ফাইল চিত্র।
এএফসি এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে ‘ডি’ গ্রুপের খেলা শুরু হওয়ার আগে ভারতের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হচ্ছিল আফগানিস্তানকে। কিন্তু টানা দু’টি ম্যাচ জিতে পয়েন্ট টেবলের শীর্ষ স্থান দখল করে হংকং যে পুরো চিত্রটাই বদলে দেবে, অনেকেই ভাবতে পারেননি। আজ, মঙ্গলবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে সেই হংকংকে হারিয়ে গ্রুপ সেরা হয়ে এশিয়ান কাপের মূল পর্বে যোগ্যতা অর্জনের পরীক্ষা সুনীল ছেত্রীদের সামনে।
ভারত বনাম হংকং ম্যাচকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে উন্মাদনা তুঙ্গে ফুটবলপ্রেমীদের। সোমবার সকাল থেকেই ময়দানে তিন প্রধানের তাঁবুতে টিকিট সংগ্রহের জন্য ভিড় করেছিলেন তাঁরা। সন্ধ্যায় যুবভারতীতেও অনুশীলন দেখতে হাজির হন কেউ কেউ। এক খুদে ভক্তের সঙ্গে ছবিও তোলেন সুনীল। জাতীয় দলের আপার উপহার দেন লিস্টন কোলাসো। কিন্তু দ্বৈরথের চব্বিশ ঘণ্টা আগে ভারতীয় শিবিরে উদ্বেগ বাড়ল সন্দেশ জিঙ্ঘন ও উদান্ত সিংহকে নিয়ে। ভারতীয় দলের রক্ষণের অন্যতম ভরসার পায়ের মাংসপেশিতে চোট থাকায় সোমবার সন্ধ্যায় ঠিক মতো অনুশীলনই করতে পারেননি। দৌড় শুরু করার পরেই পেশিতে ব্যথা অনুভব করেন। এর পরে ফিজ়িক্যাল ট্রেনারের সঙ্গে মাঠে শুধু হাঁটেন তিনি। উদান্তের চোট হ্যামস্ট্রিংয়ে। যদিও তিনি অনুশীলন করেছেন। ভারতীয় শিবির অবশ্য আশাবাদী দুই তারকাই ম্যাচের আগে সুস্থ হয়ে উঠবেন।
উদান্তর পরিবর্ত নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নন কোচ ইগর স্তিমাচ। কিন্তু সন্দেশের বিকল্প খুঁজতে গিয়েই চিন্তা বাড়ছে ভারতীয় দলের কোচের। কে আটকাবে দুর্দান্ত ছন্দে থাকা হংকংয়ের আক্রমণভাগের সেরা অস্ত্র ছয় ফিট দুই ইঞ্চি উচ্চতার ম্যাথিউ ওরকে? আগের দুটি ম্যাচেই গোল করেছেন তিনি। ম্যাথিউকে আটকাতে সন্দেশই যে প্রধান ভরসা ভারতীয় দলের কোচের। সুনীল ছেত্রী-হীন ভারতীয় দলের আক্রমণভাগ যেমন কল্পনার অতীত, তেমনই রক্ষণে সন্দেশ অপরিহার্য। বিশেষ করে, প্রতিপক্ষ যখন হংকংয়ের মতো আক্রমণাত্মক দল। যাদের বিরুদ্ধে শেষ দুই সাক্ষাতে হেরে গিয়েছিল ভারত।
হংকংয়ের কোচ আর্লিং হালান্ডের দেশের ইয়র্ন অ্যান্ডারসেনের অস্ত্র আক্রমণাত্মক ফুটবল। আফগানিস্তান ও কাম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে শুরু থেকেই আক্রমণের ঝড় তুলেছিলেন ম্যাথিউরা। সোমবার দুপুরে যুবভারতীতে সংবাদিক বৈঠকে তিনি বললেন, ‘‘খুব বেশি প্রত্যাশা নিয়ে আমরা কলকাতায় আসিনি। কিন্তু পরপর দু’টি জয়ের পরে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে। এই ম্যাচটা আমাদেরকাছে ফাইনাল।’’
ভারতের বিরুদ্ধে রণকৌশলে কী কোনও পরিবর্তন করবেন? হংকংয়ের কোচ বললেন, ‘‘অবশ্যই। ভারতের খেলা আমরা বিশ্লেষণ করেছি। এই গ্রুপের অন্যতম শক্তিশালী দল। ফিফা ক্রমতালিকাতেও ভারত আমাদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। ফুটবলারদের সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনাও করেছি।’’ অ্যান্ডারসনের প্রধান চিন্তা যে সুনীলকে নিয়েই, তা গোপন করেননি। বললেন, ‘‘ভারতের ১১ নম্বর (সুনীল) অসাধারণ। আমরা সকলেই জানি এবং দেখেছি। তবে ভারতীয় দলে একাধিক ভাল ফুটবলার রয়েছে। আমি পুরো দলটাকে নিয়েই ভাবছি।’’
দু’টি ম্যাচে জিতে ছয় পয়েন্ট নিয়ে এই মুহূর্তে ‘ডি’ গ্রুপের শীর্ষে রয়েছে হংকং। সমসংখ্যক ম্যাচ খেলে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভারতের সংগ্রহেও ছয় পয়েন্ট। মঙ্গলবার জিতলেই সরাসরি এশিয়ান কাপের মূল পর্বে পৌঁছে যাবেন সুনীলরা। তবে ড্র করলে বা হারলেও আশা বেঁচে থাকবে ভারতের। কারণ, ড্র হলে দু’দলই সাত পয়েন্ট নিয়ে শেষ করবে। সেক্ষেত্রে গোল পার্থক্যে হংকং (+৪) ভারতকে (+৩) পিছনে ফেলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে মূল পর্বে উঠবে। সুনীলরা হেরে গেলে শেষ করবেন ছয় পয়েন্ট নিয়ে। তাতেও অবশ্য উদ্বিগ্ন হওয়ার খুব একটা কারণ নেই ফুটবলপ্রেমীদের। কারণ, ছ’টি গ্রুপের চ্যাম্পিয়নরা সরাসরি মূল পর্বে চলে যাবে। দ্বিতীয় স্থানে শেষ করা দলগুলির মধ্যে থেকে সেরা পাঁচটি দেশ ছাড়পত্র পাবে। এই তালিকায় ভারত উপরের দিকেই রয়েছে। হংকংয়ের কোচ অবশ্য মনে করছেন, তাঁদের সঙ্গে ভারতেরও মূল পর্বে খেলা নিশ্চিত। বলছিলেন, ‘‘আমার মতে ভারত ও হংকং ইতিমধ্যেই মূল পর্বে যোগ্যতা অর্জন করে ফেলেছে। তাই আমাদের এই ম্যাচে এক পয়েন্ট পেলেও চলবে। কিন্তু আমরা জেতা ছাড়া কিছুই ভাবছি না।’’ এর পরেই যোগ করলেন, ‘‘এই ম্যাচে ভারতের সবচেয়ে বড় সুবিধে ওরা নিজেদের দর্শকদের সামনে খেলবে। তবে আমাদের ফুটবলাররা সকলেই অভিজ্ঞ। খুব একটা সমস্যা হবে বলে মনে হয় না।’’
যুবভারতীর গর্জন কিন্তু অনেক হিসেবেই বদলে দিতে পারে। মঙ্গলবার যুবভারতীতে এএফসি এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্ব: আফগানিস্তান বনাম কাম্বোডিয়া (বিকেল, ৫.০০), ভারত বনাম হংকং (রাত, ৮.৩০)। দুটি ম্যাচেরই সরাসরি সম্প্রচার স্টার স্পোর্টস থ্রি চ্যানেলে।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।