Toni Kroos

Toni Kroos: ভারতের বিস্ময় শিশু ক্রোসের অ্যাকাডেমিতে

মাদ্রিদ কবে যাচ্ছে অ্যারন? উচ্ছ্বসিত রাফায়েল বললেন, ‘‘টোনি ক্রোসের ম্যানেজার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এখনও দিন কিছু চূড়ান্ত হয়নি। সম্ভবত চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শেষ হওয়ার পরেই যাব। মাদ্রিদে চার-পাঁচ দিন অথবা এক সপ্তাহের জন্য প্রশিক্ষণ দেবেন টোনি ক্রোস।’’

Advertisement

শুভজিৎ মজুমদার

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৯:৫২
Share:

অ্যারন। ছবি টুইটার।

চার বছরের খুদে অ্যারন টমাস। যার এখন মা-বাবার কোলে থাকার কথা, সেই শিশুর ফুটবল প্রতিভায় মুগ্ধ টোনি ক্রোস, নেমার দা সিলভা স্যান্টোস জুনিয়রের মতো বিশ্বফুটবলের কিংবদন্তিরা! ভারতীয় ফুটবলের বিস্ময় শিশুকে মাদ্রিদে নিজের অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন করার আমন্ত্রণও জানিয়েছেন
জার্মান তারকা।

Advertisement

অ্যারনের বাবা রাফায়েল টমাসের জন্ম ভারতীয় ফুটবলের সর্বকালের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার আই এম বিজয়নের শহর ত্রিশূরে। তিনিও স্বপ্ন দেখতেন ফুটবলার হওয়ার। পড়াশোনার জন্য ছেড়েছিলেন খেলা। চাকরি সূত্রে রাফায়েল এখন থাকেন বেঙ্গালুরুতে। ছেলের মাধ্যমেই নিজের অধরা স্বপ্ন পূরণ করতে মরিয়া তিনি।

কী ভাবে টোনি ক্রোসের নজরে পড়ল ছোট্ট অ্যারন? বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে স্ত্রী মঞ্জু ও ছেলেকে নিয়ে ত্রিশূর গিয়েছেন রাফায়েল। শনিবার বিকেলে আনন্দবাজারকে ফোনে তিনি বলছিলেন, ‘‘অ্যারনের জন্ম ২০১৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। যখন ও হাঁটতে শিখল, আমরা একটা ফুটবল কিনে দিয়েছিলাম। তার পর থেকে দেখতাম, সারা দিন ও বল নিয়েই পড়ে থাকত। টলমল পায়েই বলে শট মারত। সেটা দেখেই প্রথম আমাদের ওকে ফুটবলার তৈরি করার ভাবনা মাথায় আসে। শুরু হয় প্রশিক্ষণ। আমার ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন অধরা থেকে গিয়েছে। অ্যারনই এখন আমার ভরসা।’’

Advertisement

ফুটবল ছেড়েছিলেন কেন? হতাশ রাফায়েল বললেন, ‘‘আমার বাবাও ফুটবলার ছিলেন। তিনি চাকরিসূত্রে রিয়াধে থাকতেন। সেখানে নিয়মিত খেলতেনও। বাবা চেয়েছিলেন আমি ফুটবলার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হই। ত্রিশূরে যখন ফিরতেন, আমাকে খেলা শেখাতেন। স্কুল দল, জেলা স্তরে খেলেওছি আমি। কিন্তু কেরল দলে নির্বাচিত হতে পারিনি। তার পরে লেখাপড়ার চাপ বাড়ল। ধীরে ধীরে ফুটবলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে লাগল। শেষ পর্যন্ত আমি পড়াশোনাকেই অগ্রাধিকার দিলাম।’’

অ্যারনেরও ফুটবলের শিক্ষা শুরু হয় বাবার কাছে। রাফায়েল বলছিলেন, ‘‘আমার কাছেই অ্যারনের ফুটবল শেখা শুরু। কখনও বেঙ্গালুরুতে বাড়ির ড্রাইভওয়েতে, কখনও আবার উল্টো দিকের মাঠে। সোম থেকে শুক্র— প্রত্যেক দিন টানা দু’ঘণ্টা অনুশীলন করাই ওকে। প্রবল ব্যস্ততার মধ্যেও ওর জন্য ঠিক সময় বার করি।’’ যোগ করলেন, ‘‘অ্যারনের যখন দু’বছর বয়স, তখন ওকে বেঙ্গালুরু এফসির ফুটবল স্কুলে ভর্তির ট্রায়াল দেওয়াতে নিয়ে গিয়েছিলাম। অ্যারনের বয়স কম বলে ওরা ট্রায়ালে নামতে দেয়নি। চার বছরে পড়ার পরে বেঙ্গালুরু এফসির ফুটবল স্কুলে ভর্তি হতে পেরেছে। এই মুহূর্তে দেশের সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার অ্যারনই।’’

