সিদ্ধার্থের সঙ্গে জয়দীপ। নিজস্ব চিত্র
আগ্রহ নিয়ে ছেলের খেলা দেখতে এসেছিলেন মা। তাই ছেলের দলের হেরে যাওয়ার ধাক্কা সামলাতে পারেননি। মাঠে খেলা দেখতে দেখতেই স্ট্রোক হয় তাঁর। চোখের সামনে সেই ঘটনা দেখতে হয়েছিল সিদ্ধার্থ নস্করকে। গোটা বিশ্বটাই এক মুহূর্তের জন্যে উল্টে গিয়েছিল তার কাছে। পা থেকে সরে গিয়েছিল ফুটবল। দু’বছর খেলা থেকে দূরে থাকার পর আবার ফুটবলে ফিরল সিদ্ধার্থ। সৌজন্যে আইএফএ-র প্রাক্তন সচিব জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। কলকাতা ফুটবল লিগের পঞ্চম ডিভিশনের ক্লাব ক্যালকাটা ইউনাইটেডের হয়ে মঙ্গলবার সই করেছে সিদ্ধার্থ। জয়দীপই যাবতীয় উদ্যোগ নিয়েছেন।
আদতে ক্যানিংয়ের ছেলে বছর ষোলোর সিদ্ধার্থ এখন থাকে টালিগঞ্জে। ময়দানের আর পাঁচটা ফুটবলারের মতো খুবই অভাবী পরিবার থেকে উঠে আসা তার। পিসেমশাইয়ের উৎসাহে ফুটবল খেলা শুরু। পরে মা-ও সমান উৎসাহ দিতে থাকেন তাকে। ২০১৭ সালে প্রথম বার কোনও ক্লাবে সই। প্রথমে অ্যাভিনিউ ক্লাব, সেখান থেকে সাদার্ন সমিতি ঘুরে ফ্রেন্ডস অব স্টেডিয়ামে সই করে সে। ফ্রেন্ডস অব স্টেডিয়ামের হয়ে খেলার সময়েই সেই দুর্ঘটনা ঘটে তার জীবনে।
আনন্দবাজার অনলাইনকে সে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে জয়দীপ বললেন, “২০১৯-এর কলকাতা লিগ চলছিল। বেলেঘাটের একটা মাঠে খেলা হচ্ছিল। বিপক্ষ দলে অনেক বড় চেহারার এবং বয়সের ফুটবলার খেলছিল। সিদ্ধার্থের মা স্টেডিয়ামে বসেই ছেলের খেলা দেখছিলেন। প্রথমে এগিয়ে থাকলেও পরে ওরা হেরে গিয়েছিল। ছেলের ক্লাবের হেরে যাওয়া মেনে নিতে পারেননি ওর মা। মাঠেই স্ট্রোক হয়। হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও বাঁচানো যায়নি।”
পরে জয়দীপ নিজে সিদ্ধার্থের বাড়িতে যান। বুট উপহার দিয়ে প্রতিশ্রুতি দেন ফুটবলের মূলস্রোতে তাকে ফিরিয়ে আনার। সেই প্রতিশ্রুতিই রাখলেন জয়দীপ। বললেন, “ওর পাশে দাঁড়ালে আরও ১০০টা ফুটবলার সাহস করে খেলতে এগিয়ে আসবে। সিদ্ধার্থ খুবই প্রতিশ্রুতিমান। ভবিষ্যতে ভাল ক্লাবে খেলতে পারে। ক্যালকাটা ইউনাইটেড ক্লাবে ও সই করায় আমি খুবই খুশি। আশা করি ভবিষ্যতে আরও বড় ক্লাবে খেলবে।”
ব্রাজিলের নেমারের ভক্ত সিদ্ধার্থ। রাইট-উইংয়ে খেললেও নেমারের স্কিল, দক্ষতা সবই ভাল লাগে। সিদ্ধার্থ জানাল, মায়ের হার্টের সমস্যা থাকায় সে দিনের ওই ম্যাচের পর নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। ওই ঘটনার পর ক্যানিংয়ে ফিরে অনেক দিন বসে থাকতে হয়েছিল। জয়দীপের উদ্যোগে ফুটবলে ফিরতে পেরে খুশি সিদ্ধার্থ। ভবিষ্যতে ভারতের হয়ে খেলাই লক্ষ্য। স্থানীয় ফুটবলে মোহনবাগানের হয়ে খেলতে চায় সে।