বুধবার এটিকে-মোহনবাগানের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার কথা ভারতীয় দলের। সুনীল-সহ সকলকেই খেলানোর পরিকল্পনা রয়েছে জাতীয় কোচের। দেখে নিতে চান, ভুলত্রুটি কতটা শুধরে নিতে পারলেন ফুটবলাররা!
প্রস্তুতি: কলকাতায় পৌঁছেই অনুশীলনে নেমে পড়লেন সুনীলরা। সোমবার সল্টলেকে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
এএফসি এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে যাত্রা শুরু করার আগে ভারতীয় দলের কোচ ইগর স্তিমাচের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ফুটবলারদের লক্ষ্যভেদে ব্যর্থতা! বাহরিন ও বেলারুশের বিরুদ্ধে শেষ দু’টি আন্তর্জাতিক ফিফা ফ্রেন্ডলিতে সুনীল ছেত্রী-হীন ভারতীয় দল দুর্দান্ত খেলেও হেরে গিয়েছিল। প্রথম ম্যাচে হার ১-২ গোলে। দ্বিতীয় দ্বৈরথের ফল ছিল ০-৩। অথচ এই দু’টি ম্যাচেই একাধিক সুযোগ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ফুটবলারদের নিশানা ঠিক না থাকায় গোল হয়নি। এএফসি এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের ম্যাচগুলিতে আর এই ভুলের পুনারাবৃত্তি চান না ইগর।
কর্নাটকের বেল্লারিতে প্রথম পর্বের প্রস্তুতি শিবির শেষ করে সোমবার দুপুরে কলকাতায় পৌঁছন সুনীলরা। সময় নষ্ট না করে সন্ধ্যায় ফুটবলারদের নিয়ে সল্টলেক স্টেডিয়াম সংলগ্ন অনুশীলন মাঠে নেমে পড়েন ইগর। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে তৃতীয় হওয়া ক্রোয়েশিয়া জাতীয় দলের ডিফেন্ডার ফুটবলারদের বারবার বোঝাচ্ছেন, আন্তর্জাতিক ম্যাচে গোল করার সম্ভাবনা এমনিতেই অনেক কমে যায়। তাই লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়া চলবে না। কোথায় সমস্যা হচ্ছে ভি পি সুহের, মনবীর সিংহদের? চার বছর ভারতীয় দলের কোচিং করিয়ে ইগরের উপলব্ধি, অধিকাংশ ফুটবলারের প্রাথমিক শিক্ষাটাই ঠিক মতো হয়নি। ফলে ভুলের পুনরাবৃত্তি অব্যাহত। ব্যতিক্রম সুনীল। ঘনিষ্ট মহলে ভারতীয় দলের কোচ ইউরোপের ফুটবল অ্যাকাডেমিগুলির অনুশীলন পদ্ধতির নানা কাহিনি শুনিয়েছেন। কাদের মধ্যে স্ট্রাইকার হওয়ার প্রতিভা রয়েছে, কারা ভাল ডিফেন্ডার হতে পারে, মাঝমাঠের ফুটবলার হওয়ার দক্ষতা কাদের রয়েছে, তা শৈশবেই বেছে নিয়ে বিশেষ অনুশীলন করানো হয়। স্ট্রাইকারদের নির্দিষ্ট লক্ষ্যে দিনের পর দিন শুধু বল মারার অনুশীলন করানো হয়। এর জন্য আলাদা কোচও থাকেন। জাতীয় দলের ফুটবলার ও তাঁর সহকারীদের কাছে ইগর খোঁজ নিয়েছিলেন, ভারতের অ্যাকাডেমিগুলিতে এই ধরনের অনুশীলন করানো হয় কি না।
সমস্যা চিহ্নিত করার পরেও প্রতিকার কেন করতে পারছেন না ইগর? ভারতীয় দলের কোচের মতে, সর্বোচ্চ পর্যায়ে ফুটবলারদের নতুন করে শেখানো কঠিন। তা সত্ত্বেও অবশ্য হাল ছাড়ছেন না ইগর। চেষ্টা করছেন, যতটা সম্ভব ভুলত্রুটি শুধরে নেওয়ার। সোমবার সন্ধ্যার অনুশীলনেই দেখা গেল, ওয়ার্ম আপের পরে ফুটবলারদের পাঁচটি দলে ভাগ করে দিলেন। প্রতি দলে চার জন করে ফুটবলার। বল বুকে রিসিভ করে অপর দলের ফুটবলারের পায়ে দেওয়ার অনুশীলন দীর্ঘ ক্ষণ করালেন তিনি। বলে দিলেন, কোনও অবস্থাতেই বল যেন মাটিতে না পড়ে। এর পরে মাঠের দুই প্রান্ত দাঁড়িয়ে সুনীলরা একে অপরকে লম্বা পাস দিচ্ছিলেন। কেউ ভুল করলেই অনুশীলন থামিয়ে ইগর বলছিলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভুল পাস দেওয়া মানেই বিপর্যয় ডেকে আনা। বিপক্ষের হাতে ম্যাচ তুলে দেওয়া।’’ আসলে ইগর যে এখনও ভুলতে পারেননি ১৯৯৮ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে এগিয়ে গিয়েও ১-২ গোলে হারের যন্ত্রণার স্মৃতি। পুরো ম্যাচে জ়িনেদিন জ়িদানকে কার্যত নড়তে দেননি তিনি। বারবার আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘‘আমাদের একটা ভুল পাসেই ম্যাচটা হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল। ১-১ চলছিল। ৭০ মিনিটে লিলিয়ান থুঁর ২-১ এগিয়ে দিয়েছিল ফ্রান্সকে। আমরা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি।’’বিমানযাত্রার ক্লান্তির কারণেই সোমবার অবশ্য ঘণ্টা দেড়েকের বেশি অনুশীলন করাননি ইগর। বুধবার এটিকে-মোহনবাগানের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার কথা ভারতীয় দলের। সুনীল-সহ সকলকেই খেলানোর পরিকল্পনা রয়েছে জাতীয় কোচের। দেখে নিতে চান, ভুলত্রুটি কতটা শুধরে নিতে পারলেন ফুটবলাররা!