কী অনুশীলন করান অ্যারনকে? বিস্ময় শিশুর বাবার কথায়, ‘‘দৌড় এবং শট মারার অনুশীলন বেশি করাই। লকডাউনের সময় যে হেতু বাইরে বেরোনো সম্ভব হত না, তখন বাড়ির মধ্যেই অনুশীলন করাতাম। ডাইনিং টেবলে জলের বোতল রেখে অ্যারনকে বলতাম শট মারতে। দশটার মধ্যে অন্তত ছ’টি শট ও বোতলের গায়ে মারত। আমি ওর এই ভিডিয়োগুলি গণমাধ্যমে (ইনস্টাগ্রামে) পোস্ট করতাম। দেশ বিদেশের অনেকেই অ্যারনের প্রতিভা দেখে মুগ্ধ।’’

অ্যারনের রিয়াল মাদ্রিদ তারকা টোনি ক্রোসের নজরে পড়ে যাওয়ার কাহিনিও চমকপ্রদ। রাফায়েল বলছিলেন, ‘‘টোনি ক্রোসের অ্যাকাডেমির একটি অ্যাপ রয়েছে। ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে জানতে পারলাম, ‘কিকিং ২০২২’ নামে শিশুদের একটি প্রতিযোগিতা শুরু করছে। অ্যাপে শট মারার ভিডিয়ো আপলোড করতে হবে। প্রথম পুরস্কারজয়ী মাদ্রিদে টোনি ক্রোসের অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন করার সুযোগ পাবে। প্রশিক্ষণ দেবেন স্বয়ং জার্মান তারকা। দ্বিতীয় পুরস্কার ছিল টোনি ক্রোসের স্বাক্ষর করা বুট। তৃতীয় পুরস্কার জার্মানির জাতীয়
দলের জার্সি।’’

অ্যারনের কী ভিডিয়ো পোস্ট করেছিলেন? হাসতে হাসতে রাফায়েল বললেন, ‘‘গড়িয়ে দেওয়া গাড়ির টায়ারের ঠিক মধ্যে শট মেরেছিল অ্যারন। বলটা টায়ারের সঙ্গেই ঘুরছিল। ৩১ জানুয়ারি প্রতিযোগিতার ফল প্রকাশ হয়। আমরা ভেবেছিলাম তৃতীয় বা দ্বিতীয় পুরস্কার পাবে অ্যারন। কিন্তু ওর নাম ঘোষণা না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। এর পরে যখন টোনি ক্রোস নিজে ‘কিকিং ২০২২’ প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন হিসেবে অ্যারনের নাম ঘোষণা করেন, মনে হচ্ছিল যেন স্বপ্ন দেখছি। কল্পনাও করতে পারিনি নেমারও ‘লাইক’ দেবে আমার ছেলের খেলার ভিডিয়োতে।’’ অ্যারনের নাম ঘোষণার সময় টোনি ক্রোস বলেছিলেন, ‘‘অসাধারণ ভিডিয়ো। আমি মুখিয়ে রয়েছি মাদ্রিদে তোমাকে দেখার ও ব্যক্তিগত ভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য। তোমাদের মাদ্রিদে আসার ব্যবস্থা আমরা করব।’’ এখানেই শেষ নয়। ভারতের বিস্ময় শিশুকে নিজের সই করা জার্সিও উপহার হিসেবে পাঠিয়েছেন তিনি।

মাদ্রিদ কবে যাচ্ছে অ্যারন? উচ্ছ্বসিত রাফায়েল বললেন, ‘‘টোনি ক্রোসের ম্যানেজার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এখনও দিন কিছু চূড়ান্ত হয়নি। সম্ভবত চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শেষ হওয়ার পরেই যাব। মাদ্রিদে চার-পাঁচ দিন অথবা এক সপ্তাহের জন্য প্রশিক্ষণ দেবেন টোনি ক্রোস।’’

যাকে নিয়ে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে বিশ্বে, সেই অ্যারন শনিবার বিকেলে ঘুম থেকে উঠে বাবার কোলে বসে ফোনে বলল, ‘‘ভারতের হয়ে খেলতে চাই আমি।’’

প্রতিভাবানরা মনে হয় শৈশব থেকেই লক্ষ্যে স্থির থাকে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement