রোমান রেমচুক। ছবি: টুইটার থেকে
রাশিয়ার সামরিক অভিযানে আতঙ্কের প্রহর গুনছেন ইউক্রেনের মানুষ। যাঁরা দেশে নেই তাঁরাও রাতে চোখের পাতা এক করতে পারছেন না পরিবার-পরিজনদের চিন্তায়। দেশে থাকা মানুষগুলো কী খাচ্ছেন? কোথায় থাকছেন? কী ভাবে বেঁচে আছেন? সব সময় খবর পাওয়া যাচ্ছে না। তাই কাটছে না উদ্বেগও।
পর্তুগালে রয়েছেন ইউক্রেনের ফুটবলার রোমান রেমচুক। খেলেন লিসবনের ক্লাব বেনফিকায়। দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য স্ট্রাইকার তিনি। রবিবার প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ ছিল ভিটোরিয়া এসসি-র বিরুদ্ধে। প্রথম একাদশে ছিলেন না রোমান। পরিবর্ত ফুটবলার হিসেবে ম্যাচের ৬২ মিনিটে মাঠে নামেন। তাঁকে দেওয়া হয় ক্যাপ্টেনের আর্ম ব্যান্ড। এ পর্যন্ত সব কিছুই ছিল আর পাঁচটা ফুটবল ম্যাচের মতো।
রোমান মাঠে নামতেই উঠে দাঁড়াল গোটা গ্যালারি। বেনফিকা সমর্থকরা অভিবাদন জানালেন তাঁদের প্রিয় দলের তারকা স্ট্রাইকারকে। তাঁদের হাতে আকাশি নীল-হলুদ পোস্টার, ব্যানার। ইউক্রেনের পাশে, ইউক্রেনের মানুষের পাশে থাকার বার্তা লেখা সেগুলোয়। বার্তা রোমানের পাশে থাকারও।
অন্য দিনের মতোই কোচের নির্দেশ শুনে মাঠে নেমেছিলেন রোমান। প্রথমটায় ততটা খেয়াল করেননি গ্যালারিতে সমর্থকদের এই আয়োজন। যখন দেখলেন গোটা স্টেডিয়াম দাঁড়িয়ে তাঁকে অভিবাদন জানাচ্ছে, তাঁর এবং ইউক্রেনের পাশে থাকার বার্তা দিচ্ছে, এক রকম বাকরুদ্ধ হয়ে পড়লেন। গ্যালারি ভর্তি সমর্থকের করতালি, স্লোগানের প্রত্যুত্তর দিচ্ছিলেন করতালি দিয়েই। চার দিকে ঘুরে দেখলেন। একের পর এক পোস্টারে পাশে থাকার বার্তা। নিখাদ ভালবাসার স্পর্শ। বিপক্ষের ডিফেন্ডারদের বোকা বানিয়ে গোল করা যাঁর সহজাত, তিনিই সামলাতে পারলেন না নিজেকে। মাঠের মাঝে দাঁড়িয়ে কেঁদে ফেললেন রোমান। তাঁর সেই বিহ্বল মুহূর্তের ভিডিও টুইট করেছে বেনফিকা।
বেনফিকার বহু জয়ের নায়ক রোমান। গোলের লড়াইয়ে মুখোমুখি হলে না হয় বুঝে নিতেন রাশিয়াকে। কিন্তু এ যে গোলা-বারুদের লড়াই। বড্ড অসম। রোমানের ইউক্রেন পারবে রাশিয়ার সঙ্গে যুঝতে? রোমান কি পারবেন মরসুম শেষে নিজের দেশে শান্তিতে ছুটি কাটাতে যেতে। আত্মীয়, পরিজন, বন্ধুদের সঙ্গে আবার দেখা হবে তো? সব কিছুই অনিশ্চিত। বিদেশে নিরাপদে থাকলেও তাঁর ক্ষতবিক্ষত মন পড়ে আছে ইউক্রেনে। এমন কঠিন দিনে ভিনদেশীরা এ ভাবে আগলে রাখতে চাইলে চোখের জল তো বাধ ভাঙবেই।