যত বিপর্যয় নেমে এসেছিল সবুজ-মেরুন শিবিরে। সুস্থ হওয়ার জন্য তিনি ফিনল্যান্ডে ফিরে গেলেও তাঁর অবদান ভোলেনি এটিকে-মোহনবাগান। বিশেষ সম্মান জানাতে বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে আইএসএলের ফাইনালের আগে জনিকে ফিনল্যান্ড থেকে গোয়া উড়িয়ে আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সব ঠিক থাকলে শনিবার ফতোরদা স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে দেখা যাবে ফিনল্যান্ডের হয়ে ইউরো ২০২০-তে খেলা তারকাকে।
জনির আগমনের খবরে সবুজ-মেরুন শিবিরে খুশির আবহ। যদিও মন খুব একটা ভাল নেই লিস্টন কোলাসোর। শুক্রবার সকালে বেনোলিমে অনুশীলন করতে যাওয়ার সময় তিনি যখন দেখবেন এফসি গোয়ার ব্রেন্ডন ফার্নান্দেসের বিশাল ছবির নীচে লেখা রয়েছে, ‘আমাদের গর্ব ব্রেন্ডন’, তাঁর অস্বস্তি কি আরও বাড়বে? লিস্টনও তো গোয়ার ভূমিপুত্র। বেঙ্গালুরু এফসিকে হারিয়ে এটিকে-মোহনবাগানের হয়ে আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার থেকে একধাপ দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। অথচ তাঁকে নিয়ে কোনও উচ্ছ্বাস নেই গোয়াবাসীর।
এটিকে-মোহনবাগানের ফুটবলার বলেই কি লিস্টনকে নিয়ে আগ্রহ নেই? ভার্কা সমুদ্রসৈকতের কাছে ছোটখাটো দোকান চালান রবার্ট। বৃহস্পতিবার বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে সেখানে বসেই মোবাইল ফোনে বুধবার রাতের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রিয়াল মাদ্রিদ বনাম লিভারপুল ম্যাচ দেখছিলেন। বললেন, ‘‘এই মরসুমে আইএসএলে লিস্টন মাত্র একটি গোল করেছে। আত্মবিশ্বাস সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলেছে। লিস্টন আগে ছন্দে ফিরুক, আমরা আবার ওকে মাথায় তুলে রাখব।’’ লিস্টন নিজেও মরিয়া ঘুরে দাঁড়াতে। বলছিলেন, ‘‘সকলের জীবনেই খারাপ সময় আসে। আশা করছি, দুঃসময় কাটিয়ে আমিও ঘুরে দাঁড়াব। বাবা, মায়ের জন্যই আমাকে ছন্দে ফিরতে হবে।’’ লিস্টনের বাবা কাঠের কাজ করে কোনও মতে সংসার Qচালাতেন। ছেলেকে বলতেন, ‘‘তুমি মন দিয়ে ফুটবল খেলে যাও। সংসার নিয়ে ভাবতে হবে না।’’ গত মরসুমে আইএসএলে ভারতীয় ফুটবলারদের মধ্যে সর্বাধিক গোল করা লিস্টন বলছিলেন, ‘‘আমার বাবাও সব সময়ই উৎসাহ দিয়েছেন ফুটবল খেলতে। সংসারের অভাব-অনটনের আঁচ কখনও আমার গায়ে লাগতে দেননি। ওঁদের জন্যই আমাকে এ বার ঘুরে দাঁড়াতেই হবে।’’
গোয়া রওনা হওয়ার আগে যুবভারতীতে বৃহস্পতিবার সকালে অনুশীলন করেন মোহনবাগানের ফুটবলাররা। ক্লান্তি দূর করতে বিমানে উঠেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন প্রীতমরা। ব্যতিক্রম লিস্টন। সতীর্থ হুগো বুমোসের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন তাঁর ভুলভ্রান্তি নিয়ে। নিচ্ছিলেন পরামর্শও। বলছিলেন, ‘‘ফাইনালে নিজেকে উজাড় করে দিতে চাই।’’
লিস্টনের মতোই ছটফট করছেন গোয়ার আর এক ভূমিপুত্র গ্লেন মার্টিন্স। এফসি গোয়া ছেড়ে এই মরসুমেই মোহনবাগানে যোগ দিয়েছেন তিনি। যুবভারতীতে হায়দরাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধে সেমিফাইনালের দ্বিতীয় পর্বের দ্বৈরথে অসাধারণ খেলেছিলেন গ্লেন। বলছেন, ‘‘আমি গোয়ার ছেলে। আইএসএলের ফাইনাল যে মাঠে হবে, সেই ফতোরদা স্টেডিয়ামও আমার চেনা। গোয়ার বন্ধুরা সকলে যোগাযোগ করেছে আমার সঙ্গে। ওরা খেলা দেখতেও আসবে। আমার হাতে ট্রফি দেখতে উন্মুখ হয়ে রয়েছে।’’
গ্লেন এর আগেও মোহনবাগানের হয়ে খেলেছেন। সবুজ-মেরুন ছেড়েই ফিরে গিয়েছিলেন এফসি গোয়ায়। জুয়ানের ডাকেই ফিরেছেন পুরনো ক্লাবে। বলছিলেন, ‘‘আমি এখনও আইএসএল জিততে পারিনি। আশা করি, এ বার সেই আক্ষেপ মিটবে।’’ প্রতিপক্ষ বেঙ্গালুরু এফসিকে নিয়ে মোহনবাগান মাঝমাঠের অন্যতম ভরসার বিশ্লেষণ, ‘‘বেঙ্গালুরু শক্তিশালী দল। এখন ওদের সোনালি সময় চলছে। রয় কৃষ্ণ ও জ়াভি দারুণ ছন্দে রয়েছে।’’ এর পরেই গ্লেনের হুঙ্কার, ‘‘ডার্বির পর থেকে আমাদের দলও দুর্দান্ত খেলছে। আমাদের প্রধান শক্তি হল, দলগত ফুটবল। আমরা কোনও ফুটবলারের ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের উপরেনির্ভরশীল হয়ে খেলি না।’’