স্পেনের বিশ্বকাপজয়ী মহিলা ফুটবল দল। ছবি: টুইটার।
সদ্য সমাপ্ত মহিলাদের বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে প্রবল উৎসাহ, উন্মাদনা দেখা গিয়েছে। যা অতীতে মহিলাদের আর কোনও বিশ্বকাপে দেখা যায়নি। তবু আর্থিক দিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে মহিলাদের ফুটবল। বিশেষজ্ঞদের একাংশের আশা, বিশ্বকাপ ঘিরে তৈরি হওয়া উৎসাহ বদলে দিতে পারে মহিলাদের ফুটবল।
পুরুষ এবং মহিলাদের ফুটবলে আর্থিক পার্থক্য প্রচুর। ফিফার ঘোষিত বিশ্বকাপের পুরস্কার মূল্য থেকেই তা পরিষ্কার। রবিবার বিশ্বকাপ জয়ী স্পেনের মহিলা ফুটবল দল পেয়েছে ৪.২৯ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৩৫ কোটি ৬৭ কোটি টাকা। অথচ গত বছর বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে লিয়োনেল মেসির আর্জেন্টিনা পেয়েছিল ৪২ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। পুরুষদের পুরস্কার মূল্যের ১০ ভাগের এক ভাগ পেয়েছেন মহিলারা।
ইউরোপীয় ফুটবলের প্রধান পাঁচ শক্তি হিসাবে ধরা হয় ইংল্যান্ড, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইটালিকে। এই পাঁচ দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলি মহিলাদের বিশ্বকাপ সম্প্রচারের অধিকার পেতে ফিফাকে এক মিলিয়ন ডলার (প্রায় আট কোটি ২৩ লক্ষ টাকা) থেকে ১০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৮৩ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা) দেয়। অথচ এই চ্যানেলগুলিই পুরুষদের বিশ্বকাপের সময় ১০০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৮৩১ কোটি টাকা) থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ১৬৬২ কোটি টাকা) পর্যন্ত দিতে প্রস্তুত থাকে ফিফাকে। ফিফার টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান জিল এলিস বলেছেন, ‘‘টেলিভিশন সংস্থাগুলির সঙ্গে আমাদের যথেষ্ট দরদাম করতে হয়েছে। প্রথমে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, সেটা মানা খুব কঠিন ছিল।’’
একটি সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, বিশ্বের প্রথম সারির ক্লাবগুলির মোট মুনাফার এক শতাংশ পর্যন্ত আসে মহিলাদের ফুটবল দল থেকে। যেমন ২০২০-২১ আর্থিক বছরে রিয়াল মাদ্রিদের পুরুষদের ফুটবল দল থেকে লাভ হয়েছে ৭১৩.৮ মিলিয়ন ইউরো বা প্রায় ৬৪৬৬ কোটি টাকা। একই বছরে মহিলা দল থেকে লাভের পরিমাণ ১.৪ মিলিয়ন ইউরো বা প্রায় ১২ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকা।
এখনও পর্যন্ত প্রথম সারির ক্লাবগুলির একাংশের কর্তৃপক্ষ পুরুষ দলের সমান সুযোগ-সুবিধা দিতে চান না। পুরুষদের অনুশীলনের সময় ক্লাবের কোনও পরিকাঠামোই ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না মহিলা দলের ফুটবলারদের। ইংল্যান্ডের ফুটবলার মলি হোল্ডার খেলেন স্টোক সিটির হয়ে। তিনি বলেছেন, ‘‘জিম ব্যবহার করার জন্য আমাদের সকাল সকাল ক্লাবে যেতে হয়। তখন ফিজিয়োর সাহায্য নিতে পারি আমরা। ভিডিয়ো বিশ্লেষণের জন্য আলাদা সময় দেওয়া হয় আমাদের। এই সুবিধাগুলো আমরা খুব বেশি দিন পাচ্ছি না। এখন অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এখন আমরাও নিজেদের স্টোক সিটির অংশ বলে ভাবতে পারি।’’ একটা সময় পর্যন্ত মহিলা দলের জন্য আলাদা কোনও কোচ রাখত না ক্লাবগুলি। পুরুষদের দলের কোনও সহকারী কোচ কাজ চালাতেন।
ফুটবল বিশেষজ্ঞদের একাংশের আশা, এ বারের বিশ্বকাপের পর মহিলাদের ফুটবল সম্পর্কে ধারনা পরিবর্তন হবে। হোল্ডার বলেছেন, ‘‘আশা করি এ বার আরও বেশি মানুষ আমাদের খেলা দেখবেন। অনেকে হয়তো রাত জাগার কথাও ভাববেন। স্থানীয় দলের খেলা মাঠে গিয়ে দেখবেন।’’
খেলায় বিনিয়োগ অনেকটাই নির্ভর করে জনপ্রিয়তার উপর। মহিলাদের ফুটবল ধীরে ধীরে অনেক উন্নতি করলেও জনপ্রিয়তা মাপকাঠিতে পিছিয়েই ছিল। এ বারের বিশ্বকাপ নিয়ে উৎসাহ হয়তো সেই বাধা অতিক্রম করতে সাহায্য করবে। তা হলে বাড়বে আর্থিক লাভও।