ক্লাবের জার্সির উদ্বোধনে প্রাক্তন ফুটবলার তথা সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং প্রাক্তন ফুটবলার রহিম নবি। ছবি টুইটার
পয়লা বৈশাখে বারপুজোর মাধ্যমে উদ্বোধন হয়েছে। এর মধ্যেই ময়দানের ফুটবলে ক্রমশ পরিচিতি পেতে শুরু করে দিয়েছে ডায়মন্ড হারবার ফুটবল ক্লাব। আবির্ভাবেই প্রথম ডিভিশনে খেলার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে দিয়েছে তারা। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী কলকাতা লিগ থেকেই প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে ডায়মন্ড হারবার ফুটবল ক্লাবের অভিষেক হতে চলেছে।
এই ক্লাবের তৈরি থেকে বিন্যাস, পুরোটাই ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত। সফল ভাবে এমপি কাপ আয়োজনের পরেই তিনি বলে দিয়েছিলেন, ভবিষ্যতে ডায়মন্ড হারবার থেকে একটি ফুটবল ক্লাব দেখতে চান। এর পরেই কাজ শুরু হয়ে যায় ক্লাব প্রতিষ্ঠা করার। আনুষ্ঠানিক ভাবে পয়লা বৈশাখ এই ক্লাবের আত্মপ্রকাশ হয়েছে। কিন্তু তার আগে থেকেই বিভিন্ন কার্যকলাপের মাধ্যমে লোকমুখে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে এই ক্লাবের পরিচিতি। নেটমাধ্যমে নজরকাড়া পোস্টার থেকে শুরু করে দুর্দান্ত সব ভিডিয়ো, শুরু থেকেই পেশাদার ক্লাবের মতো এগোতে চাইছে ডায়মন্ড হারবার ফুটবল ক্লাব। আগামী ২৫ তারিখ আইএফএ-র গভর্নিং বডির বৈঠক রয়েছে। সেখানেই তাদের প্রথম ডিভিশনে খেলার ভাবনায় শিলমোহর পড়তে পারে।
ডায়মন্ড হারবার ফুটবল ক্লাব কোচ হিসেবে নিয়োগ করেছে প্রাক্তন ফুটবলার কৃষ্ণেন্দু রায়কে। গোলকিপার কোচ হয়েছেন প্রদীপ সেন। সভাপতি হিসেবে রয়েছেন গৌরাঙ্গ বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘরের মাঠ হিসেবে মহেশতলার বাটানগর মাঠকেই বেছে নিয়েছে তারা। ওই মাঠেই বারপুজোর মাধ্যমে ক্লাবের আত্মপ্রকাশ হয়।
তবে নতুন একটি ক্লাব তৈরি হলে তার দল গঠন, ফুটবলার বাছাই, অনুশীলনের মাঠ ঠিক করা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় জড়িয়ে থাকে। সে সব জানতেই আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল ক্লাবের সচিব তথা প্রাক্তন ফুটবলার মানস ভট্টাচার্যের সঙ্গে। তিনি বলেছেন, “মহেশতলার বাটানগর মাঠে প্রায় প্রতি দিনই ট্রায়াল চলছে। শুধু মাত্র রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে নয়, ভিন রাজ্যের ফুটবলাররাও ট্রায়ালে অংশ নিতে আসছে। মণিপুর, ওড়িশা, মেঘালয় থেকে অনেক ফুটবলারই ট্রায়ালে এসেছে। তাদের দেখে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তবে দূরের ফুটবলার যারা রয়েছে তাদের অনেকেরই এ শহরে থাকার জায়গা পাওয়া নিয়ে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। তাই আমরা বাটানগরের মাঠের আশেপাশেই ওদের থাকার জায়গা তৈরি করছি।”
শুধুমাত্র নতুন ফুটবলার দিয়ে কোনও প্রতিযোগিতা খেলা যায় না। তাই কলকাতা ময়দানে অভিজ্ঞ এবং প্রতিষ্ঠিত ফুটবলারদেরও নেওয়া হবে বলে জানালেন তিনি। দুই প্রধানে খেলা বেশ কিছু ফুটবলার পছন্দ হয়েছে। নতুন এবং পুরনো ফুটবলার মিলিয়ে তাঁরা এমন একটি দল তৈরি করতে চান, যারা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ক্ষমতা রাখে। পাশাপাশি মানস বললেন, “আগামী দিনে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে ডায়মন্ড হারবারে সাত দিনের একটি শিবির করার। ওখানকার বিধায়ক পান্নালাল হালদারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি নিজেও ফুটবল ভালবাসেন। ফলে সব রকম সহযোগিতা করবেন বলে কথা দিয়েছেন।”
প্রথম থেকেই এই ক্লাবের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িয়ে রয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক। রাজনৈতিক ব্যস্ততার মাঝেও ক্লাবের ছোটখাটো ব্যাপারে তিনি খেয়াল রাখেন। মানসের কথায়, “বারপুজোর দিনই উনি বলেছিলেন এটা কোনও রাজনৈতিক দল নয়। সবার জন্য একটা ফুটবল ক্লাব। ফলে এখানে রং না দেখে যে কেউ স্বাগত। যে কোনও ফুটবল দলের সমর্থকরাও আমাদের পাশে দাঁড়াতে পারেন। অভিষেক নিজে চান এই ক্লাবকে তুলে ধরে গোটা দেশে বার্তা দিতে যে, জেলা থেকেও ভাল ক্লাব উঠে আসতে পারে। তবে ক্লাবের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে মাথা গলান না তিনি। সবটাই আমাদের উপরে ছেড়ে দিয়েছেন।”
ফুটবলার নিযুক্ত করতে গেলে অর্থ প্রয়োজন। সেই অর্থ কোথা থেকে আসবে, তা নিয়ে সরাসরি কোনও উত্তর দিতে চাননি মানস। তবে জানিয়েছেন, যত বেশি সম্ভব স্পনসর জোগাড়ের চেষ্টা চালাবেন তাঁরা। ক্লাবের নথিভুক্তি হয়ে গেলে স্পনসররাও এগিয়ে আসবে। এ ছাড়া আগামী দিনে ক্লাবের সদস্য নিয়োগ করারও ভাবনা চলছে। সেই সদস্যদের থেকেও চাঁদার মাধ্যমে অর্থ জোগাড় করা হবে।