East Bengal vs Mohun Bagan

৪ গোলেও ফয়সালা হল না ডার্বির! দু’বার পিছিয়েও ইস্টবেঙ্গলকে আটকে দিল মোহনবাগান, ফল ২-২

ফয়সালা হল না কলকাতা ডার্বির। শনিবার সল্টলেক স্টেডিয়ামে ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগানের খেলা শেষ হল ২-২ গোলে। শেষ মুহূর্তের গোলে কোনও রকমে হার এড়াল সবুজ-মেরুন।

Advertisement

অভীক রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:২৮
Share:

ডার্বির একটি মুহূর্ত। ছবি: এক্স।

মোহনবাগান ২ (সাদিকু, পেত্রাতোস)
ইস্টবেঙ্গল ২ (অজয় ছেত্রী, ক্লেটন-পেনাল্টি)

Advertisement

ফয়সালা হল না কলকাতা ডার্বির। শনিবার সল্টলেক স্টেডিয়ামে ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগানের খেলা শেষ হল ২-২ গোলে। শেষ মুহূর্তের গোলে কোনও রকমে হার এড়াল সবুজ-মেরুন। আইএসএলে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে অপরাজিত থাকার রেকর্ড অব্যাহত রাখলেন আন্তোনিয়ো হাবাস। একই সঙ্গে, ইস্টবেঙ্গলের কাছে আইএসএলে না হারার রেকর্ড অক্ষুণ্ণ রাখল মোহনবাগানও।

ম্যাচের পয়েন্ট তালিকাতেও কোনও পরিবর্তন হল না। ১১ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে মোহনবাগান থেকে গেল পাঁচেই। অন্য দিকে, ইস্টবেঙ্গল ১১ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে আটেই থাকল। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে গোল করেছেন অজয় ছেত্রী এবং পেনাল্টি থেকে ক্লেটন সিলভা। মোহনবাগানের হয়ে গোল আর্মান্দো সাদিকু এবং দিমিত্রি পেত্রাতোসের। এই প্রথম আইএসএলে কোনও কলকাতা ডার্বি ড্র হল। এর আগে হওয়া ছ’টি ম্যাচেই জিতেছে মোহনবাগান। তবে সেই রেকর্ড ভেঙে যেতে পারত শনিবারই। ম্যাচ শেষ হওয়ার তিন মিনিট আগে পর্যন্ত এগিয়ে ছিল ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু মুহূর্তের ভুলে পেত্রাতোস গোল করেন।

Advertisement

এ বারের ডার্বির যুদ্ধটা অনেকটাই ছিল দুই কোচের মস্তিষ্কের লড়াই। মোহনবাগানোর আন্তোনিয়ো হাবাস এবং ইস্টবেঙ্গলের কার্লেস কুয়াদ্রাতের। দিনের শেষে দু’জনেই সমান জায়গায়। ম্যাচের কিছুটা সময় যে রকম হাবাসের ক্ষুরধার বুদ্ধির নমুনা পাওয়া গিয়েছে, তেমনই ইস্টবেঙ্গল দলের মধ্যে আগ্রাসী মানসিকতা এবং শেষ পর্যন্ত হার-না-মানার মানসিকতা ঢোকানোর নেপথ্যে রয়েছেন কুয়াদ্রাত। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট, মোহনবাগানের দলে জাতীয় দলের সাত ফুটবলার ফিরলেও তাদের এমন কিছু আহামরি লাগেনি। বরং দেশজ ফুটবলারদের মানের ব্যাপারে কিছুটা পিছিয়ে থাকা ইস্টবেঙ্গল অনেক বেশি লড়াই করেছে।

শনিবার কলকাতা ডার্বির শুরুটা যে এমন হতে পারে অনেকেই ভাবেননি। সাধারণত দু’দলই সাবধানী থেকে প্রতিপক্ষকে মেপে নিয়ে শুরু করে। কিন্তু এই ডার্বির প্রথম ১৬ মিনিটেই দু’টি গোল হয়ে গেল। খেলা তখন সবে শুরু হয়েছে। সব দর্শক ঠিকঠাক করে নিজের আসনে বসতেও পারেননি। তার মধ্যেই এগিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। বাঁ দিক থেকে আক্রমণে ওঠেন নিশু কুমার। তিনি বক্সের উদ্দেশে বল ভাসান। শৌভিক চক্রবর্তীর জায়গায় মাঝমাঠে খেলা অজয় ছেত্রী ঢুকে পড়েন বক্সে। ভাসানো বলে পা ঠেকিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন তিনি। মোহনবাগানের গোলকিপার বিশাল কাইথের কিছু করার ছিল না। এ ক্ষেত্রে দোষ রয়েছে ব্রেন্ডন হ্যামিলেরও। অজয়ের বক্সে ঢুকে পড়াটা খেয়াল করেননি তিনি। শেষ মুহূর্তে হেড করে বল ক্লিয়ার করার চেষ্টা করলেও তার আগেই পা ঠেকিয়ে গোল করে দেন অজয়।

ইস্টবেঙ্গলের কাছে শুরুতে গোল করে এগিয়ে যাওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু এগিয়ে যাওয়ার সুবিধাটা নিতে পারেনি তারা। সেই মুহূর্তে চাপ বজায় রেখে আরও একটি গোল তুলে নিতে পারলে অনেকটাই সুবিধা হত তাদের। চেষ্টাও করেছিল তারা। গোলের পর মুহূর্তেই খাপছাড়া মোহন-রক্ষণের ভুলে সুযোগ এসে গেলেও গোল হয়নি। তাদের বিপদ আরও বাড়ে ১৩ মিনিটে আনোয়ার আলি চোট পেয়ে উঠে যাওয়ায়। সেই জায়গায় নামেন আমনদীপ খান। কিন্তু গোল দিয়েও কিছুটা খোলসে ঢুকে যায় ইস্টবেঙ্গল। সেই সুবিধা নেয় মোহনবাগান। গোল খাওয়ার পর থেকেই তারা আক্রমণের ঝাঁজ বাড়িয়ে দেয়। সমতা ফেরায় ১৬ মিনিটে। একটি আক্রমণ থেকে ডান দিকে বল পান হ্যামিল। তিনি বক্সের উদ্দেশে বল ভাসিয়ে দেন। ভাসানো বলেই পা ছুঁইয়ে গোল সাদিকুর।

গোল খাওয়ার পরে ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণ আরও বেড়ে যায়। আগ্রাসী খেলার বদলে রক্ষণাত্মক খেলতে থাকেন কার্লেস কুয়াদ্রাতের ছেলেরা। সেই মুহূর্তে ইস্টবেঙ্গলের খেলা দেখে মনে হতে থাকে, যে কোনও মুহূর্তে গোল খেয়ে যেতে পারে তারা। লাল-হলুদের অর্ধে আক্রমণের ঝড় বইয়ে দেয় মোহনবাগান। নিজেদের মধ্যে পাস খেলতে খেলতে আক্রমণে উঠছিলেন সাহাল সামাদরা। অন্য দিকে, ইস্টবেঙ্গল নিজেদের অর্ধই পেরোতে পারছিল না। মাঝেমাঝে দু’-একটা প্রতি আক্রমণে উঠলেও নির্বিষ সেই আক্রমণ থামাতে সমস্যা হয়নি মোহনবাগানের ডিফেন্ডারদের। ৪০ মিনিটের মাথায় সহজ একটি সুযোগ এসেছিল সাদিকুর কাছে। কিয়ান নাসিরির ক্রস ক্লিয়ার করতে পারেননি ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্ডার। খুব কাছ থেকে বল পেয়েও বারের উপর দিয়ে উড়িয়ে দেন সাদিকু।

এর পরের পাঁচ মিনিট আচমকাই রক্ষণের খোলস থেকে বেরিয়ে আসে ইস্টবেঙ্গল। একের পর এক আক্রমণে মোহনবাগানের নাভিশ্বাস তুলে দেয় তারা। গোল করার মতো একাধিক পরিস্থিতি তৈরি হলেও ব্যবধানে বাড়াতে পারেনি লাল-হলুদ।

বিরতির পরে ইস্টবেঙ্গলের খেলায় বদল লক্ষ করা যায়। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলতে থাকে তারা। ফলও মেলে সঙ্গে সঙ্গেই। চোট পেয়ে হ্যামিল উঠে যাওয়ায় আরও চাপে পড়ে মোহনবাগান। এই পরিস্থিতি ভুল করে বসেন দীপক টাংরি। ডান দিক থেকে নন্দকুমার বল ভাসিয়েছিলেন। বক্সে থাকা মহেশের সামনে সুযোগ ছিল হেড করার। তার আগেই পিছন থেকে এসে তাঁকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেন টাংরি। রেফারি পেনাল্টির নির্দেশ দিতে দেরি করেননি। মোহনবাগানের ফুটবলারেরা সঙ্গে সঙ্গে আপত্তি তোলেন। রেফারি এবং লাইন্সম্যানকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। তবে বল না পাওয়া সত্ত্বেও যে ভাবে টাংরি আঘাত করেছিলেন মহেশকে, তাতে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত সঠিক বলেই মানছেন ফুটবল বিশেষজ্ঞেরা।

চাপের মুখে শান্ত থাকা তাঁর স্বভাবই। পেনাল্টিতে শট করার সময়েও একই মনোভাব দেখালেন ক্লেটন। দলকে এগিয়ে দেওয়ার সুযোগ ছিল। এমন অবস্থায় ‘পানেনকা’ কিক নিলেন। শটের সময় হালকা করে বলটা ভাসিয়ে দিলেন। আগেই বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়া কাইথের কাছে বল থামানোর কোনও সুযোগ ছিল না। প্রথম গোলের পরে না হলেও, দ্বিতীয় গোল পেয়ে রক্ষণে মন দেয়নি ইস্টবেঙ্গল। বরং আক্রমণের রাস্তাই বেছে নেয় তারা। লাল-হলুদের দাপটে তখন মোহনবাগানকে বেশ নড়বড়ে দেখাচ্ছিল। সমতা ফেরাতে বিশ্বকাপার জেসন কামিংসকে নামিয়ে দেন মোহনবাগানের কোচ আন্তোনিয়ো লোপেস হাবাস। তার পরেও গোলের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছিল।

সেই আক্ষেপ মিটল ৮৭ মিনিটে। এ ক্ষেত্রেও ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণ দায়ী। তারা বক্স থেকে বল বার করতে পারেনি। বাঁ দিক থেকে সাহালের শট ক্লিয়ার করতে পারেননি লালচুংনুঙ্গা। তা গিয়ে পড়ে ফাঁকায় থাকা পেত্রাতোসের সামনে। তিনি বল জালে জড়িয়ে দেন। ইনজুরি টাইম চলার সময় দু’দলের কাছেই সুযোগ এসেছিল। কিন্তু কোনও দলই জয়সূচক গোল তুলে নিতে পারেনি।

ডার্বি ম্যাচে ঝামেলা হবে এমনটা সাধারণত হয় না। শনিবারের ডার্বিও তার ব্যতিক্রম নয়। ম্যাচের বিভিন্ন সময়ে ফাউল করা নিয়ে দু’দলের ঝামেলা বাধে। তবে ৮৩ মিনিটে যে ভাবে ইস্টবেঙ্গলের সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়কে গলা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন পেত্রাতোস, তাতে রেফারি তাঁকে হলুদ কার্ডের বদলে লাল কার্ড দেখালেও কিছু বলার ছিল না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement