আস্থা: লাল-হলুদ সমর্থকদের ভরসা অরিন্দম। ছবি এসসি ইস্টবেঙ্গল।
অষ্টম আইএসএল শুরু হওয়ার আগে এসসি ইস্টবেঙ্গলকে নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। দীর্ঘ টানাপড়েনের পরে যখন লগ্নিকারী সংস্থার কর্তারা আইএসএলে খেলার সিদ্ধান্ত নেন, তখন থেকেই আশঙ্কা হচ্ছিল কেমন হল দল? গত মরসুমে এগারো দলের মধ্যে নবম হয় লাল-হলুদ। তার চেয়েও যন্ত্রণার ছিল এটিকে-মোহনবাগানের কাছে দু’টি ডার্বিতেই হারের লজ্জা।
আমার আশঙ্কা যে অমূলক ছিল না, প্রথম ম্যাচেই প্রমাণিত। জামশেদপুর এফসির আক্রমণভাগে যদি রয় কৃষ্ণ, হুগো বুমোস বা মনবীর সিংহের মতো এক জন ফুটবলারও থাকত, তা হলে হার অনিবার্য ছিল। অনেকেই বলতে পারেন, একটা ম্যাচ দেখেই কখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। কিন্তু আমরা ঘর পোড়া গরু, তাই সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ডরাই। কারণ, দ্বিতীয় ম্যাচটাই দুর্ধর্ষ এটিকে-মোহনবাগানের বিরুদ্ধে। লাল-হলুদের ফুটবলাররা সে দিন যে ফুটবল খেলেছিল, তাতে ডার্বিতে কপালে দুঃখ রয়েছে বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই।
প্রথম ম্যাচের নিরিখে আমার পর্যবেক্ষণ— গোলকিপিং ছাড়া এসসি ইস্টবেঙ্গলের সব বিভাগেই প্রচুর সমস্যা রয়েছে। মাঝমাঠে বল ধরে খেলার মতো ফুটবলার চোখে পড়েনি। ছিল না কোনও ব্লকারও। ফলে প্রবল চাপ পড়ছিল রক্ষণের উপরে। শনিবারের ডার্বিতে এই সুযোগটাই নেওয়ার চেষ্টা করবে কৃষ্ণ, বুমোসরা।
এসসি ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণভাগও খুব একটা শক্তিশালী বলে মনে হয়নি। প্রথমত, কোচ ম্যানুয়েল দিয়াস রাইটব্যাকে মাঝমাঠের ফুটবলার মহম্মদ রফিককে খেলিয়ে বিরাট ভুল করেছিলেন। এই ডার্বিতে অঙ্কিত মুখোপাধ্যায়কে দলে ফেরানো উচিত।।
এই মরসুমে লাল-হলুদের নতুন তারকা ড্যানিয়েল চিমাকে নিয়ে সমর্থকদের মতো আমারও প্রবল আগ্রহ ছিল। নরওয়েতে সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তার উপরে ওর নাম আবার চিমা। কিন্তু প্রথম ম্যাচে হতাশ হয়েছি ওর খেলা দেখে। বরং অনেক বেশি ভাল লেগেছে আন্তোনিয়ো পেরোসেভিচকে। দু’পায়ে খেলা রয়েছে। আমার ধারণা আন্তোনিয়ো লোপেস হাবাসের মতো ধুরন্ধর কোচ এত ক্ষণে নিশ্চয়ই ওকে আটকানোর রণকৌশল তৈরি করে ফেলেছেন।
ডার্বির ফল নিয়ে যদিও ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না। তবুও শক্তির বিচারে এটিকে-মোহনবাগানকে একটু এগিয়েই রাখব। ওরা প্রায় একই দল ধরে রেখেছে গত কয়েক বছর ধরে। তার সঙ্গে এ বার সই করিয়েছে বুমোস, লিস্টনের মতো দুর্দান্ত ফুটবলারদের। তবে কেউ যদি মনে করেন, ডার্বিতে সবুজ-মেরুনের জয় নিশ্চিত, তা হলে ভুল করবেন। এই ম্যাচ একেবারেই আলাদা। আর ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গল বরাবরই ভয়ঙ্কর। অতীতে তার বহু নিদর্শন রয়েছে।
১৯৭৫ সালে আমি মোহনবাগানে ছিলাম। আইএফএ শিল্ড ফাইনালে ইস্টবেঙ্গল আমাদের ৫-০ চূর্ণ করেছিল। আমি একাই খেয়েছিলাম চারটি গোল। পরের বছরই সই করেছিলাম লাল-হলুদে। মনে আছে, ’৭৭ সালে একটা বড় ম্যাচের আগে মোহনবাগানকেই সকলে এগিয়ে রেখেছিল। আমি মাঠে নামতেই গ্যালারি থেকে বিদ্রুপ শুরু হয় যায়, ‘‘ভাস্কর খেলছে যখন, পাঁচ গোল খাবে ইস্টবেঙ্গল।’’ শেষ পর্যন্ত আমরাই জিতেছিলাম। ময়দানে তো প্রচলিতই আছে— পিছিয়ে থাকা ইস্টবেঙ্গল আহত বাঘের মতোই ভয়ঙ্কর। তাই বিশ্বাস করি, শনিবারের ডার্বি জিতে চমক দিতে পারে লাল-হলুদের ফুটবলাররা। কাজটা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়।
এই ডার্বিতে লাল-হলুদের ভাগ্য নির্ভর করছে কয়েকটি বিষয়ের উপরে। এক) রক্ষণ সংগঠনে জোর দিতে হবে। এই দায়িত্বটা গোলরক্ষক অরিন্দম ভট্টাচার্যকেই নিতে হবে। কৃষ্ণ, বুমোস, মনবীরকে সব সময় কড়া পাহারায় রাখতে হবে। ওরা যেন বল নিয়ে ঘুরতে না পারে। ওদের বক্সের মধ্যে হেড করতেও দেওয়া চলবে না। দুই) মাঝমাঠে নিজেদের মধ্যে প্রচুর পাস খেলতে হবে। দুই স্টপারের সামনে এক জন ব্লকার রাখতেই হবে, যাতে মাঝমাঠেই বিপক্ষের আক্রমণ থামিয়ে দেওয়া যায়। দুই প্রান্ত দিয়ে আক্রমণ শানাতে হবে। তিন) অরিন্দমের মতো দক্ষ নয় এ বার সবুজ-মেরুনের নতুন গোলরক্ষক অমরিন্দর সিংহ। তাই বক্সের বাইরে থেকে গোল লক্ষ্য করে শট মারার সাহস দেখাতেই হবে চিমা, পেরোসেভিচদের। আমার ধারণা, চাপে পড়ে অমরিন্দর ভুল করবেই।
ডার্বি সাহসীরাই জেতে!