মহড়া: সামনে আজ লেয়নডস্কির পোল্যান্ড। শেষ ষোলোর প্রস্তুতিতে মগ্ন এমবাপে। ছবি রয়টার্স।
আল সাদ স্টেডিয়ামে শনিবার সন্ধেয় অনুশীলন করতে নেমে হঠাৎ দৌড়ে ড্রেসিংরুমে ফিরে গেলেন কিলিয়ান এমবাপে। ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ে দেশঁ-সহ দলের সকলেই অবাক। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই মাঠে ফিরে এলেন তিনি। ফরাসি তারকার মুখে সবসময় লেগে থাকা শিশুর মতো হাসি নেই। একটু যেন অন্যমনস্কও। টুইটারে ফরাসি তারকার পোস্ট ভেসে উঠল, ‘‘সম্রাট পেলের জন্য প্রার্থনা। সেই সঙ্গে সম্রাটের মুকুট ও ব্রাজিলের জাতীয় পতাকার ছবি।’’
চার বছর আগে রাশিয়ায় ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয়ের পরেই এমবাপের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে পেলে জানিয়েছিলেন, ফরাসি তারকার মধ্যে নিজের ছায়া দেখেন তিনি। শনিবার সন্ধেয় আল সাদ স্টেডিয়ামে পৌঁছে এমবাপে টিম ম্যানেজমেন্টের এক সদস্যের কাছে শোনেন গভীর সঙ্কটে ফুটবল সম্রাট। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তাঁর কেমোথেরাপি। অস্থির হয়ে ওঠেন ফরাসি তারকা। দ্রুত ড্রেসিরুমে ফিরে গিয়ে পেলের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে টুইট করেন তিনি।
এমবাপে যখন ড্রেসিংরুমে ফিরে গিয়েছিলেন, বাকি ফুটবলারদের মাঠের মাঝখানে ডেকে নিয়েছিলেন দেশঁ। অনুশীলন শুরু আগে ছোট-খাটো টিম মিটিং সেরে নেন তিনি। ফরাসি সাংবাদিকদের দাবি, রবার্ট লেয়নডস্কিকে কী ভাবে আটকাতে হবে বোঝাচ্ছিলেন তিনি।
টিউনিশিয়ার কাছে আগের ম্যাচে হারের যন্ত্রণা কাঁটার মতো বিঁধে রয়েছে দেশঁর মনে। গ্রুপ পর্বে মাত্র একটি ম্যাচ জিতে শেষ ষোলোয় উঠলেও পোল্যান্ডকে তাই যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন ফরাসি কোচ। তাঁর প্রধান কারণ, রবার্ট লেয়নডস্কির মতো ভয়ঙ্কর স্ট্রাইকার যে থাকবেন বিপক্ষে। যে কোনও মুহূর্তে ম্যাচের রং বদলে দিতে পারেন পোলিশ তারকা।
ফ্রান্স প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ৪-১ চূর্ণ করে বুঝিয়ে দিয়েছিল বিশ্বকাপ জিততেই এসেছে। দ্বিতীয় ম্যাচে এমবাপেরা হারান ডেনমার্ককে ২-১ গোলে। টিউনিশিয়ার বিরুদ্ধে তৃতীয় ম্যাচ নিয়মরক্ষার হয়ে দাঁড়ানোয় দলে একাধিক পরিবর্তন করেছিলেন ফরাসি কোচ। এমবাপে, আঁতোয়া গ্রিজ়ম্যান, অলিভিয়ের জিহুকে শুরু থেকে খেলাননি। টিউনিশিয়ার কাছে হেরে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে দেশঁ বলেছিলেন, ‘‘আমরা সব সময় সব কিছু ঠিকঠাক করতে পারি না। আমাদের প্রথম লক্ষ্য ছিল শেষ ষোলোয় ওঠা। সেটা হয়ে গিয়েছিল।’’ ফরাসি কোচ আরও বলেন, ‘‘আমাদের দলের ২৪ জন ফুটবলার মিলে প্রথম দু’টো ম্যাচ জিতিয়েছে। আর শেষ ম্যাচটা হেরে গিয়েছে। কিন্তু পরের রাউন্ডের জন্য আমার এই ২৪জন ফুটবলারকেই প্রয়োজন।’’ স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, এমবাপেদের শুরু থেকে না খেলানোর সিদ্ধান্ত ভুল ছিল না। বলেছিলেন, ‘‘পরপর দু’টি কঠিন ম্যাচ খেলে এসেছিলাম আমরা। আগামী ১২ দিনে আমাদের আরও চারটে ম্যাচ খেলতে হতে পারে। এই সব বিষয়গুলি মাথায় রেখেই দল সাজাতে হয়েছে। অস্বীকার করার জায়গা নেই, আমাদের আরও উন্নতি করতে হবে। টিউনিশিয়া আমাদের নাজেহাল করেছিল।’’
ফরাসি সমর্থকদের অভিযোগ টিউনিশিয়াকে হালকা ভাবে নিয়েছিলেন দেশঁ। অভিযোগ উড়িয়ে ফরাসি কোচের জবাব, ‘‘একদমই নয়। টিউনিশিয়াকে আমরা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছিলাম। পাশাপাশি আমার মাথায় শেষ ষোলোর ম্যাচের ভাবনাও ছিল।’’
পোল্যান্ড ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে শনিবার দুপুরে সাংবাদিক বৈঠকে দেশঁ বললেন, ‘‘লেয়নডস্কি ভয়ঙ্কর স্ট্রাইকার। ওকে বল ধরতে দিলেই বিপদ। চেষ্টা করতে হবে, লেয়নডস্কি যেন বল না পায়।’’ এখানেই শেষ নয়। যোগ করেন, ‘‘লেয়নডস্কি জানে কী ভাবে শরীর ব্যবহার করে গোল করতে হয়।’’
চলতি বিশ্বকাপে মাত্র সাতবার বিপক্ষের গোল লক্ষ্য করে শট মেরেছেন লেয়নডস্কি। অর্থাৎ, ম্যাচ পিছু ২.৩টি করে শট। বার্সেলোনার হয়ে প্রতি ম্যাচে গড়ে ৩.৯২টি শট মারেন পোলিশ স্ট্রাইকার। যদিও এই পরিসংখ্যানকে একেবারেই গুরুত্ব দিচ্ছেন না দেশঁ। বলে দিলেন, ‘‘ওর মতো স্ট্রাইকার একটা বল পেলেও গোল করে দেবে।’’