CFL 2023

রোনাল্ডোই অনুপ্রেরণা, আগামী দিনে ইস্টবেঙ্গলে খেলতে চান সাইড ভলিতে গোল করা সৈকত

কলকাতা লিগের অখ্যাত এক খেলোয়াড় রাতারাতি উঠে এসেছেন আলোচনায়। সাইড ভলিতে এরিয়ানের সৈকত সরকারের করা গোল সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেই সৈকত কথা বললেন আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে।

Advertisement

অভীক রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৩ ১৮:৩৯
Share:

সৈকত সরকার। ছবি: ফেসবুক।

বৃহস্পতিবার দুপুরে যখন তাঁকে প্রথম বার ফোনে ধরা হল, তিনি তখন বাসে। আশপাশে প্রচুর গাড়ির শব্দ। নিজেই অনুরোধ করলেন পরে ফোন করার। অনুশীলনে যেতে দেরি হয়ে যাচ্ছিল। অবশেষে বিকেলের দিকে কিছুটা সময় ফাঁকা থাকায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা গেল। এরিয়ানের হয়ে কলকাতা লিগে সাইড ভলিতে সৈকত সরকারের করা গোলের ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ভাইরাল। কিন্তু জীবন এতটুকু বদলায়নি সৈকতের। দুর্দান্ত গোল করার পরের দিনও তিনি কল্যাণী থেকে ট্রেন ধরে শিয়ালদহে এসেছেন। সেখান থেকে বাস ধরে এরিয়ান তাঁবু। ফেরার পথেও একই যাত্রা। অনুশীলন হোক বা ম্যাচ, রোজনামচা বদলায় না সৈকতের।

Advertisement

কলকাতা লিগে ক্যালকাটা কাস্টমসের বিরুদ্ধে সৈকতের গোলের ভিডিয়ো ম্যাচের পর থেকেই ঘুরছে সমাজমাধ্যমে। অনেকেই তাঁর গোলের প্রশংসা করে বলছেন, ‘‘কলকাতা লিগেও তা হলে এমন গোল হয়।’’ আইএফএ সেই ভিডিয়ো বর্ষসেরা গোলের পুরস্কারের জন্যে পাঠিয়ে দিয়েছে ফিফাতে (বিশ্ব ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা)। ভারতীয় ফুটবলের তরফেও টুইটারে সেই গোলের ভিডিয়ো পোস্ট করা হয়েছে।

একটা গোল রাতারাতি যে তাঁকে প্রচারের আলোয় এনে দেবে তা ভাবতেও পারেননি সৈকত। এরিয়ানের হয়ে আগের একটি ম্যাচে হ্যাটট্রিক করলেও এ ভাবে শিরোনামে আসেননি, যে খ্যাতি তাঁকে এনে দিয়েছে কাস্টমসের বিরুদ্ধে করা গোল। সৈকত আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, “খুবই ভাল লাগছে। এ ধরনের গোল তো রোজ রোজ হয় না। তা ছাড়া এ ধরনের ম্যাচ হয়তো খুব বেশি লোকে দেখেও না। তার মধ্যেই আমার গোল নজর কেড়ে নেওয়ায় বেশ ভাল লাগছে।” গলার স্বরেও শান্ত ভাব, নেই বাড়তি উচ্ছ্বাস।

Advertisement

সৈকত জানিয়েছেন, রাতারাতি হঠাৎ করে এই গোল করে ফেলেছেন এমনটা মোটেই নয়। সাইড ভলি বা ব্যাক ভলিতে গোল করার জন্যে নিয়মিত অনুশীলন করেন তিনি। অনুপ্রাণিত হয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে দেখে। ২০১৮ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জুভেন্টাসের বিরুদ্ধে করা রোনাল্ডোর ব্যাক ভলিতে সেই গোল এখনও চোখে লেগে রয়েছে সৈকতের। প্রিয় তারকাকে দেখেই নিয়মিত অনুশীলন করেন ব্যাক ভলি।

