সুনীল ছেত্রী। —ফাইল চিত্র
১৯ বছরের কেরিয়ার তাঁর। এই ১৯ বছরে ভারতের হয়ে ১৪৫টি ম্যাচ খেলেছেন সুনীল ছেত্রী। গোল করেছেন ৯৩টি। কেরিয়ারের শেষ দিকে এসে পৌঁছেছেন তিনি। কিন্তু এখনও গোলের খিদে কমেনি তাঁর। যদিও দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গিয়েছে। মানসিকতায় বদল এসেছে। কাতারের দোহায় এএফসি এশিয়ান কাপে খেলতে নামার আগে সে কথা বলেছেন সুনীল।
সুনীল কবে অবসর নেবেন সেই বিষয়ে গত কয়েক মাসে অনেক জল্পনা শোনা গিয়েছে। ভারতের কোচ ইগর স্তিমাচ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে শেষ সিদ্ধান্ত সুনীল নিজে নেবেন। তাঁকে কোনও চাপ দেওয়া হবে না। অবসরের প্রসঙ্গ উঠেছে সুনীলের মুখেও। তিনি বলেন, ‘‘এশিয়ান কাপের আগে আমার স্ত্রী সোনমের সঙ্গে কথা হয়েছিল। ও বলেছিল, আমি খুব চাপ নিয়ে ফেলি। আমাকে উপভোগ করতে বলেছিল। এক দম ঠিক কথা বলেছিল সোনম। ছোটবেলায় যে ভাবে শুধু উপভোগ করতাম, সেটাই এ বার করার চেষ্টা করব। মাঠে নেমে অতিরিক্ত চাপ নেব না। অবসরের আগে যে ক’দিন খেলব, এই মানসিকতা নিয়েই মাঠে নামব।’’
আগে মাঠে নেমে উত্তেজিত হয়ে পড়তেন। কিন্তু এখন অনেক শান্ত থাকেন। মাথা গরম করেন না। তাঁর এই বদলের কৃতিত্ব সন্তানকে দিয়েছেন ভারত অধিনায়ক। তিনি বলেন, ‘‘এখন আমি অনেক হাসিখুশি ও শান্ত থাকি। বাবা হওয়ার পর থেকে আমার এই বদল এসেছে। যেটুকু সময় পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে পারি সেটাই আমাকে নতুন করে মাঠে নামার এনার্জি দেয়। সোনমের জন্যই সব হচ্ছে। আমি যাতে রোজ ৮ ঘণ্টা ঘুমোতে পারি, ভাল করে অনুশীলন করতে পারি, তার জন্য সন্তানকে ওই বেশির ভাগ সময় সামলায়।’’
মাঠে নেমে উপভোগ করলেও তার আগের প্রস্তুতিতে কোনও খামতি রাখতে রাজি নন সুনীল। শৃঙ্খলার কথা শোনা গিয়েছে তাঁর মুখে। সুনীল বলেন, ‘‘শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। কারণ, ফুটবল দলগত খেলা। সেখানে একে অপরের সাহায্যের প্রয়োজন হয়। বোঝাপড়া ভাল হওয়ার বড় মাধ্যম এই শৃঙ্খলা। অনুশীলনে পরিশ্রম করা। আমি চিরকাল শৃঙ্খলা মেনে চলার চেষ্টা করেছি। আগামী দিনেও সেটাই করব।’’
এর আগে দু’বার (২০১১ ও ২০১৯) এশিয়ান কাপে খেলেছেন সুনীল। এটি তাঁর তৃতীয় প্রতিযোগিতা। সেখানে ভারতের গ্রুপে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, উজবেকিস্তান, সিরিয়ার মতো দল। তাদের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ নিতে তৈরি সুনীল। তিনি বলেন, ‘‘এশিয়ান কাপ আমাদের জন্য খুব বড় প্রতিযোগিতা। সেখানে অস্ট্রেলিয়া, উজবেকিস্তানের মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে খেলতে হবে। গত ৭-৮ বছরে আমাদের দেশের ফুটবল অনেক উন্নতি করেছে। কিন্তু ঠিক কতটা উন্নতি হয়েছে তা বোঝার সব থেকে বড় মঞ্চ এই প্রতিযোগিতা। এখানে ভাল করতে পারলে গোটা বিশ্বের নজর আমাদের উপর পড়বে।’’
২০১১ সালের এশিয়ান কাপেও প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খেলেছিল ভারত। ০-৪ গোলে হেরেছিলেন সুনীলেরা। এ বার অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে জেতা অত সহজ হবে না বলে জানিয়েছেন সুনীল। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের প্রস্তুতি ভাল হয়েছে। সে বার অস্ট্রেলিয়ার ফুটবলারদের বিষয়ে আমরা কিছুই জানতাম না। কিন্তু এখন ওদের শক্তি, দুর্বলতা জানি। সেই হিসাবে নিজেদের পরিকল্পনা করেছি। কিন্তু সেটা মাঠে নেমে করাটাই আসল। দলের সব ফুটবলার নিজেদের সেরাট দিতে মুখিয়ে রয়েছে। একটা করে ম্যাচ ধরে এগোতে চাই।’’
এশিয়ান কাপে ভারতের প্রথম ম্যাচ ১৩ জানুয়ারি। প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। ১৮ জানুয়ারি উজবেকিস্তান ও ২৩ জানুয়ারি সিরিয়ার বিরুদ্ধে গ্রুপের বাকি দু’টি ম্যাচ খেলবেন সুনীলেরা।