SC East Bengal

ISL 2021-22: অতীত ভুলে আলোয় ফেরার স্বপ্ন লাল-হলুদে

এসসি ইস্টবেঙ্গলের কোচকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আইএসএলের দ্বিতীয় ম্যাচটাই ডার্বি।

Advertisement

শুভজিৎ মজুমদার

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২১ ০৫:৩২
Share:

নজরে: সমর্থকদের ভরসা বাড়িয়েছেন নাইজিরিয়ার বিধ্বংসী স্ট্রাইকার ড্যানিয়েল চিমা। ছবি এসসি ইস্টবেঙ্গল।

নতুন মরসুম। নতুন কোচ। নতুন স্বপ্ন। কিন্তু পুরনো আশঙ্কা!

Advertisement

লাল-হলুদ সমর্থকদের আতঙ্ক আইএসএলে গত মরসুমে এসসি ইস্টবেঙ্গলের শোচনীয় সমাপ্তি নিয়ে। এগারো দলের মধ্যে নবম! আতঙ্ক চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এটিকে-মোহনবাগানের কাছে দুই পর্বের ম্যাচেই বিপর্যস্ত হওয়া নিয়ে। তার উপরে শুক্রবার কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে রয় কৃষ্ণ, হুগো বুমোসদের ৪-২ গোলে জয়।

আজ, রবিবার অষ্টম আইএসএলের প্রথম ম্যাচে জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে নামার চব্বিশ ঘণ্টা আগে লাল-হলুদের স্পেনীয় কোচ ম্যানুয়েল দিয়াস যতই নতুন ভাবে শুরু করার বার্তা দিন, সমর্থকরা কি নিশ্চিন্ত হতে পারছেন? ২৭ নভেম্বর লাল-হলুদের দ্বিতীয় ম্যাচই যে ডার্বি। ইতিমধ্যেই কলকাতা ছেয়ে গিয়েছে দুই প্রধানের তারকাদের কাট-আউটে। জামশেদপুরের বিরুদ্ধে দ্বৈরথ আসলে তো বাঙালির চিরকালীন আবেগের মহারণের মহড়াই। শনিবার সাংবাদিক বৈঠকেও তাই ডার্বির প্রসঙ্গ উঠল।

Advertisement

এসসি ইস্টবেঙ্গলের কোচকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আইএসএলের দ্বিতীয় ম্যাচটাই ডার্বি। তার আগে জামশেদপুরের বিরুদ্ধে দ্বৈরথ কতটা গুরুত্বপূর্ণ? সহকারীর মাধ্যমে ম্যানুয়েল বললেন, ‘‘আপাতত আমরা প্রথম ম্যাচেই মনঃসংযোগ করছি। এই মুহূর্তে ডার্বি নিয়ে ভাবছি না। প্রথম ম্যাচ থেকে আত্মবিশ্বাস অর্জন করাই মূল লক্ষ্য আমাদের। দীর্ঘ দিন ধরে আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি।আশা করছি, শুরুটা ভালই হবে।’’

এই মরসুমে একেবারে নতুন ভাবে দল সাজিয়েছেন এসসি ইস্টবেঙ্গল কর্তারা। ছয় বিদেশি শুধু দলেই নতুন নন, ভারতের মাটিতে প্রথমবার খেলবেন। আক্রমণ ভাগে রয়েছেন নাইজিরীয় ড্যানিয়েল চিমা ও ক্রোয়েশিয়ার আন্তোনিয়ো পেরোসেভিচ। মাঝমাঠে নেদারল্যান্ডস যুব দলে খেলা ড্যারেন সিডওয়েল ও স্লোভেনিয়ার আমির দেরভিসেভিচ। রক্ষণ শক্তিশালী করতে নেওয়া হয়েছে ইটালির লাজ়িয়োয় খেলা ক্রোয়েশিয়ার ফ্রানিয়ো পর্চে এবং অস্ট্রেলীয় টমিস্লাভ মর্সেলাকে। লাল-হলুদের নতুন কোচ আস্থা রেখেছেন তারুণ্যের উপরেই। গত মরসুমে ব্রাইট এনোবাখারে ও মাঠি স্টেনম্যান ছাড়া সব বিদেশিদেরই বয়স ছিল তিরিশের উপরে। এ বার চিমা ও মর্সেলার বয়সই শুধু ৩০। অমরজিৎ সিংহ কিয়াম, সেমবোই হাওকিপ-সহ একঝাঁক প্রতিশ্রুতিমান ভারতীয় ফুটবলারও নেওয়া হয়েছে। এঁদের সঙ্গে রয়েছেন অভিজ্ঞ বলবন্ত সিংহ, রাজু গায়কোয়াড়, অরিন্দম ভট্টাচার্য, আদিল খান, সৌরভ দাসরা। তারুণ্যকে অস্ত্র করেই রিয়াল মাদ্রিদের মতো ‘ডিরেক্ট ফুটবল’ খেলার পরিকল্পনা রয়েছে ম্যানুয়েলের।

আইএসএলের প্রস্তুতিতে কখনও ৪-৪-২ ছকে চিমাদের খেলিয়েছেন। কখনও আবার ৪-৩-৩ ছক বেছে নিয়েছেন ম্যানুয়েল। জানা গিয়েছে, শনিবার সকালে ম্যাচ অনুশীলনেও একাধিক ছক নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন তিনি। জামশেদপুরের বিরুদ্ধে লাল-হলুদের রণকৌশল কী হবে? রিয়াল মাদ্রিদ যুব দলের প্রাক্তন কোচের জবাব, ‘‘ফুটবলারদের কার কী রকম দক্ষতা, জেনে নিয়েছি। আমাদের যা দল, তাতে একাধিক ছকে খেলতে পারি।’’ আত্মবিশ্বাসী ম্যানুয়েল যোগ করলেন,‘‘প্রত্যেক ম্যাচেই হয়তো বিভিন্ন ধরনের ছকে আমাদের খেলতে দেখতে পাবেন।’’

চূড়ান্ত রণকৌশল গোপন রাখার মতোই ম্যানুয়েল ধোঁয়াশা রাখছেন প্রথম একাদশে চার বিদেশি কারা হবেন, তা নিয়ে। আক্রমণ ভাগে চিমা, রক্ষণে টমিস্লাভের খেলা কার্যত নিশ্চিত। বাকি দুই বিদেশি কারা হবেন তা নিয়েই ধোঁয়াশা রয়েছে। আগের কোচ রবি ফাওলার ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগেই মোটামুটি প্রথম একাদশ বেছে নিয়ে বিশেষ অনুশীলন করাতেন। ম্যানুয়েল সেই রাস্তায় হাঁটেননি। এ দিনের অনুশীলন ম্যাচে প্রত্যেককেই খেলিয়েছেন। তাই শেষ পর্যন্ত তিনি কাদের রাখবেন, তা রহস্যই থেকে গেল।

চিমা যে শুধু তাঁর প্রধান অস্ত্র নন, বড় ভরসাও, লাল-হলুদ কোচ তা খোলাখুলি বলে দিলেন, ‘‘চিমা দুর্দান্ত। ও নিজে গোল করবে। সতীর্থদেরও গোল করতে সাহায্য করবে।’’ আরও বললেন,‘‘চিমার মতো ফুটবলারকে পেয়ে দারুণ লাগছে। পুরো দলকে ওর পাশে থাকতে হবে। তা হলেই চিমার পক্ষে উন্নতি করা সম্ভব।’’

জামশেদপুরও এই মরসুমে দলে বেশ কিছু পরিবর্তন করেছে। গত বার ২০ ম্যাচে ২৭ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে শেষ করেছিল তারা। আক্রমণভাগের শক্তি বাড়াতে জামশেদপুর কোচ আওয়েন কয়েল এ বার কেরল থেকে অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকার জর্ডান মারে ও এফসি গোয়া থেকে ঈশান পণ্ডিতাকে সই করিয়েছেন। স্কটিশ প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন রেঞ্জার্স এফসিতে খেলা স্ট্রাইকার গ্রেগ স্টুয়ার্ট যোগ দিয়েছেন জামশেদপুরে। গত কয়েক দিন ধরে প্রতিপক্ষের ম্যাচের ভিডিয়ো দেখে প্রস্তুতি নেওয়া লাল-হলুদ কোচ বললেন, ‘‘জামশেদপুর দলে বেশ কিছু পরিবর্তন হয়েছে ঠিকই। তবে গত মরসুমের অনেক ফুটবলারকেই ওরা রেখে দিয়েছে। তাই আগের বারের মতোই খেলতে পারে ওরা। জানি কী করতে হবে।’’ এর পরেই সমর্থকদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ‘‘এ বার ভাল ফল করার ব্যাপারে আমরা আত্মবিশ্বাসী।’’

স্পেনীয় কোচের আশ্বাসবাণীতে লাল-হলুদ সমর্থকেরা কতটা নিশ্চিত হলেন, রবিবার জামশেদপুর ম্যাচের পরেই বোঝা যাবে!

রবিবার আইএসএলে: এসসি ইস্টবেঙ্গল বনাম জামশেদপুর এফসি (সন্ধে ৭.৩০, স্টার স্পোর্টস টু চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার)।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement