AIFF

AIFF: দলবদলের টাকা কেন এজেন্সিকে, অনুসন্ধানে সিওএ

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের মতো সুপ্রিম কোর্ট  ফুটবল ফেডারেশনের কার্যভার দেখাশোনার জন্য কমিটি অব অ্যাডিমিনিস্ট্রেটর্স (সিওএ) নিয়োগ করেছে।

Advertisement

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২২ ০৭:৫৪
Share:

বিতর্ক: রহিম আলিদের সঙ্গে ক্লাবগুলির চুক্তি নিয়েও প্রশ্ন। ফাইল চিত্র

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের পরে সুপ্রিম কোর্টের নেতৃত্বে এ বার ফুটবলেও নানা কেলেঙ্কারি বেরিয়ে পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

Advertisement

সুনীল ছেত্রীদের জন্য জ্যোতিষী ভাড়া করাতেই শেষ নয়। আরও বড় কেলেঙ্কারি ফাঁস হতে পারে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকে নিয়ে। তাতে এমনকি, আর্থিক লেনদেন নিয়েও চাঞ্চল্যকর সব তথ্য ফাঁস হতে পারে। একের পর এক বিতর্কের ঢাকনা উপুড় হতে পারে দেশের ফুটবল পরিচালনা নিয়েও।

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের মতো সুপ্রিম কোর্ট ফুটবল ফেডারেশনের কার্যভার দেখাশোনার জন্য কমিটি অব অ্যাডিমিনিস্ট্রেটর্স (সিওএ) নিয়োগ করেছে। সেই কমিটি গত কয়েক বছর ধরে সর্বভারতীয় ফুটবল সংস্থার আর্থিক লেনদেনের হিসাবনিকাশ করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য খুঁজে পাচ্ছে। সত্যিই যেন কেঁচো খুড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে পড়ছে। যেমন সিওএ-র অনুসন্ধানে জ্যোতিষীর মতোই উঠে এসেছে রহস্যময় এক এজেন্সির উপস্থিতি। আনন্দবাজারের হাতে আসা তথ্য অনুযায়ী, সিওএ খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে, গুজরাতের এই এজেন্সি কয়েক বছর ধরেই ফেডারেশনের ভ্রমণ-সহ অন্যান্য অনেক বিষয় দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছে। তার জন্য নিয়মিত ভাবে কমিশনও পাচ্ছে সেই এজেন্সি।

Advertisement

দেখা যাচ্ছে, হোটেল বুকিং থেকে শুরু করে খেলোয়াড়দের ডিএ— সব ব্যাপারেই তারা যুক্ত এবং কমিশনের বরাত পেয়ে এসেছে। অথচ ফেডারেশনের নিজস্ব ‘লজিস্টিক টিম’ অর্থাৎ, ভ্রমণ-সূচি দেখাশোনা করার জন্য আভ্যন্তরীণ দল রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে বাইরের এজেন্সিকে ভাড়া করতে হয়েছে কেন? এ নিয়ে ফেডারেশন কর্তাদের প্রশ্ন করছেন সিওএ কর্তারা। জানার চেষ্টা হচ্ছে, এই এজেন্সির ভূমিকা ঠিক কী রকম ছিল? এমন কী কাজ করতে হচ্ছিল যা নিজেদের ‘লজিস্টিক টিম’ করতে পারছিল না!

এখানেই শেষ নয়। আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে এসেছে সিওএ কর্তাদের কাছে খেলোয়াড়দের দলবদল নিয়ে। ইন্ডিয়ান অ্যারোজ়ের খেলোয়াড়দের দায়িত্ব যেমন ফুটবল ফেডারেশনের হাতে। আইএসএলের কোনও দল যদি অ্যারোজ়ের কোনও খেলোয়াড়কে নিতে চায়, ফেডারেশনের মাধ্যমে চুক্তি চূড়ান্ত করতে হয়। এ ক্ষেত্রে চালু প্রথা হচ্ছে, কোনও আইএসএল ক্লাবের যদি ইন্ডিয়ান অ্যারোজ়ের কোনও খেলোয়াড়কে পছন্দ হয়, তা হলে এআইএফএফ অর্থাৎ সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের মাধ্যমে কথাবার্তা এগোতে হবে। ধরা যাক, পছন্দ হওয়া খেলোয়াড়ের মূল্য ঠিক হল ৪০ লক্ষ। এই টাকার একটা নির্দিষ্ট কমিশন ফেডারেশনকে দিতে হয় সেই আইএসএল ক্লাবকে। এই প্রথা নিয়ে কেউ আপত্তি তুলছে না।

প্রশ্ন দেখা দিয়েছে অন্য জায়গায়। সিওএ ইমেল ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে দেখেছে, এই সব চুক্তির ক্ষেত্রেও জড়িয়ে গিয়েছে গুজরাতের সেই রহস্যজনক এজেন্সি। সিওএ-র অনুসন্ধানে ধরা পড়েছে, কোনও খেলোয়াড়ের সঙ্গে আইএসএল দলের চুক্তি সম্পন্ন হয়ে গেলেই এজেন্সির পক্ষ থেকে ইমেল করা হত ফেডারশনের কাছে। তাতে তারা দাবি করত, এই চুক্তির ব্যাপারে তারা সাহায্য করেছে, তাই প্রতিশ্রুতি মতো ফেডারেশনের উচিত তাদের প্রাপ্য কমিশন দিয়ে দেওয়া। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এজেন্সির দাবি অনুযায়ী, ফেডারেশন সেই কমিশন দিয়ে দিয়েছে বলেই খবর। এই লেনদেন দেখে সিওএ কর্তাদের সন্দেহ আরও বেড়েছে যে, এর মধ্যে কোনও আর্থিক অসঙ্গতি নেই তো? আইএসএল দলে খেলোয়াড়ের ট্রান্সফারের ব্যাপারে এজেন্সির কী ভূমিকা থাকতে পারে? তাদের কেন টাকা দেবে ফেডারেশন? ট্র্যাভেল থেকে শুরু করে খেলোয়াড়দের ডিএ, ট্রান্সফার— কত কিছু দেখছে একটা এজেন্সি? নানা রকম প্রশ্নের ফাঁস জোরালো হচ্ছে।

গত কয়েক বছরে বেশ কয়েক জন ফুটবলারকে ইন্ডিয়ান অ্যারোজ় থেকে নিয়েছে আইএসএলের বিভিন্ন ক্লাব। যেমন প্রভসুখন গিল (যোগ দিয়েছেন বেঙ্গালুরু এফসি-তে), দীপক টাংরি (গিয়েছিলেন চেন্নাইয়িন এফসি-তে), অভিজিৎ সরকার (চেন্নাইয়িন এফসি-তে), জ্যাকসন সিংহ (কেরল ব্লাস্টার্সে), অনিকেত যাদব (হায়দরাবাদ এফসি-তে), রহিম আলি (চেন্নাইয়িন এফসি-তে), আকাশ মিশ্র (হায়দরাবাদ এফসি-তে), বিক্রম প্রতাপ সিংহ (মুম্বই সিটি এফসি-তে)। কারও চুক্তি হয়েছে ৩০ লক্ষে, কারও ৪০ লক্ষে, আবার কারও বা দর উঠেছে ৫০ লক্ষ পর্যন্ত। সব ক’টি ক্ষেত্রেই যদি ওই এজেন্সিকে কমিশন দেওয়া হয়ে থাকে, তা হলে টাকার পরিমাণ বেশ ভালই হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

জ্যোতিষী নিয়োগ নিয়ে ইতিমধ্যেই ফেডারেশনের সাধারণ সচিব কুশল দাসকে প্রশ্ন করেছে সিওএ। তিনি ‘মেডিক্যাল লিভ’ নিয়ে দায়িত্বে আপাতত অব্যাহতি দিয়ে ছুটিতে চলে গিয়েছেন। যদিও ফুটবল মহলে শনিবার জোরালো গুঞ্জন শোনা গেল যে, তিনি পদত্যাগই করতে পারেন আগামী কয়েক দিনের মধ্যে। শোনা গেল, ডেপুটি জেনারেল সেক্রেটারি এবং টিম ডিরেক্টর অভিষেক যাদবকেও প্রশ্ন করতে পারেন সিওএ কর্তারা। এজেন্সি যে ইমেল পাঠিয়ে কমিশন দাবি করত, সেগুলির প্রেরক কারা ছিলেন, সেটাই এখন খুঁজে দেখছে সিওএ।

আরও সন্দেহ তৈরি হয়েছে যে, ওই এজেন্সি আয়কর তথ্যেও অসঙ্গতি রয়েছে কি না? প্যান কার্ড-সহ ফেডারেশনকে দেওয়া সমস্ত তথ্য খতিয়ে দেখছেন সিওএ কর্তারা। তাঁদের কানে আরও একটি বিস্ফোরক তথ্য পৌঁছেছে যে, জাতীয় দলের কোচ ইগর স্তিমাচের চুক্তি ব্যাপারেও সাম্প্রতিক কালে কিছু ভূমিকা ছিল ওই এজেন্সির। সেই তথ্যের কোনও ভিত্তি আছে কি না, সিওএ কর্তারা তা খতিয়ে দেখছেন। সব মিলিয়ে ক্রিকেটের বাইশ গজ থেকে নাটকের মঞ্চ এখন ফুটবলেরপেনাল্টি বক্সের সামনে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement