ভরসা: ক্লেটন ও হিজাজ়ির দিকেই তাকিয়ে ইস্টবেঙ্গল। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
বার্সেলোনায় প্রায় কুড়ি বছর আগে তাঁরা ছিলেন সহকর্মী। তাঁদের ফুটবল-দর্শনও ছিল এক। দু’জনেই বিশ্বাস করতেন আক্রমণাত্মক ফুটবলে। দু’দশক পেরিয়ে এই মুহূর্তে অবশ্য কার্লেস কুয়াদ্রাত ও সের্খিয়ো লোবেরার দর্শন ভিন্ন মেরুতে।
ইস্টবেঙ্গল কোচের প্রধান লক্ষ্য বিপক্ষকে গোল করতে না দিয়ে হার বাঁচানো। তাই রক্ষণ শক্তিশালী করে খেলছেন কার্লেস। আবার শুরু থেকেই আক্রমণের ঝড় তুলে বিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দেওয়াই রণকৌশল লোবেরার। আজ, শুক্রবার সন্ধেয় যুবভারতীতে লড়াইটা মূলত ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণের সঙ্গে ওড়িশার আক্রমণ ভাগেরই।
বৃহস্পতিবার দুপুরে যুবভারতীতে সাংবাদিক বৈঠকের শুরুতেই লোবেরা হুঙ্কার দিলেন, ‘‘এএফসি কাপে মোহনবাগানকে এই মাঠেই ৫-২ হারিয়েছিলাম। দুর্ভাগ্য যে আইএসএলের ম্যাচে ওদের বিরুদ্ধে ২-০ এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত জিততে পারিনি। ২-২ ড্র হয়েছিল। খুবই আনন্দ হচ্ছে যুবভারতীতে আবার খেলতে নামব।’’ ওড়িশা কোচকে মনে করিয়ে দেওয়া হল চব্বিশ ঘণ্টা আগেই মোহনবাগানকে ২-১ হারানো মুম্বই সিটি এফসির ফুটবলাররা কিন্তু আটকে গিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের চক্রব্যূহে। লোবেরা যদিও তা নিয়ে খুব একটা চিন্তিত বলে মনে হল না। শেষ পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে চারটিতে জেতা রয় কৃষ্ণ, দিয়েগো মৌরিসিয়ো, আহমেদ জাহুদের কোচ বলে দিলেন, ‘‘ওদের পেয়ে আমি দারুণ খুশি। অবশ্য আমাদের দলে আরও অনেক অসাধারণ ফুটবলার রয়েছে। অস্বীকার করছি না, এই মুহূর্তে আমরা যে রকম খেলছি তাতে অবশ্যই কিছুটা সুবিধেজনক জায়গায় রয়েছি।’’
লোবেরার অভিব্যক্তি অবশ্য কয়েক ঘণ্টা পরেই সন্ধেয় ইস্টবেঙ্গল মাঠে অনুশীলনে নামার পরে বদলে যায়। মাঝমাঠের হৃদ্পিণ্ড জাহু দলের সঙ্গে অনুশীলনই করলেন না। মাঠের বাইরে ফিজ়িয়োর সঙ্গে হাল্কা দৌড়লেন। বল কার্যত স্পর্শই করলেন না। মাঝেমধ্যেই মাঠের বাইরে রাখা চেয়ারে বসে পায়ে হাত বোলাচ্ছিলেন। ড্রেসিংরুমে ফিরে গেলেন আইসপ্যাক নিয়ে। যদিও জাহু দাবি করলেন, ‘‘আমার কোনও চোট নেই।’’ ওড়িশা শিবিরের অন্দরমহলের খবর, সম্পূর্ণ সুস্থ নন জাহু। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় তাঁকে সুস্থ করে তোলার প্রক্রিয়া চলছে। এক জন বললেন, ‘‘জাহু যোদ্ধা। আশা করছি, ও ঠিক সুস্থ হয়ে উঠে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে খেলবে।’’
এই মরসুমে ওড়িশার দুরন্ত উত্থানের নেপথ্যে প্রধান কারিগর জাহু। তিনি গোলের জন্য বল সাজিয়ে দেন কৃষ্ণ, মৌরিসিয়োকে। আবার নিজেও গোল করেন। পাশাপাশি রক্ষণে নেমে এসে বিপক্ষের আক্রমণও থামান। জাহু যদি শেষ পর্যন্ত মাঠে না নামতে পারেন, অনেকটাই চাপমুক্ত হয়ে খেলবেন ক্লেটন সিলভা, মহেশ সিংহ, সৌভিক চক্রবর্তীরা।
কার্লেস কি আদৌ নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন? দিয়েগো ও কৃষ্ণর গোল করা কি আটকাতে পারবেন হিজাজ়ি মাহের, লালচুংনুঙ্গারা?
ওড়িশা-দ্বৈরথের চব্বিশ ঘণ্টা আগে সাংবাদিক বৈঠকে লাল-হলুদের স্পেনীয় চাণক্য বলে দিলেন, ‘‘হর্হে পেরেরা দিয়াস ও গ্রেগ স্টুয়ার্টকে নিয়ে গড়া অন্যতম সেরা আক্রমণভাগকে আটকেছি আমরা। জাহু, কৃষ্ণ ও দিয়েগো বিপজ্জনক ঠিকই। কিন্তু ওদের আটকানোর ক্ষমতাও আমাদের আছে।’’ যোগ করেন, ‘‘গত কয়েক সপ্তাহে আমরা অনেক উন্নতি করেছি। পরিশ্রমের ফলেই দলে এখন ধারবাহিকতা এসেছে।’’ ঘরের মাঠেও কি তা হলে হার বাঁচানো প্রধান লক্ষ্য ইস্টবেঙ্গলের? শুক্রবার ওড়িশাকে হারিয়ে প্লে-অফে খেলার সম্ভাবনা উজ্জ্বল করতে মরিয়া কার্লেস বলে দিলেন, ‘‘আমরা মাত্র দুটো ম্যাচে জয় পেয়েছি। আরও জয় দরকার। প্লে-অফে খেলার স্বপ্ন দেখছি আমরা। তাই আমাদের জিততে হবে। এক পয়েন্ট পেলে আমি সন্তুষ্ট হব না।’’