ভরসা: পর্তুগালের বিশ্বকাপ অভিযানের প্রাণভোমরা রোনাল্ডোই। টুইটার
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে নিয়ে ফের অস্বস্তি পর্তুগাল শিবিরে। বুধবার দলের সঙ্গে অনুশীলনে যোগ দিতে পারেননি ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড তারকা। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিনি হঠাৎ করে পেটের সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন।
আজ, বৃহস্পতিবার লিসবনে নাইজিরিয়ার বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে পর্তুগাল। কিন্তু তার আগে জাতীয় দলের কোচ ফের্নান্দো স্যান্টোস জানিয়ে দেন, ম্যাচে থাকছেন না রোনাল্ডো। তিনি পেটের সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন।তাই কাতার রওনা হওয়ার আগে তিনি ঝুঁকি নিয়ে খেলাতে চান না রোনাল্ডোকে। তবে স্যান্টোস এও জানিয়েছেন, পর্তুগিজ তারকা শারীরিক ভাবে ভাল জায়গাতেই রয়েছেন। এই অসুস্থতা নিয়ে উদ্বেগের কোনও কারণ নেই।
এ দিকে, এপ্রিলে যমজ সন্তানের বাবা হয়েছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। কিন্তু আনন্দের সেই মুহূর্ত হয়নি দীর্ঘস্থায়ী। তাদের জন্মের কয়েক ঘণ্টা পরেই রোনাল্ডো জানান, যমজ সন্তানের একজন, পুত্রসন্তানের মৃত্যু হয়েছে। অবশ্য রোনাল্ডো ও বান্ধবী জিওর্জিনার কন্যা সন্তান সুস্থ রয়েছে।
ছ’মাসের বেশি সময় অতিক্রান্ত হলেও পর্তুগিজ কিংবদন্তি সন্তান হারানোর যন্ত্রণা বহন করে চলেছেন। বাবা এবং সন্তানের চিতাভস্ম রয়েছে তাঁর বাড়িতেই। যা নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘আমি সবসময়ই ওদের সঙ্গে কথা বলি। ওরাই আমাকে আরও ভাল একজন মানুষ, বাবা হতে সাহায্য করে। ওদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পাওয়া আমার কাছে গর্বের।’’
রোনাল্ডো অকপটে জানিয়েছেন, যমজ সন্তানের জন্মের পরে দ্বিতীয় শিশু কোথায় গেল, তা জানতে চেয়েছিল বিভ্রান্ত অন্য সন্তানেরা। টিভি সাক্ষাৎকারে সেই ঘটনার কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন তিনি। ‘‘জিয়ো (বান্ধবীকে এই নামেই ডাকেন তারকা ফুটবলার) বাড়ি ফিরতেই আমার অন্য বাচ্চারা প্রশ্ন করতে শুরু করল, আর একটি শিশু কোথায়?’’
রোনাল্ডো তখন শোওয়ার ঘরে ১২ বছরের জুনিয়র ক্রিশ্চিয়ানোকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে সত্যি ঘটনা বাকিদের বলেন। ছিল দুই সন্তান এভা এবং মাতেয়ো। যাদের বয়স পাঁচ। অন্য কন্যা চার বছরেরআলানা মার্টিনা।
‘‘নিজের প্রতি সৎ থাকতে ছোটদের মিথ্যে কথা বলিনি। শুধু বলেছিলাম, অ্যাঞ্জেল (মৃত পুত্রসন্তানের নাম) স্বর্গে আছে,’’ বলেছেন রোনাল্ডো। কিংবদন্তি ফুটবলার স্বীকার করেছেন, জীবনের এত বড় শোকের ঘটনা তাঁকে বাচ্চাদের আরও কাছে টেনে এনেছিল। এমনকি বান্ধবী রদ্রিগেসের সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক আরও গভীর হয়ে উঠেছিল।
পর্তুগিজ স্ট্রাইকার আরও জানিয়েছেন, তিনি তাঁর মৃত পুত্রের ভস্ম কী ভাবে নিজের কাছে রেখেছেন। তার জন্য বাড়ির বেসমেন্টে একটি চ্যাপেল (খ্রিস্টানদের নিজস্ব প্রার্থনাগৃহ) তৈরি করেছেন। যেখানে তাঁর প্রয়াত বাবার দেহাবশেষও রাখা আছে।
ছেলেকে হারানোর ব্যক্তিগত বেদনার কথা এই প্রথম জনসমক্ষে বললেন রোনাল্ডো। তাঁর কথায়, ‘‘সে সময় জিয়োকে বুঝিয়েছিলাম, আমাদের আরও সন্তান আছে। ওর সঙ্গেই এই পৃথিবীতে আসা বেলা যেমন। আমাদের দায়িত্ব ওদের সবাইকে আনন্দে রাখা।’’
একজনের পৃথিবী থেকে চলে যাওয়া। আর একজনের থেকে যাওয়া। রোনাল্ডোর কাছে সে অভিজ্ঞতা একইসঙ্গে বেদনা ও আনন্দের। সাক্ষাৎকারে নিজেই জানিয়েছেন সে সব।
এ দিকে, ইংল্যান্ডের সংবাদমাধ্যমের খবর, রোনাল্ডোকে মেজর লিগ সকারে তাঁর ক্লাব ইন্টার মায়ামিতে আনতে মরিয়া প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়ক ডেভিড বেকহ্যাম। কথা বলতে চান রোনাল্ডোর সঙ্গেও। কাতার বিশ্বকাপের পরেই হয়তো শুরু হবে প্রাথমিক আলোচনা।