অতীতে কলকাতার ময়দানে সাইড ভলিতে প্রচুর গোল করেছেন শ্যাম থাপা। জানেন যে কতটা কঠিন এ ধরনের গোল করা। তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, “ও রকম গোল করা সত্যিই খুব কঠিন কাজ। পায়ের এবং বলের সংযোগ সঠিক ভাবে না হলে বল গোলে যাবেই না। তার উপর সঠিক সময়ে লাফ মারতে না পারলে কোনওটাই হবে না। সৈকতের গোলটা আমি দেখেছি। সত্যিকারের ভাল গোল। অনেক পরিশ্রম করতে হয় ও রকম গোল করতে গেলে।”

১৪ বছর থেকে ফুটবল খেলা শুরু করেন সৈকত। বালি প্রতিভায় যোগ দিয়ে উঠে আসা শুরু। প্রথম ডিভিশন খেলেন ১৭ বছর বয়সে। এর পরে খিদিরপুরে যোগ দেন। সেখান থেকে রেনবো ঘুরে আবার আইএফএ শিল্ড খেলার জন্যে ফেরেন খিদিরপুরে। সেখানে থাকাকালীনই হঠাৎ ২০২০-২১ মরসুমে রিয়াল কাশ্মীরে খেলার সুযোগ চলে আসে। তখন শ্রীনগরের ক্লাবটির হয়ে খেলতেন বাংলার সুমন দত্ত। তিনিই সৈকতকে সুযোগ করে দেন। তবে সেখানে খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। বেশি করে ম্যাচ খেলার জন্যে কলকাতায় ফেরেন। গত মে মাসে যোগ দিয়েছেন এরিয়ানে। কলকাতা লিগে ইতিমধ্যেই একটি হ্যাটট্রিক রয়েছে। এ বার সাইড ভলিতে দর্শনীয় গোলও হয়ে গিয়েছে।

কল্যাণীর কাঁঠালতলায় বাড়ি সৈকতের। বাবা মালির কাজ করেন। স্থানীয় একটি নার্সারির সঙ্গে যুক্ত। মা গৃহবধূ। ফলে আলাদা করে বলে দিতে হয় না সংসারের অবস্থার কথা। দরিদ্র পরিবার থেকেই উঠে এসেছেন সৈকত। ফুটবল খেলার মাধ্যমেই সামান্য রোজগার। এরিয়ানের এই ফুটবলারের আশা, তাঁর করা সাইড ভলি হয়তো আগামী দিনে ভাল কোনও ক্লাবে খেলার সুযোগ এনে দেবে। বলেছেন, “নির্দিষ্ট কোনও ক্লাবে সই করব, এমন কোনও স্বপ্ন নেই। আপাতত সঠিক মঞ্চটা পাওয়ার অপেক্ষা রয়েছি। যদি আই লিগ বা আইএসএলের কোনও ক্লাবে খেলার প্রস্তাব আসে তা হলে খুবই ভাল হয়।”

কলকাতায় তিন প্রধান রয়েছে। সেখানে খেলার ইচ্ছে নেই? বলতেই সৈকতের মুখে হাসি। বললেন, “এখানকার যে কোনও ফুটবলারেরই স্বপ্ন থাকে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান বা মহমেডানে খেলা। আমিও সে রকম চাই। তবে ইস্টবেঙ্গলকে একটু বেশি পছন্দ করি। ওখানে খেলার সুযোগ পেলে খুবই খুশি হব।”

রোনাল্ডোর ব্যাক ভলি দেখে অনুপ্রাণিত হওয়াই শুধু নয়, সৈকতের প্রিয় ফুটবলারও পর্তুগিজ তারকাই। নিয়মিত বিদেশি ফুটবল দেখেন। রোনাল্ডোর খেলা থাকলে তো ছাড়েননই না। তবে ভারতের ফুটবলও বাদ দেন না। সুনীল ছেত্রীকে তাঁর খুবই পছন্দ। স্বাভাবিক ভাবেই ভারতীয় ফুটবল দলের জার্সি গায়ে চাপানোও স্বপ্ন।

তবে এখনই অত দূর ভাবতে চান না সৈকত। আপাতত কলকাতা লিগে আরও বেশি গোল করে বড় কোনও ক্লাবে খেলা লক্ষ্য। তাতে নিজের স্বপ্ন তো পূরণ হবেই, লাঘব হবে বাবা-মায়ের কষ্টও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement