দেবজ্যোতির মৃত্যু নিয়ে কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা ফাইল ছবি
শনিবার একটি ফুটবল ম্যাচ খেলতে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাঠেই মৃত্যু হয় তরুণ ফুটবলার দেবজ্যোতি ঘোষের। কলকাতার রেলওয়েজ এফসি-র হয়ে খেলা দেবজ্যোতির বয়স ছিল মাত্র ২৫ বছর। শনিবার নদিয়ার ধুবুলিয়া বেলপুকুর মাঠে এক ফুটবল প্রতিযোগিতায় খেলতে গিয়ে খেলার মাঠেই প্রাণ হারান তিনি। আগামী বছর ইস্টবেঙ্গলে খেলার কথা ছিল দেবজ্যোতির।
এত কম বয়সে এক জন ফুটবলারের এ ভাবে চলে যাওয়া অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না। সাধারণ সমর্থকদের অনেকেরই প্রশ্ন, শারীরিক ভাবে যে সমস্ত ক্রীড়াবিদ সব থেকে বেশি ফিট থাকেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ফুটবলাররা। তাঁরা কী ভাবে এত কম বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন?
অনেকেরই এই ঘটনা দেখে মনে প়ড়ে গিয়েছে ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনের ঘটনা। গত বছর ইউরো কাপে ফিনল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচ চলাকালীন ডেনমার্কের এরিকসেন আচমকাই মাঠে পড়ে যান। ‘পালমোনারি রিসাসিটেশন’ বা কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে তাঁর জীবন কোনও মতে বাঁচানো যায়। হাসপাতালে দীর্ঘ দিন থাকার পর ছা়ড়া পান এরিকসেন। কিন্তু তত দিনে অনেকটাই ক্ষতি হয়ে গিয়েছিল তাঁর। ডাক্তাররা এক রকম বলেই দিয়েছিলেন, ফুটবল মাঠে ফের নামলে প্রাণ সংশয় হতে পারে এরিকসেনের। ঝুঁকি না নিয়ে তাঁর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে দেয় ইটালির ক্লাব ইন্টার মিলান। কোনও ক্লাবই এগিয়ে আসেনি। শেষ পর্যন্ত গত জানুয়ারিতে তিনি সই করেন ইপিএলের ক্লাব ব্রেন্টফোর্ডে। মাঠেও নেমেছেন।
একই কথা বলা যায় ভারতের আনোয়ার আলির ক্ষেত্রেও। হৃদযন্ত্রের বিরল রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে ফুটবল খেলার স্বপ্নই শেষ হতে বসেছিল তাঁর। শেষ পর্যন্ত সর্বভারতীয় ফুটবল সংস্থার বিরুদ্ধে আদালতে জিতে ফুটবল খেলার অনুমতি পান তিনি। তার পর আইএসএলে খেলে ফেলেছেন এফসি গোয়ার হয়ে। এমনকী জাতীয় শিবিরেও ডাক পেয়েছেন।
কিন্তু কেন এত কম বয়সে ফুটবলারদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণ কী? শারীরিক প্রশিক্ষক রণদীপ মৈত্র আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, ‘‘এ ধরনের ঘটনাকে কার্ডিয়াক হাইপারট্রফি বলে। সাধারণ অনুশীলনের মাত্রা বেশি হলে বা শারীরিক ক্ষমতার থেকে বেশি অনুশীলন করলে এ ধরনের ঘটনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আধুনিক সময়ে অনেক ফুটবলারের ক্ষেত্রেই এ রকম হচ্ছে।’’ শারীরিক সক্ষমতার শীর্ষে থাকতে অনেকেই প্রয়োজনের থেকে বেশি অনুশীলন করেন। তার থেকেই এমন ঘটনা ঘটতে পারে বলে জানান তিনি। দেবজ্যোতির ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনও ব্যাপার ছিল কি না, তা অবশ্য জানা যায়নি। তবে কার্ডিয়াক হাইপারট্রফির ক্ষেত্রে আচমকা মৃত্যু অস্বাভাবিক কিছু নয়।
কিন্তু কী করে এড়ানো যেতে পারে এমন ঘটনা? রণদীপ জানালেন, এর জন্য দরকার জিনের পরীক্ষার। আধুনিক ফুটবলে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি। কারওর শরীরে কোনও রোগ বা সমস্যা থাকলে, জিনের পরীক্ষার মাধ্যমে তা সহজেই ধরা পড়তে পারে। যদি কারওর ক্ষেত্রে কিছু ধরা পড়ে, তা হলে তাঁর জন্য আলাদা প্রশিক্ষণ, কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। রণদীপের কথায়, ‘‘ওই ক্রীড়াবিদের ঝুঁকি যে একেবারেই নেই এটা বলা যাবে না। কিন্তু ঝুঁকির মাত্রা অবশ্যই কমানো যায় নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করলে।’’ তবে আগে থেকে কোনও উপসর্গ ধরা পড়ার সম্ভাবনা কম বলেই জানিয়েছেন তিনি।
ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন ফিজিয়ো রুদ্র প্রতিম রায় বললেন, ‘‘আমি ওর ব্যাপারে পুরো ঘটনা এখনও জানতে পারিনি। আমার ধারণা, কোনও শারীরিক সমস্যা থাকলেও থাকতে পারে। সঠিক পরীক্ষা হয়তো করা হয়নি। তা ছাড়া আজকাল ফুটবলারদের তেলজাতীয় খাবার বা ফাস্ট ফুড খেতে বারণ করা হয়। কারণ এতে ফ্যাটি অ্যাসিড হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’’ এই ঘটনা থেকে বাঁচতে পরীক্ষা করানোই একমাত্র পথ বলে জানিয়েছেন রুদ্র প্রতিম।