মনবীরের সঙ্গে বল দখলের লড়াই ব্রেন্ডনের (ডান দিকে)। ছবি: পিটিআই।
মোহনবাগান ১ (পেত্রাতোস)
গোয়া ৪ (নোয়া-২, ভিক্টর, মার্তিনেস)
চোট, কার্ড সমস্যায় বিধ্বস্ত ছিল দল। আইএসএলের শীর্ষে থাকা এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে তাই শনিবার কাজটা সহজ ছিল না মোহনবাগানের কাছে। হলও তাই। ভাঙাচোরা দল নিয়ে আরও এক বার ঘরের মাঠে লজ্জার মুখোমুখি হতে হল মোহনবাগানকে। ওড়িশার কাছে এএফসি কাপে পাঁচ গোল খাওয়ার পর এ বার গোয়ার কাছে চার গোল খেল মোহনবাগান। হারল ১-৪ গোলে। দিমিত্রি পেত্রাতোসের ফ্রিকিক থেকে একটি দর্শনীয় গোল ছাড়া এই ম্যাচ থেকে কিছুই প্রাপ্তি নেই মোহনবাগানের। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে হারল তারা। পূরণ হল না শীর্ষে ওঠার স্বপ্নও। ৯ ম্যাচে ২৩ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান মজবুত করল গোয়া। সমান ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে চারে নেমে গেল মোহনবাগান।
ম্যাচের শুরুতে দু’দলই একে অপরকে মেপে নেওয়া শুরু করেছিল। মোহনবাগান এবং গোয়া দুই দলই আক্রমণে উঠছিল সামলে। তবে ডান দিক থেকে প্রথম ভাল আক্রমণ করে গোয়াই। উদান্তা সিংহ ক্রস করার চেষ্টা করেছিলেন। তবে তা থ্রো হয়ে যায়। আট মিনিটেই পেনাল্টি পায় গোয়া। ওদেইয়ের শট সামলাতে গিয়ে মনবীর সিংহের হাতে বল লাগে। তবে আগের দিন ইস্টবেঙ্গলের পেনাল্টি যে ভাবে বাতিল করা হয়েছিল, তার তুলনায় মনবীরের অপরাধ অনেক লঘু। তবু গোয়া পেনাল্টি পায়। দলকে এগিয়ে দেন নোয়া সাদাউই। ডান দিকে ঝাঁপিয়েও বল নাগালে পাননি বিশাল কাইথ।
এর পরেই ম্যাচে দাপট বাড়তে থাকে গোয়ার। অনেক বেশি প্রাধান্য নিয়ে খেলতে থাকে তারা। কোনও সময় জয় গুপ্তা এগোতে থাকেন। কখনও ডান দিক দিয়ে আক্রমণে উঠে আসতে থাকেন উদান্ত। মোহনবাগান আক্রমণের থেকে বেশি নজর দেয় বল নিয়ন্ত্রণে। দিমিত্রি পেত্রাতোসের একটি শট বারের উপর দিয়ে উড়ে যায়। পরের দিকে মনবীরও একটি সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। গোল না হলেও এই সময় দু’দলের সুন্দর ফুটবল দেখা যায়। আক্রমণ এবং প্রতি আক্রমণে হতে থাকে খেলা।
তবে প্রথমার্ধের শেষ দিকে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে গোয়া। একের পর এক আক্রমণ আছড়ে পড়তে থাকে মোহনবাগানের বক্সে। খারাপ রক্ষণের ভুলে ৪২ মিনিটে গোল হজম করে মোহনবাগান। ডান দিকে ব্রেন্ডন ফের্নান্দেসের ক্রস বুকে রিসিভ করে কার্ল ম্যাকহিউকে পাস দেন ভিক্টর রদ্রিগেস। নিজে বক্সের আরও ভেতরে ঢুকে আসেন। ম্যাকহিউ দ্রুত পাস বাড়ান ভিক্টরেরই উদ্দেশে। চলতি বলে বিশালকে পরাস্ত করে বল জালে জড়ান ভিক্টর।
গোয়ার তৃতীয় গোলও রক্ষণে ভুলের সুযোগ কাজে লাগিয়েই। এ বার বাঁ দিকে বল পান নোয়া। ডান দিকে কাট করে ঢুকে আসতে গিয়েও থমকে যান। এতেই কেটে যান সামনে থাকা দীপক টাংরি। নোয়া আরও খানিকটা ভেতরে ঢুকে এসে পোস্টের কোণ লক্ষ্য করে গড়ানো শট নেন। বিশালের কিছু করার ছিল না। এর দু’মিনিট পরে এক গোল শোধ করে মোহনবাগান। বক্সের বেশ কিছুটা দূরে ফাউল পেয়েছিল মোহনবাগান। প্রায় ৩৫ গজ দূর থেকে ফ্রিকিকে দুর্দান্ত শটে বল জালে জড়ান পেত্রাতোস।
দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণাত্মক খেলতে থাকে গোয়া। ব্রেন্ডন পাস দিয়েছিলেন নোয়াকে। কিন্তু গোয়ার ফরোয়ার্ড শট নিতে পারেননি। তাঁর ভুল বাইসাইকেল কিক বারের উপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। ফরোয়ার্ডে ঝাঁজ বাড়াতে জেসন কামিংস এবং মনবীরকে তুলে সুহেল ভাট এবং হুগো বুমোসকে নামিয়ে দেন মোহন-কোচ জুয়ান ফেরান্দো। তার পরেই ব্রেন্ডনের একটি শট অল্পের জন্য বাইরে না গেলে চতুর্থ গোল খেয়ে যেত মোহনবাগান।
৭২ মিনিটের মাথায় বড় সমস্যায় পড়ে মোহনবাগান। পা চেপে ধরে বসে পড়েন ব্রেন্ডন হ্যামিল। পেশিতে টান ধরে তাঁর। তত ক্ষণে মোহনবাগান সব পরিবর্তই ব্যবহার করে ফেলেছে। ফলে নতুন কাউকে নামানোর উপায় ছিল না। লাল কার্ড না খেয়েও দশ জন হয়ে যায় মোহনবাগান। তার ফল ভুগতে হয় ম্যাচের শেষের দিকে। সেভিয়ার গামাকে আটকাতে গিয়ে বক্সের মধ্যেই ফাউল করেন অনিরুদ্ধ থাপা। পেনাল্টি থেকে গোয়ার চতুর্থ গোল পরে কার্লোস মার্তিনেসের। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে দারুণ জায়গায় ফ্রিকিক পেয়েছিল মোহনবাগান। এ বার পেত্রাতোসের শট বারের উপর দিয়ে বেরিয়ে যায়।