উচ্ছ্বাস: গ্যালারিতে চেলসির ম্যাচ দেখছেন টড বোলি। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন ধনকুবের টড বোলির সংস্থা রেকর্ড অর্থ ৪.২৫ বিলিয়ন পাউন্ডে (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪০ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা) চেলসি কিনে নেওয়ার পর থেকেই ইংল্যান্ডের ক্লাবের ভবিষ্যৎ নিয়ে চর্চা তুঙ্গে। টমাস টুহলের দলের নতুন মালিক জানিয়েছেন ১.৭৫ বিলিয়ন পাউন্ড (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় টাকা ১৬ হাজার ৬১৭ কোটি) তিনি বিনিয়োগ করবেন ভবিষ্যতে। শুধু তাই নয়। প্রাক্তন মালিক রোমান আব্রামোভিচের যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ‘ফ্রিজ়’ করে রেখেছে ব্রিটিশ সরকার, তাও ক্লাবের উন্নতিতে ব্যবহার করবেন।
ইউক্রেনের উপরে রাশিয়া হামলা করার পরেই চেলসির ডিরেক্টর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় আব্রামোভিচকে। তার সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে নেয় ব্রিটিশ সরকার। ‘ফ্রিজ়’ করে দেয় চেলসির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও। অভিযোগ, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে আব্রামোভিচের। এই কারণে ইংল্যান্ডে নিষিদ্ধ করা হয় রুশ ধনকুবেরকে। তবে ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছিল, কর্মীদের বেতন দেওয়া এবং স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে ম্যাচ আয়োজনের জন্য অর্থ ব্যয় করতে পারবে চেলসি। পাশাপাশি ব্রিটিশ সরকার চেলসি বিক্রির দায়িত্ব দেয় একটি সংস্থাকে। একাধিক ধনকুবের-সহ সেরিনা উইলিয়ামস, লুইস হ্যামিল্টনের মতো ক্রীড়াবিদও দরপত্র জমা দিয়েছিলেন। সকলকে পিছনে ফেলে চেলসি কিনে নেন টড।
চেলসির নতুন মালিকের এনবিএতে লস অ্যাঞ্জেলেস ডজার্স, লস অ্যাঞ্জেলেস লেকার্স, স্পার্কের মতো দলেও বিনিয়োগ রয়েছেন। শনিবার ইংল্যান্ডের ক্লাবের পক্ষ থেকে তাদের নতুন মালিকের নাম ঘোষণা করে জানানো হয়, টডের নেতৃত্বে থাকা ‘কনসোর্টিয়াম’ চেলসির অধিকাংশ শেয়ারই কিনেছে। এর বাইরেও নতুন মালিকের সংস্থা বিনিয়োগ করবে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজ স্টেডিয়াম, ক্লাবের অ্যাকাডেমি, মেয়েদের দলেও। একই সঙ্গে চেলসি ফাউন্ডেশনে নিয়মিত অর্থ দান করবেন। দলকে সাফল্যের শিখরে তুলে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি স্টেডিয়াম-সহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও উন্নতি করতে টড উদ্যোগ নেন। চেলসি আরও জানিয়েছে, টডের নেতৃত্বে থাকা গ্রুপে আছেন বেশ কয়েক জন ধনকুবের বা ব্যবসায়ী গোষ্ঠী— ক্লিয়ারলেক ক্যাপিটাল, মার্ক ওয়াল্টার ও হানসোয়ার্জ উইজ়। চেলসি বিক্রির লভ্যাংশের পুরোটাই দাতব্য সংস্থাকে দান করার প্রতিশ্রুতিও আগেই দিয়েছিলেন আব্রামোভিচ।
২০০৩ সালে চেলসি কেনেন আব্রামোভিচ। তাঁর আমলে পাঁচ বার ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, দু’বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ-সহ ১৯টি ট্রফি জেতে ইংল্যান্ডের এই ক্লাব। ২০১৮ সালে নতুন ভাবে চেলসিকে গড়ে তোলার জন্য এক বিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় করার পরিকল্পনা করেছিলেন। সেই সময় রুশ ধনকুবের ভিসা নিয়ে বিতর্কেও জড়িয়েছিলেন। চেলসির স্টেডিয়াম স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে ৪২ হাজার দর্শক খেলা দেখতে পারেন। যা ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড, ম্যাঞ্চেস্টার সিটি, আর্সেনাল ও টটেনহ্যাম হটস্পারের স্টেডিয়ামের তুলনায় অনেক কম। বছর তিনেক আগেই টটেনহ্যাম এক বিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় করে লন্ডনে স্পোর্টিং হাব বানিয়েছে। ফুটবলের পাশাপাশি, বক্সিং ও রাগবিও খেলা হয় সেখানে। এই কারণেই স্টেডিয়ামের দর্শকাসন বৃদ্ধি করতে মরিয়া ছিলেন আব্রামোভিচ। রুশ ধনকুবের বরবারই শক্তিশালী দল গড়তে কখনও কার্পণ্য করেননি। গত মরসুমে ম্যান সিটিকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতেন
টিমো ওয়ের্নাররা।
ইউক্রেনের উপরে রাশিয়ার হামলার পর থেকেই বদলে যায় সম্পূর্ণ পরিস্থিতি। আন্তোনিয়ো রুডিগারের আগামী মরসুমে রিয়াল মাদ্রিদে যাওয়া পাকা। দল ছাড়ছেন আন্দ্রেয়াস ক্রিস্টেনসেন। চেলসির নতুন মালিকের পরীক্ষা এই মুহূর্তে ফুটবলারদের ধরে রাখা। দলকে শক্তিশালী করে তুলতে নতুন ফুটবলার সই করানো।