সুনীল ছেত্রী। ছবি: টুইটার থেকে
দু’টি ম্যাচে ভারত যে চারটি গোল করেছে, তার তিনটিই সুনীল ছেত্রীর। শনিবার যুবভারতীতে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে তাঁর ফ্রিকিক নিঃসন্দেহে বিশ্বমানের। কিন্তু দাপট শুধু মাঠেই। মাঠের বাইরের সুনীল ছেত্রীকে দেখে বোঝার উপায় নেই, মাঠের ভিতরে দু’ঘণ্টা রাজত্ব করেছেন তিনি।
খেলা শেষ হয়ে যাওয়ার পরে ভারতীয় দল যখন টিম বাসে উঠবে, তখন যুবভারতীর সাজঘর থেকে বেরিয়ে সুনীল বিজ্ঞাপনের বিল বোর্ডের পিছন দিয়ে পালিয়ে যেতে চাইছিলেন। সাংবাদিকদের নজর এড়াতে পারেননি। লাজুক মুখে এসে দাঁড়ালেন। দেখে বোঝার উপায় ছিল না, রবিবার এই লোকটা আন্তর্জাতিক ফুটবলে ১৭ বছর পূর্ণ করছেন। প্রশ্ন এল, অনেকেই তো বলছেন, সুনীলকে বাদ দিলে এই ভারতীয় দলে আর কিছু থাকে না। স্বয়ং কোচ দলের বাকিদের বলছেন, সুনীলকে ছাড়া ভাবতে শেখ। লাজুর মুখটা আরও লাজুক হয়ে গেল। বললেন, “এই ভাবে ১৭ বছরের আন্তর্জাতিক কেরিয়ার উদ্যাপন করতে পেরে ভাল লাগছে। এক সময় মনে হয়েছিল ম্যাচ ড্র হবে। ছেলেরা ভাল খেলেছে। আমার কাছে যদিও এই ধরনের মাইলফলক খুব বেশি প্রাধান্য পায় না। আমি গর্বিত এত বছর ধরে জাতীয় দলের জার্সি পরতে পেরে।”
দল নিয়ে কোনও রাখ-ঢাক নেই। বলেই দিলেন, ‘‘এই ছেলেরা সবাই যে বিশাল ভাল ফুটবলার, তা নয়। কিন্তু এরা পরিশ্রমী। অসম্ভব একটা তাগিদ আছে। তার জোরেই এরা অনেক দূর যাবে। দলের প্রত্যেকের ছোট ছোট দায়িত্ব আছে। আমিও তাদের মধ্যে একজন। আমারও ছোট দায়িত্ব আছে বাকি সবার মতো। আমরা সবাই সেটা পালন করার চেষ্টা করি।’’
মজা করে বললেন, শনিবারের ম্যাচেই তিনি জীবনের সেরা গতিতে দৌড়েছেন। আর সেটা ছিল মাঠের বাইরে থেকে। ৯১ মিনিটের মাথায় গোল করেন আব্দুল সামাদ। সেই গোলেই আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ২-১ গোলে জেতে ভারত। ভারতীয় ফুটবলাররা দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরেন একে অপরকে। সুনীল সে সময় রিজার্ভ বেঞ্চে ছিলেন। সেখান থেকে দৌড়ে যান তিনি সামাদের দিকে। ম্যাচ শেষে সুনীল হাসতে হাসতে বললেন, “জিপিএস বলবে আমি সব থেকে জোরে দৌড়েছি শনিবারের ম্যাচেই।”
শনিবার যুবভারতীতে প্রায় ৪০ হাজার দর্শক ছিল। হংকংয়ের বিরুদ্ধে এই বিশাল সংখ্যক দর্শকের উপস্থিতি চাইছেন সুনীল। তিনি বলেন, “হংকং ভাল দল। আমরা ঘরের মাঠে খেলছি। সব সমর্থক সেই ম্যাচেও মাঠে আসবে।” ১৭ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলছেন সুনীল। বিশাল সংখ্যক সমর্থকদের সামনে গোল করতে পেরে খুশি সামাদ। তিনি বলেন, “সমর্থকদের সামনে জয়, এটার স্বাদই আলাদা। নিজেকে পিছিয়ে নিয়ে গোলরক্ষকের ধরাছোঁয়ার বাইরে রেখেছিলাম বলটা। এর পর কিছু বুঝে ওঠার আগেই গোটা দল উৎসবে মেতে উঠল।” কোচ ইগর স্তিমাচ বলেন, “মাঠে আমরা জয়ের ইচ্ছাশক্তি দেখাতে পেরেছি। সকলে খুব ভাল খেলেছে। মাঠে নিজেদের চরিত্র বুঝিয়েছে।”
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।