একাগ্র: পর্তুগালের অভিযান শুরুর প্রস্তুতি রোনাল্ডোর। ছবি রয়টার্স।
কে বলবে চব্বিশ ঘণ্টা পরেই ঘানার বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে কাতার বিশ্বকাপে যাত্রা শুরু করবে পর্তুগাল?
কে বলবে সম্ভবত শেষ বিশ্বকাপে খেলবেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো?
বুধবার দুপুরে দোহার কাতরের ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে সাংবাদিক বৈঠকের পুরোটা জুড়ে শুধু ছিল ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে সি আর সেভেনের বিচ্ছেদ নিয়ে যাবতীয় চর্চা। পর্তুগালের প্রতিপক্ষ যেন ঘানা নয়, আসলে ম্যান ইউ!
অধিনায়ক রোনাল্ডো সাংবাদিক বৈঠকে এলে ম্যান ইউয়ের প্রসঙ্গ উঠবেই। তাই ব্রুনো ফের্নান্দেসকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন পর্তুগালের কোচ ফের্নান্দো স্যান্টোস। তাতেও রেহাই পাননি তিনি। ইংল্যান্ডের এক সাংবাদিক প্রথমেই ব্রুনোকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘ম্যান ইউয়ের সঙ্গে রোনাল্ডোর বিবাদের জেরে আপনাদের সম্পর্কেও তো চিড় ধরেছিল। এখন কি পরিস্থিতি বদলেছে?’’ রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিলেন ম্যান ইউ তারকা। বললেন, ‘‘প্রথমত, রোনাল্ডোর সঙ্গে আমার সম্পর্কের অবনতি হয়নি। দ্বিতীয়ত, ওর সঙ্গে ম্যান ইউ নিয়ে কোনও রকম আলোচনাই হয় না। আমাদের একটাই লক্ষ্য পর্তুগালের হয়ে বিশ্বকাপ জেতা। সকলেরই একই রকম মানসিকতা। তাই অন্য কোনও আলোচনা হয়নি।’’ যোগ করলেন, ‘‘এটা এমন স্পর্শকাতর বিষয়, যার সঙ্গে ওর পরিবারের স্বার্থও জড়িয়ে রয়েছে। তাই কোনও অবস্থাতেই ক্রিশ্চিয়ানোর সঙ্গে এই ব্যাপারে কথা বলতে পারি না।’’
ব্রুনোর উত্তরে যে সাংবাদমাধ্যম সন্তুষ্ট হয়নি, সহজেই বুঝে যান পর্তুগালের কোচ। তিনি বলার চেষ্টা করেন, ‘‘বিশ্বাস করুন, ম্যান ইউ নিয়ে রোনাল্ডোর সঙ্গে আমারও কোনও কথা হয়নি। এমনকি ও যখন আমার সঙ্গে একা দেখা করতে এসেছিল, তখনও এই বিষয়ে আলোচনা হয়নি।’’ প্রসঙ্গ ঘোরানোর জন্য বলতে শুরু করেছিলেন, ‘‘ঘানা দারুণ শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। ওরা যে কোনও মুহূর্তে ম্যাচের রং বদলে দিতে পারে। আমরা এই ম্যাচে মনোনিবেশ করছি এখন।’’
সপ্তাহখানেক আগেই ইংল্যান্ডের সংবাদমাধ্যম দাবি করেছিল, রোনাল্ডোর সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখছেন ব্রুনো। দু’জনের সম্পর্কে উষ্ণতা আর নেই। ড্রেসিংরুমে রোনাল্ডোর বাড়িয়ে দেওয়া হাত না ধরে ব্রুনো নাকি ব্যাগ গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। পর্তুগাল তারকা বললেন, ‘‘পুরোটাই রটনা। আসলে টানা দু’ঘণ্টা বিমানে বসে থাকার পরে যখন শিবিরে যোগ দিলাম, মেজাজটা সম্পূর্ণ অন্য ধরনের ছিল। তাই রোনাল্ডো যখন মজা করে জিজ্ঞেস করেছিল, তুমি বিমানের বদলে নৌকো করে এসেছো বলেই কি এত দেরি হল? সেই সময় ওর রসিকতা উপভোগ করতে পারিনি। সম্পর্ক যদি ঠিক নাই থাকে, তা হলে ও আমার সঙ্গে মজা কেন করবে?’’ এর পরেই যোগ করলেন, ‘‘রোনাল্ডো আমার আদর্শ। আমি গর্বিত ওর মতো কিংবদন্তির পাশে খেলার সুযোগ পেয়ে।’’ যোগ করেন, ‘‘তবে কোনও ঘটনাই তো দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না। যা হয়েছে, সকলেই দেখেছেন। হয়তো এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব কঠিন ছিল, কিন্তু রোনাল্ডোর মতো ব্যক্তিত্বের সিদ্ধান্তকে সম্মান করার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি। এটা নিয়ে আর আলোচনার প্রয়োজন নেই।’’
প্রশ্ন উঠছে ম্যান ইউয়ের সঙ্গে বিচ্ছেদের ঘটনা কি বিশ্বকাপে রোনাল্ডোর উপরে প্রভাব ফেলবে না? ব্রুনো ও ফের্নান্দো দু’জনেই বললেন, ‘‘একেবারেই না। দু’টো বিষয় এক করা ঠিক নয়। বিশ্বকাপে আমরা পর্তুগালের প্রতিনিধি। তা ছাড়া রোনাল্ডো পেশাদার ও অভিজ্ঞ। ক্লাবের সঙ্গে রোনাল্ডোর যা-ই হয়ে থাকুক, বিশ্বকাপে তার কোনও প্রভাব পড়বে না। আমরা একেবারেই চিন্তিত নই ওকে নিয়ে।’’
সাংবাদিক বৈঠকে না এলেও রোনাল্ডো গণমাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘ম্যান ইউয়ের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ওদের সঙ্গে আলোচনা করেই ক্লাব ছাড়ব ঠিক করি। সিদ্ধান্তটা দু’তরফেরই। তবে আমি কিন্তু আজও ম্যান ইউকে ভালবাসি। ভালবাসি সমর্থকদেরও। এই জায়গাটা চিরকাল একই রকম থাকবে। একইসঙ্গে আবার এটাই হয়তো নতুন পরীক্ষা দেওয়ার সেরা সময়। ব্যক্তিগত ভাবে ম্যান ইউকে বাকি মরসুম ও ভবিষ্যতের জন্য অনেক শুভেচ্ছা জানিয়ে রাখলাম।’’
রোনাল্ডোর প্রাক্তন সতীর্থ ওয়েন রুনি আরও একবার তোপ দেগেছেন। প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়ক সরাসরি বলে দিয়েছেন, ‘‘ওর সাক্ষাৎকার পড়লে যে কেউ লজ্জিত হবে। নিজের ক্লাবের প্রতি প্রত্যেকের দায়বদ্ধতা থাকা উচিত। রোনাল্ডোর জন্য নিয়ম বদলে যেতে পারে না। ম্যান ইউ তো ওরই ক্লাব ছিল, এখানে ও অনেক খুশি ছিল। তার পরে যা হয়েছে, সেটা দেখে মনে হয়েছে, ওই রকম একটা সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হওয়ার পরে ওকে আর দলে রাখা সম্ভব ছিল না।’’